আহা বৃষ্টির ঘ্রাণ

অলংকরণ: স্বপন চারুশি
অলংকরণ: স্বপন চারুশি

বৃষ্টির ঘ্রাণ পাও তুমি?
আমি চমকে উঠি। সুবর্ণার কথায় কী যেন ছিল। কী রকম অর্থপূর্ণ রোমান্টিসিজম। আমি হেসে বলি, পাই না এসব। ‘ফার্স্ট ডে অব রেইন’-এর ছবি দেখেছিলাম। একটা তিন বছরের মেয়ে। জীবনের প্রথম বৃষ্টির মধ্যে নিজেকে প্রজাপতির মতো মেলে ধরে হাসছিল। সেই গল্পটা বলতে পারি।
সুবর্ণা তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না। আমি বললাম, বৃষ্টির ফিউশন ফ্লেভারটা জানি। পার্পল রেইন। ব্লু রেইন। সাদা সাদা বৃষ্টির ফোঁটা কী রকম বেগুনি হয়ে যায়। আর একটা গোলাপি আভার মধ্য দিয়ে তরুণীটি হাঁটছিল। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ভেতর বিষণ্ন বিউগল। তারপর বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ। দারুণ না?
সুবর্ণা চুলে বিলি কাটে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে ল্যাংগস্টেন হিউজের বৃষ্টির রোমান্টিক কবিতা পড়েছ কখনো? তারপর নিজেই ফিসফিস করে পড়ে,
‘লেট দ্য রেইন কিস ইউ। লেট দ্য রেইন বিট আপন ইউর হেড উইথ সিলভার লিকুইড ড্রপ। লেট দ্য রেইন সিং...আমি হাসি। দম ফাটানো হাসি। তারপর বলি, আজ কী হয়েছে তোমার বলো তো?
সুবর্ণা উত্তর দেয় না। দাঁড়ায়। তারপর যেতে যেতে অভিমানী গলায় বলে, তুমি তো জানোই না বৃষ্টির ঘ্রাণ কেমন? তাহলে আমাকে পাবে কী করে?

দুই

স্বপ্নটা দেখে আজ এত দিন পর খুব সুবর্ণার কথা মনে পড়ে আমার। সম্পর্কের এক বছরের মাথায় ও হুট করে একদিন আমাদের বাড়িতে চলে এল। আমি অবাক। বললাম, কী ব্যাপার? হুট করে চলে এলে? সুবর্ণা বসে থাকে বিমর্ষ হয়ে। বলল, বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দেবে কালই। চলো আজ বিয়ে করে ফেলি। আমি হেসে বললাম কোনো অসুবিধা নেই, আমি প্রস্তুত! সুবর্ণা আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনেকক্ষণ। তারপর বলল, সিদ্ধান্তটা নাও শুভ্র। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আমি মরে যাব। ওর কথা শুনে হেসে বলি, আমিও! তারপর চোখ-মুখ উজ্জ্বল করে বলি, তুমি তৈরি হয়ে আসো, আমি অপেক্ষা করব। সুবর্ণা বেরিয়ে গেল হাসতে হাসতে।

ঘটনাটা দ্রুত ঘটল। সিনেমার মতো। বর্ষার প্রথম দিন ছিল বলেই হয়তো বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল খুব। আমি জানালার গ্লাসটা টেনে খুলতেই একটা বিকট শব্দ। রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা দ্রুতগতির প্রাইভেট কার চাপা দিল তাকে। আমি হন্তদন্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই সব শেষ।

তিন

আজ আবার বৃষ্টি এল। তুলকালাম সে বৃষ্টি। আমি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি এলেই আমার অন্য রকম লাগে! আমি নির্বিকার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকি। বৃষ্টিগুলো অসহ্য। আমার ব্যালকনি ভিজিয়ে দিয়ে গেল এক দমকায়। জানালার গ্লাস। বিছানা। ড্রয়িরুমের অর্ধেকটা। দমকা বাতাসে পর্দাগুলো উড়ছিল হাওয়ায়।