আম্মু ডাকতে ইচ্ছে হয় না

অধ্যাপক মেহতাব খানম
অধ্যাপক মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমার পরীক্ষা শুরুর ১৫ দিন আগে আমি আম্মুকে সম্পর্কে জড়াতে করতে দেখি। আমি যে এ বিষয় জানি, তা মা জানে না। আমি তাকে ও তার কোনো কথা সহ্য করতে পারি না। তাকে আম্মু ডাকতে ইচ্ছে হয় না। তার সঙ্গে আমার সব সময় ঝগড়া হয়। এখন সে আব্বুর সঙ্গেও সব সময় ঝগড়া করে। আমার চোখের সামনে সব সময় ওই ঘৃণ্য দৃশ্য ভেসে ওঠে। এমন মানসিক অবস্থার মধ্যে আমি পরীক্ষা দিচ্ছি। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এখন পড়াশোনা করতে ইচ্ছে হয় না। আমার একমাত্র বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বোনের কথা ভেবে আব্বুকে কিছু বলছি না। মাঝেমধ্যে বাসা থেকে চলে যেতে ইচ্ছা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ
কষ্টগুলো মনের ভেতরে চেপে রাখলে তোমার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। মনে সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করো। মাকে বলার চেষ্টা করো তাঁর এই আচরণ তোমাকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে। তুমি যেহেতু এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছ, মাও হয়তো তোমাকে বলতে পারেন যে কী কারণে তিনি অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অনেক মেয়ে প্রথম থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও প্রশংসা পান না। কিন্তু সামাজিক কারণে তাঁদের আবার বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন তাঁরা নানা রকম অতৃপ্তি ও অশান্তিতে ভোগেন। কখনো অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যান।
মাকে এ ব্যাপারে কোনো দোষারোপ না করে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে পারো। কাজটি করা তোমার জন্য হয়তো খুব কঠিন হবে। কারণ, মায়ের প্রতি অনেক বেশি বিদ্বেষ তোমার মনে তৈরি হয়েছে। সরাসরি কথা বলা সম্ভব না হলে তুমি তাঁকে একটি চিঠি লেখো। মন খুলে নিজের বর্তমান আবেগপ্রবণ অবস্থা তাঁকে লেখো। তুমি দেখবে, এতে করে মনের ভার অনেকটা লাঘব হবে। বাবাকে বলতে গেলে পরিস্থিতি হয়তো আরও ঘোলাটে হবে। তখন এ বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব হবে, সেটি তোমাদের ওপর বড় ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করবে।
‘তোমার মা’ যে একই সঙ্গে একটি আলাদা মানুষ সেটিও মাথায় রাখতে পারলে ভালো হয়। তাঁর আচরণের কারণে তুমি তোমার লক্ষ্য থেকে সরে যেয়ো না। আশা করছি, নিজের চেষ্টা ও মেধার সহায়তায় তুমি তোমার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।