উষ্ণ, নিবিড় আলিঙ্গন এবং স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে আলিঙ্গন। মডেল: সানজানা। ছবি: অধুনা
স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে আলিঙ্গন। মডেল: সানজানা। ছবি: অধুনা

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানুষকে আলিঙ্গন করলে, এমনকি পোষা প্রাণী এমনকি টেডি বিয়ারকেও জড়িয়ে ধরলে স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আলিঙ্গন হলো হৃদ্স্বাস্থ্যকর এবং মানসিক চাপের মান হ্রাসও করে।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষে মানুষে আলিঙ্গন এমনকি সামান্য স্পর্শ প্রয়োজন সার্বিক মানসিক ও ইমোশনাল ভালো থাকার জন্য।
বিশেষ করে আলিঙ্গন মনোগত বিকাশ উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা উজ্জীবিত করে, স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল মান কমায় এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ২১ জানুয়ারি পালিত হয় জাতীয় আলিঙ্গন দিবস।
এ দিবসের সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে, মিশিগানে শুরু করেন বেভারেন্ড কেভিন বর্ণে, তাঁর যুক্তি ছিল আমেরিকানরা এমন এক সমাজব্যবস্থায় বাস করে, যেখানে জনগণের প্রতি তাদের অনুভূতি প্রকাশের ব্যাপারটি বেশ বিব্রতকর। তাই একদিন উন্মুক্ত কোলাকুলি করে এ অনুভূতির প্রকাশ ঘটানোর প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে আলিঙ্গনের প্রচলন অনেক দিন থেকেই।
শরীর ও মনের জন্য আলিঙ্গন কেন ভালো
কেউ যখন কাউকে আলিঙ্গন করেন, তখন একধরনের সামাজিক অবলম্বন যেন প্রদান করা হলো, নিজেও তা পাওয়া গেল। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রকাশ। বিশ্বস্ত মানুষ বা বন্ধুর সঙ্গে আলিঙ্গন বড় রকমের নির্ভরতা আনে মনে।
২০০৩ সালের একটি আগের গবেষণায় তেমনি সিদ্ধান্তে এসেছে, দম্পতিদের মধ্যে আলিঙ্গন ও হাতে হাত ধরা, শরীরে নিঃসরণ করে অক্সিটোসিন, যা ‘প্রেম-হরমোন’ নামে পরিচিত, যা পরস্পর বন্ধনকে সহজ ও সুগম করে।

আলিঙ্গনে মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দিনের আগে একটু কোলাকুলি, স্পর্শ, আদর করা, আহ্লাদ করা, সারা দিন দেয় সুরক্ষা। নর্থ ক্যারোলাইনা মেডিকেল স্কুলের মনোবিজ্ঞানী ক্যারেন গ্রুজেন বলেন, ‘কোলাকুলি করলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল মান হ্রাস করে এবং বাড়িয়ে দেয় “ভালো লাগা” হরমোন ডোপামিন ও সেরোটনিন।’
একই গবেষণায় দেখা গেছে, যাক মানুষের সঙ্গে দৈহিক সংস্পর্শ পেয়েছেন কম, এদের রক্তচাপ বেশি এবং বেশি হৃদাঘাত হারও।
আলিঙ্গনে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ, জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যায়।
এ ছাড়া আলিঙ্গন নিজের দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি এবং অস্তিত্বের সংকট—অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও উপশম করে। আলিঙ্গন নিয়ে অন্য এক গবেষণার মুখ্য গবেষক স্যান্ডার কুলে বলেন, মানুষ যখন তার মরণশীলতার মর্ম উপলব্ধির মুখোমুখি হয়, তখন অন্য একজনের স্পর্শ এ ভয়কে অতিক্রম করতে সহায়ক হয়।
‘পারস্পরিক সংস্পর্শ এমন একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা যে কেবল মানুষ কেন, একটি বন্ধুর সংস্পর্শে এমনকি একটি টেডিবিয়ার জড়িয়ে ধরতে অস্তিত্বের তাৎপর্য এনে দেয় মনে।’ বলেন কুলে।
কেবল একটু আদর বা মায়ামমতাই নয়, আলিঙ্গন মরণশীলতার ভয় এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি উপশমে সাহায্য করে। তাই আলিঙ্গন করুন নিকটজনকে—আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, স্বজন।
লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।