ইফতারে স্বাস্থ্যকর পানীয়

রমজান মাসে সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে খাবারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হলো পানীয়। আমরা ইফতারে বিভিন্ন ধরনের পানীয় খেতে পছন্দ করি। কেমন হবে রোজার মাসে ইফতারের পানীয়? সেটি নিয়েই জিরোক্যাল নিবেদিত প্রথম আলো অনলাইনের আয়োজন ‘সুষম খাবার তালিকা নির্ধারণ: সুস্থ থাকুন রমজানেও’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেছেন এমআইওয়াইএনের (মাতৃত্ব, শিশু এবং শিশুপুষ্টি) পুষ্টিবিদ তায়েবা সুলতানা।

তরমুজের শরবত
ছবি: নকশা

পানির সঙ্গে শরবত

ইফতারের সময় শরবত বা পানীয় গ্রহণের জন্য আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করি। এর মধ্যে অন্যতম হলো পানীয় নির্বাচন। ইফতারে সবচেয়ে ভালো পানীয় হচ্ছে আমরা সাধারণত যে পানি পানি করি সেটা। যাকে আমরা বলে থাকি ‘সাদা পানি’। ইফতারে পানীয় গ্রহণের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সারা দিন রোজা রাখার পর পেট অনেক খালি থাকে। ওই অবস্থায় একই সঙ্গে অনেক পানি বা শরবত পান করা উচিত না। একটু ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে পানি পান করা ভালো। সাধারণ পানির বাইরে সবচেয়ে উপকারী পানীয় হলো টক দইয়ের শরবত, মাঠা বা এ ধরনের শরবত। কারণ, এ শরবতটা আমাদের সারা দিনের পানির চাহিদা পূরণ করে। একই সঙ্গে ভিটামিন আর মিনারেলেরও জোগান দেয়। ফলে আমরা খুব সহজেই চাঙা বোধ করি। ডাবের পানিও রাখতে পারেন ইফতারে। এটি স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী।

অনেকেই বাসায় তৈরি শরবত বা ফলের জুসে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ছবি: পেকজেলস ডটকম

অতিরিক্ত চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর

অনেকেই বাসায় তৈরি শরবত বা ফলের জুসে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করেন। কিন্তু পানীয়তে প্রচুর চিনি বা এ ধরনের কিছু ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়। কারণ, অতিরিক্ত চিনি কারও শরীরের জন্যই উপকারী নয়। পুরো রমজানে ইফতার, বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বা উৎসবে আমরা অনেক মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করি। এসব খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত চিনি সবার জন্য তো বটেই, বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে আমাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ওজন থেকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এ জন্য চিনির বিকল্প বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করতে পারি। বিশেষ করে রমজান মাসে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা উচিত।

জিরোক্যাল নিবেদিত প্রথম আলো অনলাইনের আয়োজন ‘সুষম খাবার তালিকা নির্ধারণ: সুস্থ থাকুন রমজানেও’
ছবি: সংগৃহীত

চলুক ফল ও ফলের জুস

ইফতারের সময় থাকতে পারে বিভিন্ন ধরনের ফল বা ফলের জুস। ফলের জুস তৈরি করার সময় একটু দই বা দুধ দিয়ে নরম করে নিতে পারেন। যেটি আমাদের সাময়িকভাবে এনার্জি দিয়ে সাহায্য করবে। আমরা দ্রুত সতেজ হয়ে যেতে পারব। লেবুর শরবত খুবই উপকারী একটি পানীয়। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের ভিন্নমত আছে। তাদের মতে, লেবুর শরবতে গ্যাস হয়। সে ক্ষেত্রে লেবুর শরবতে ইসবগুলের ভুষি বা তোকমাদানা ব্যবহার করতে পারেন। এ উপকরণগুলো দিয়ে লেবুর শরবত তৈরি করলে গ্যাসের কোনো সমস্যা করবে না। মূলত লেবুর শরবতে সবার গ্যাসের সমস্যা হয় না।

ইফতারে খান ফলের সালাদ ও জুস
ছবি: পেকজেলস ডটকম

বাদ দিন সফট ড্রিংকস বা সোডা পানি

ইফতারের সময় পানীয় হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সফট ড্রিংকস বা সোডা পানি পছন্দ করেন। এ বিষয়ে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। কারণ, সোডাজাতীয় পানি আমাদের খুব দ্রুত ডিহাইড্রেট করে। তাই রমজান মাসে, বিশেষ করে ইফতারের সময় সোডা পানি পান না করাই উচিত।

বেশি ঠান্ডা পানি খাওয়া উচিত না

ইফতারের সময় অনেকেই ফ্রিজে পানি রেখে ঠান্ডা করে খেতে পছন্দ করেন। এ ছাড়া প্রচুর বরফ দিয়ে শরবত খাওয়াও পছন্দ অনেকের। এ বিষয়েও সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এখন প্রচুর গরম, এর মধ্যে হুট করে বেশি ঠান্ডা পানি খেলে শরীরে অনেক সময় বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

এই গরমে বেশি ঠান্ডা পানি বা বরফ মেশানো পানীয় না খাওয়াই ভালো
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

বাসায় বানানো বরফ-পানীয়

প্রায়ই আমরা বাইরে থেকে আখের জুস কিনে খেতে পছন্দ করি। এ ক্ষেত্রেও একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, বাইরের আখের জুসে বরফ বা বরফ-পানীয় ব্যবহার করা হয়। তাই ইফতারের সময় আখের জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি বরফ দিয়ে তৈরি করতে হয় তাহলে বাসায় ফ্রিজে বরফ তৈরি করে নেওয়াই ভালো। সেই বরফ শরবত বা ফলের জুসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

কেনা পানীয় না খেয়ে বরং বাসায় বানানো বরফ-পানীয় খান
ছবি: পেক্সেলস ডটকম