ঈদে বন্ধুর বাড়ি
প্রায় জনশূন্য ঢাকা শহরে ঈদের সময় ঘুরতে ভালোই লাগে। কিন্তু যার সঙ্গে ঘুরব সে তো ঈদের ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে। আত্মীয়স্বজনের বাসায় দুই দিনের মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যায়। এরপর একঘেয়েমি চলে আসে। গত ঈদের আগে থেকেই চিন্তা করলাম ঢাকার বাইরে কোথাও বেড়াতে যাব। চট্টগ্রামের এক বন্ধু অনেক দিন থেকে তার বাসায় যাওয়ার জন্য বলছে। কয়েকজন বন্ধুকে অনেক কষ্টে রাজি করালাম। কিন্তু কারও ইচ্ছা ট্রেনে যাবে, কেউ আবার বাসে।
একজন কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। ভিন্ন ভিন্ন পথে রওনা দেওয়ায় একটু দুশ্চিন্তায় থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই চট্টগ্রাম পৌঁছে যাই।
তখন রাত তিনটা। এত রাতে বাস থেকে নেমে আমরা দুজন একটু বোকা হয়ে গেলাম। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে রওনা দিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা পর নদীর ঘাটে এসে পৌঁছালাম। নদী পাড় হয়ে যেতে হবে বন্ধুর বাড়ি। সেখানেও কোনো মানুষজন নেই। সকাল হতে এখনো এক ঘণ্টা বাকি।
একটিমাত্র নৌকা দেখা যাচ্ছে, তাতে মাঝি ঘুমিয়ে আছেন। ট্রেনে আসা বন্ধুদের পৌঁছাতে আরও দুই ঘণ্টা লাগবে। এমন সময় যে বন্ধুর বাড়ি যাব তার ফোন পেয়ে একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু সে কোনোভাবেই বিশ্বাস করছে না আমরা নদীর ওপারে বসে আছি। আমাদের কথাকে রসিকতা মনে করে ফোন রেখে দিল।
ততক্ষণে মাঝি জেগে উঠেছেন। দুজনকে নিয়ে যেতে না চাইলেও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত দেওয়ার কথা বলায় রাজি হলেন।
নদী পার হয়ে বন্ধুকে ফোন করে আশপাশের বর্ণনা দেওয়ায় অবশেষে বিশ্বাস করল। এখনো এক কিলোমিটার বাকি। নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্বচ্ছ নীল আকাশে সূর্যোদয় উপভোগ করতে করতে সকাল হয়ে গেল।