আরডুইনো নিয়ে আয়োজন

ছোটবেলায় ইলেকট্রনিকস খেলনা ভেঙে গেলে সবুজ পাতের মতো একটা ‘বস্তু’ বের হয়ে আসতে আমরা অনেকেই দেখেছি! সেই পাতটাই যে ইলেকট্রনিক খেলনাটির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা তখন কে বুঝত। হ্যাঁ, এই সবুজ রঙের পাতের ওপর মাইক্রোকন্ট্রোলার (কোডনিয়ন্ত্রিত সার্কিট) বসিয়ে খেলনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই বস্তুটির আরেক নাম-আরডুইনো।
আরডুইনো কী? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সোসাইটির রকি সরকার জানালেন, ‘আরডুইনো হচ্ছে একটা ওপেন সোর্স ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম, যেটা আমাদের হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যার নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার সুবিধা করে দিয়েছে।’ বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কানেকশন ঠিক করি, কোড লিখি। ল্যাঙ্গুয়েজের বড় বড় জটিল কোডকে সহজেই সি বা সি প্লাস প্লাস দিয়ে লিখছি। সেগুলো সহজে আরডুইনোতে লোডার দিয়ে লোড করা যাচ্ছে। ফলাফল যেভাবে চাইছি, মনের মতো করে রোবট চালাতে পারছি।’ শুধু রোবটের ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো ধরনের হার্ডওয়্যার বা ইলেকট্রনিক সামগ্রীর কাজের ক্ষেত্রে আগ্রহী বা অভিজ্ঞ সবার জন্যই এক উপকারী বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আরডুইনো।
মজার ব্যাপার হলো, রহস্যময়ী সংখ্যা ‘পাই’কে নিয়ে যেমন গোটা দুনিয়া ‘পাই দিবস’ পালন করে, আরডুইনো নিয়েও একটি ‘আরডুইনো দিবস’ আছে। ১ এপ্রিল। এ বছর পয়লা এপ্রিলে প্রথমবারের মতো বিশ্বের ৭৮টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও একযোগে পালিত হলো আরডুইনো দিবস, ২০১৭। আর এই আয়োজন হয়ে গেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাত ধরে।
কথা হচ্ছিল দিবসটি পালনের দুই স্বপ্নদ্রষ্টা রুহুল আমিন আর মুনেম শাহরিয়ারের সঙ্গে। দুজনেই পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশলে দ্বিতীয় বর্ষে। তাঁরা জানালেন, দিবসটি পালনের পেছনের কাহিনি। ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আরডুইনো আর মাইক্রোকন্ট্রোলার নিয়ে প্রচুর কাজ হয়। এমনকি বাংলাদেশেও এই আরডুইনো নিয়ে বিস্তর কাজ হচ্ছে। অথচ অনেকেই তা জানে না।’ বলছিলেন মুনেম। সঙ্গে রুহুল আমিন যোগ করলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছিলাম, কীভাবে আরডুইনোকে আরও জনপ্রিয় করা যায়? বাইরের দেশগুলোতে যারা আরডুইনো ব্যবহার করে তাদের রীতিমতো আলাদা কমিউনিটি আছে। বিশ্বব্যাপী আরডুইনোর জন্মদিন পালন করা হয় আরডুইনো ডে হিসেবে। তাহলে আমরা কেন নয়?’ অতঃপর যেই ভাবা সেই কাজ!
মুনেম বলছিলেন, ‘ইভেন্ট করার সময় বাধা অনেক ছিল। আমাদের দেশে এ রকম আরডুইনো কমিউনিটি তো নেই। খোঁজ নিয়ে জানলাম ওদের ওয়েবসাইটে একটা অ্যাপ্লিকেশন করতে হয় যেখানে কোন জায়গায় এবং কীভাবে এই অনুষ্ঠান আয়োজন হবে, সেই আইডিয়া জমা দিলে ওরা মানচিত্রে ওই জায়গায় একটা পিন দিয়ে দেয়। আর আরডুইনো ডিজিটাল কিট পাঠায়। দেরি না করে অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিলাম।’ তারপর শুরু হলো অপেক্ষা। অবশেষে মার্চ মাসের ১০ তারিখ ইতালির আরডুইনোর প্রধান কার্যালয় থেকে মেইল আসে। বিশ্বের আরও ৪৯৮টি ইভেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশে আরডুইনো ডে উদ্যাপনের অনুমতি পায়।
কিন্তু অনুমতি পেলেই তো চলবে না। ভেন্যু, প্রচারণা, লোকজনকে বোঝানো, স্পনসর জোগাড়...আরও কত কাজ। রুহুল আমিন জানালেন, ‘এরপরের ২০ দিন ধরে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছিলাম না আমরা। সবকিছু ঠিকঠাকমতো করার জন্য আমাদের সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম করল আমাদের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা। তাদের হাত ধরেই আয়োজিত হলো একটি সফল ইভেন্ট।’
কী ছিল আরডুইনো ডের ইভেন্টগুলোতে? আইসিই বিভাগের নাঈম আহমেদের সঙ্গে কথা হলো এ প্রসঙ্গে। ‘এই দিন আমরা তিনটি আলাদা আলাদা আয়োজন রেখেছিলাম। সকালে প্রজেক্ট শো, বিকেলে ওয়ার্কশপ আর তারপর সেমিনার। প্রজেক্ট শোতে যেমন রুয়েট, রাবি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাউয়েট এমনকি স্কুল-কলেজের বাচ্চারাও নিজের প্রজেক্ট নিয়ে এসেছিল। তেমনি ওয়ার্কশপেও ছিল অচেনা-অজানা আরডুইনো বা মাইক্রোকন্ট্রোলার ছুঁয়ে দেখা, চোখের সামনে ছোট্ট একটা প্রজেক্ট হাতে-কলমে শেখার মজার অভিজ্ঞতা।’