আলতামিরা গুহার দ্বার খুলছে আবার

প্রায় ১৪ থেকে ২০ হাজার বছর আগের আলতামিরা গুহাচিত্র। ছবি: উইকিপিডিয়া
প্রায় ১৪ থেকে ২০ হাজার বছর আগের আলতামিরা গুহাচিত্র। ছবি: উইকিপিডিয়া

পুরোনো প্রস্তর যুগের ‘সিস্টিন চ্যাপেল’ হিসেবে খ্যাত স্পেনের আলতামিরা গুহা আবারও দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ১৪ থেকে ২০ হাজার বছর আগের আলতামিরা গুহার লাল-কালো চিত্রমালা প্রাচীন গুহাচিত্রের অন্যতম সেরা নিদর্শন। বিপুল দর্শকের সমাগমে ঐতিহাসিক এই চিত্রমালা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রায় ১২ বছর ধরে এই গুহার দ্বার দর্শকদের জন্য বন্ধ ছিল। দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

আলতামিরা গুহাকে ইউনেসকো ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ ঘোষণার আরও আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের পরামর্শে বেশ কয়েকবার এখানে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, মানবসভ্যতা বিকাশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এই প্রাচীন গুহা দেখতে সারা দুনিয়ার গবেষক-পর্যটকদের ভিড় বরাবরই ছিল। কিন্তু কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রবল আগ্রহ সত্ত্বেও আলতামিরা গুহা ঘুরে দেখার সুযোগ পাননি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক বা মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ফিলিপ কালদেরনের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও।

১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ করে দেওয়ার আগে আলতামিরা গুহায় প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার পা রাখতেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, মানুষের শরীরের তাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং বাতাসের আর্দ্রতায় প্রায় ২০ হাজার বছরের পুরোনো এই গুহাচিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ২০০২ সালে প্রায় স্থায়ীভাবেই দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় আলতামিরা গুহা।

একটি জাদুঘরে আলতামিরা গুহাচিত্রের অনুকৃতি। ছবি: উইকিপিডিয়া
একটি জাদুঘরে আলতামিরা গুহাচিত্রের অনুকৃতি। ছবি: উইকিপিডিয়া

কিন্তু দুনিয়াবাসীকে প্রাচীন পূর্বপুরুষ ও নারীদের শিল্পসত্তার এই অমূল্য নিদর্শন দেখানোর জন্য বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলা হয় ‘আলতামিরা জাদুঘর’। মূল গুহার খুব কাছেই গড়ে তোলা এই জাদুঘর আসলে আলতামিরা গুহার একটা প্রায় সমান আকৃতির ‘অনুকৃতি’। প্রায় একই রকম বিন্যাসে সেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে গুহার দেয়াল আর ছাদে আঁকা মহিষের ছবিসহ অন্যান্য চিত্র। কিন্তু অনেক দর্শকই তৃপ্ত নন এই বিকল্প ব্যবস্থায়। মাত্র কয়েক শ ফুট দূরেই ‘আসল’ গুহাটা আছে আর তিনি একটা ‘নকল কিছু’ দেখছেন—এই অনুভূতি মেনে নিতে পারেন না অনেকেই।

এদিকে, স্পেনের ক্যান্টাব্রিয়া অঞ্চলের স্থানীয় সরকারও দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটনের বিপুল রাজস্ব হারানো নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই দফায় দফায় বিজ্ঞানী-প্রত্নতত্ত্ববিদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষজ্ঞ পরিষদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু অমূল্য এই সম্পদ রক্ষায় এককাট্টা অপর পক্ষও। অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে এ সপ্তাহ থেকেই খুব অল্পসংখ্যক ভাগ্যবান দর্শকের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আলতামিরা গুহা। দেশটির আঞ্চলিক সরকার বুধবার এ কথা জানিয়েছে।

ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখ থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত দৈব চয়ন পদ্ধতিতে বাছাই করে সপ্তাহে এক দিন কিছু ভাগ্যবান দর্শককে আসল গুহাচিত্র দেখার সুযোগ দেওয়া হবে। ‘আলতামিরা জাদুঘর’ দেখতে আসা দর্শকদের একটা লটারিতে অংশ নিতে বলা হবে এবং সেখান থেকে বাছাই হওয়া মাত্র পাঁচজন দর্শককে আসল গুহা দেখতে নিয়ে যাওয়া হবে। বাছাই করা এই দর্শকদের গুহায় ঢুকতে বিশেষ পোশাক, মুখোশ ও জুতো পরে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। একজন গাইডের সহায়তায় ৩৭ মিনিটের একটি বিশেষ পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন এভাবে বাছাইকৃতরা।

এভাবে আগামী ছয় মাসে মোট ১৯২ জন দর্শক আলতামিরা গুহা ঘুরে দেখার এই বিরল সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। আর এই সময়ে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করবেন দর্শকদের এই যাতায়াতের কারণে প্রাচীন গুহাচিত্রগুলোর ওপর কতটা প্রভাব পড়ছে। এই পর্যবেক্ষণের ফলের ওপরই নির্ভর করবে আলতামিরা গুহায় দর্শক প্রবেশের ভবিষ্যত্ কী হবে।