ঈদের নতুন কাপড়

ছোটবেলার ঈদ ছিলে খুব আনন্দের। ঈদের আগে নতুন কাপড় কেনার জন্য কখনো বায়না ধরতাম না। তবে, মনে মনে অপেক্ষা করতাম মা অথবা বাবা কখন নতুন জামা কিনে দেবে। সহপাঠী অন্য ছেলেমেয়েদের নতুন জামা দেখে খুব ভালো লাগত। ঈদের আর মাত্র তিন দিন অথবা চার দিন বাকি। কিন্তু আমার জন্য বা আমার ভাইবোন কারও জন্য এখনো নতুন কাপড় কেনা হয়নি। মনে মনে খুব কষ্ট পেতে লাগলাম। ভাবলাম, এবার ঈদে মনে হয় নতুন কাপড় আর পাব না।

ঈদের চাঁদ দেখা গেল। বাবার কি আনন্দ ঈদের চাঁদ দেখে। আমার ঈদের চাঁদ দেখে খুব আনন্দ লাগল কিন্তু নতুন নেই ভেবে মনটাও খারাপ হলো। রাতের বেলায় ঘুমাতে যাব, এমন সময় দেখি মা আমাদের জন্য নতুন কাপড় আনলেন। আগেই কিনে রেখেছিল, দেয়নি ইচ্ছে করে। সুন্দর একটা স্কার্ট আমার জন্য। আমি স্কার্টটা পড়ে নিলাম সঙ্গে সঙ্গে। মা বলল, এখন খুলে রাখো। কাল সকালে ঈদের দিন পরবে। তখন বয়স মাত্র নয় বছর। ঈদের দিন সকালে মা ঘুম থেকে ডেকে তুলল। বলল, গোসল করে স্কার্টটা পড়ে নে। আমি গোসল করে আসলাম স্কার্টটা পরব বলে। এমন সময় দেখি, একজন ভিক্ষুক নারী তার আমার বয়সী ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা চাইতে এসেছেন ঈদের দিনে। এই ছোট্ট মেয়েটার গায়ের জামাটা একদম ছেঁড়া। আমার দেখে খুব খারাপ লাগল। আমি আমার আগের ফ্রকগুলো থেকে একটা ফ্রক এনে ছোট্ট মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম। ছোট্ট মেয়েটা এত খুশি হয়েছিল। খুব খুশি হয়ে তারা চলে গেল। আমি স্কার্টটা পড়ে চলে গেলাম সহপাঠীদের কাছে। আমার মনে তখন আনন্দ ছিল ছোট্ট মেয়েটাকে জামা দিতে পেরে। আমি স্কার্ট পড়ে এতটা আনন্দ আর পাইনি যতটা আনন্দ পেয়েছিলাম ওই মেয়েটার আনন্দ দেখে।

এরপর থেকে ঈদে নতুন কাপড়ের জন্য আর কখনো অপেক্ষা করিনি। বাবা-মা কিনে দিলেও এতটা আনন্দ হতো না। আমার শুধু মনে হতো, আমার মতো এইরকম অনেক ছেলেমেয়ে আছে যাদের গায়ে দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় কাপড়ই নেই। ঈদ হোক আনন্দময়। ঈদে এই অসহায় মানুষগুলোর মুখে যেন হাসি ফুটে।