
‘মা আজ সন্ধ্যায় আমার ফিরতে একটু দেরি হবে। রেজাদের বাসায় যাচ্ছি। জন্মদিনের পার্টি আছে।’
ফোনের ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে মায়ের জবাব, ‘এক মাস আগেই না রেজার জন্মদিনে গেলি। মিথ্যা বলছিস কেন?’
‘ওহ মা, তোমাকে কি বলেছি রেজার জন্মদিন। আজ তো রেজার মায়ের জন্মদিন।’ ফারহানের কথা শুনে চুপ করে গেলেন মা।
ফারহান–রেজাদের মতো আজকাল অনেক তরুণকেই দেখা যায় বন্ধুর মা-বাবার জন্মদিন ঘটা করে আয়োজন করতে। ফারহানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নানা কারণে রেজাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় ফারহান, সোহেল ও সাব্বিরকে। কারণ, ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন বা ছুটির দিনের আড্ডা যে রেজার বাড়িতেই বেশি হয়। এই আসা-যাওয়ার ফাঁকে রেজার মায়ের হাতের নানা ধরনের খাবার খান তাঁরা। এ ছাড়া অনেক সময় আড্ডাতে যোগ দেন রেজার মা। এভাবেই রেজার মা হয়ে ওঠেন তাঁদের ‘প্রিয় আন্টি’। শুধু জন্মদিনের পার্টিতে অংশ গ্রহণ করা না, তাঁকে একদিন আনন্দ দিতে কত পরিকল্পনাই না করেন তাঁরা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী শায়লার কাছে পাওয়া গেল তেমন আরেকটি তথ্য। শায়লা বলেন, ‘১৩ অক্টোবর ছিল আমাদের বন্ধু তানহার মা-বাবা বিবাহবার্ষিকী। আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম তাঁদের জন্য ঘর সাজাব। পরিকল্পনামতো সব বন্ধু মিলে বিকেলে চলে গেলাম তানহাদের বাসায়। এই সময়ে তানহার বাবা-মা দুজনেই অফিসে ছিলেন। আমরা নানা ধরনের ফুল আর রঙিন কাগজ দিয়ে সাজালাম তাঁদের ঘরটি। এরপর সন্ধ্যায় তাঁরা বাসায় ফিরে চমকে গিয়েছিলেন।’
অনেকে আবার বন্ধুর মা-বাবার জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীতে নিজ হাতে খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন। কেউ কেউ বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দলেবলে রান্না করেন নানা ধরনের খাবার। মা-বাবারাও কম যান না। সন্তানের বন্ধুদের দেন নানা ধরনের উপহার। ভালোবাসেন নিজের সন্তানের মতোই। তানহার বাবা তারিকুল সরদার বলেন, ‘মেয়ের বন্ধুরা তো আমাদের সন্তানের মতোই। তারা আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে এত সুন্দর আয়োজন করেছে যে খুব ভালো লেগেছে। তাই পরে একদিন তাদের বাসায় ডেকে আমি আর তানহার মা সবাইকে একটা করে উপহার দিয়েছি।’
বন্ধুর মা-বাবা তো নিজের মা-বাবার মতোই। বন্ধুরা যেমন আপনার ভালো লাগার জন্য আপনার মা-বাবাকে চমকে দিচ্ছেন বিশেষ দিনে; সামান্য একটু আয়োজন যদি বন্ধু ও বন্ধুর মা-বাবাকে আনন্দ দিতে পারে, তাহলে ক্ষতি কী!