উড়াই চলো স্বপ্নডানা...

নোবেল পাওয়ার স্বপ্ন দেখি
আগামী ১০ থেকে ১২ বছর পর নিজেকে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে দেখতে চাই।
সে জন্য অদম্য সাধনা করে যাচ্ছি। বিভিন্ন ব্লগে নিয়মিত লিখছি। জনপ্রিয় কিছু ওয়েব পোর্টালে সাহিত্য পাতায় লেখালেখি করছি। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়ও ধারাবাহিকভাবে লেখা পাঠাচ্ছি। লিখতে হলে জানতে হবে, পড়তে হবে। তাই নিয়মিত নিত্যনতুন বিষয় জেনে চলেছি। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের লেখার ধাঁচ বুঝে সে অনুযায়ী নিজেকে পরিণত করে তোলার চেষ্টা করছি।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস পড়ে, তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে দৃঢ় সংকল্প করেছি যে আমাকে সাহিত্যিকই হতে হবে। অন্য চিন্তার অবকাশ নেই।
আর সাহিত্যিক যেহেতু হবই, তো বিশ্বমানের সাহিত্যিকই হব। নোবেল বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশকে সম্মান এনে দেব।
আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ যুবায়ের
কল্যাণপুর, ঢাকা
অ্যানিমেটর হতে চাই

ভবিষ্যতে আমি নিজেকে একজন সফল অ্যানিমেটর হিসেবে দেখতে চাই। যেহেতু বাংলাদেশে এ পেশা এবং এ-সংক্রান্ত কোর্সগুলো খুব একটা সহজলভ্য নয়, সেহেতু কোনো একটা পাবলিক বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ইউরোপের স্বনামধন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ে কোর্স করে নিজেকে অ্যানিমেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। স্বপ্নপূরণের জন্য এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছি নানাভাবে। যেমন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করছি, প্রোগ্রামিং প্র্যাকটিস করছি। এ ছাড়া অবসরে কার্টুন আঁকার শখটাও চালু রেখেছি।
খুব ছোটবেলা থেকেই কার্টুন বা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা কাজ করে। শৈশব পার হয়ে আসার পরও তা বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েছে। কার্টুন দেখে নিছক বিনোদন পাই তা নয়, কোন অ্যানিমেশনটি কেমন হলো বা কেমন হলে আরও ভালো লাগত, তা-ও ভাবি। কিংবা প্রিয় কোনো লেখকের অমুক গল্প বা উপন্যাস থেকে যদি অ্যানিমেশন তৈরি করা যেত...এমন ভাবনা আমার মধ্যে সব সময় কাজ করে। ছোটবেলা থেকে একটা দুঃখ ছিল, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক মানের অ্যানিমেশন তৈরি হয়নি। বিশেষত যদি আমাদের প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার কিংবা অন্যান্য প্রিয় লেখকদের মজার মজার সব উপন্যাস অবলম্বনে অ্যানিমেশন তৈরি করা যেত, তবে তা বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের আগ্রহের বা বিনোদনের একটা বড় ক্ষেত্র হতে পারত। এসব ভাবনা থেকেই অ্যানিমেটর হওয়ার স্বপ্ন আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে। তা ছাড়া পরিবারের সদস্যরা—আব্বু, আম্মু, দুই বোন বরাবরই আমাকে এই স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করে। আর এ স্বপ্নে আমার বড় আইডল হলেন অস্কার বিজয়ী নাফিস বিন জাফর। আরও আছেন ওয়াহিদ ইবনে রেজা। তাঁদের সাফল্যই আমাকে এই স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করে। হয়তো বাংলাদেশেও ড্রিম ওয়ার্ক অ্যানিমেশন, পিক্সার বা ডিজনির মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, যেখানে আমি একজন সফল অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ করব। তৈরি করব এক কাল্পনিক জগৎ আর মজার সব চরিত্র!
মৌপিয়া তাজরিন
দ্বাদশ শ্রেণি, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ
মাশরাফি হব

আমি মাশরাফি ভাইয়ের মতো একজন ক্রিকেটার হতে চাই। চাই লাল-সবুজ জার্সি জীবনে একবার হলেও গায়ে জড়াতে।
খুলনার একটা ছোট্ট একাডেমিতে অনুশীলন করছি। হয়তো বড় কোনো ক্লাবে ভর্তি হতে পারতাম, কিন্তু সাধ্য নেই। সাধ্যের বাইরে থাকলেও স্বপ্নটা তো শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না! তাই এই একাডেমিতেই চলছে আমার স্বপ্নপূরণের অনুশীলন।
ছোটবেলা থেকেই মাশরাফি ভাইকে দেখে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নের শুরু। তাঁকে দেখেছি ইনজুরির কারণে বারবার বিশ্রামে গেছেন। আবার অদম্য শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। দিয়েছেন নেতৃত্ব। তাঁর এই দৃঢ়তাই আমাকে স্বপ্নপূরণে বিভোর করেছে।
একাডেমির সবাই আমাকে মাশরাফি নামে ডাকে। এত ভালো লাগে! প্রতিদিন স্বপ্নটা বাড়ে একটু একটু করে।
সজল
খালিশপুর, খুলনা
পড়ব আলোকবিজ্ঞান নিয়ে

ছোটবেলা থেকে ভালো ছাত্রী ছিলাম। তাই পরিবারের সবার অনেক স্বপ্ন আমাকে নিয়ে। এখন সেই পথেই চলছি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যখন ভর্তি হই, তখনই স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডাবল মেজর করব। সেই সুযোগটাও পেয়ে গেলাম। দেশে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চাই আলোকবিজ্ঞানের ওপর। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
আর মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ শেষে কাজ করব আমার স্বপ্ন নিয়ে। আমার স্বপ্ন, রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা অসহায় কুকুর, বিড়ালদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। চিকিৎসা শেষে তাদের জন্য স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া। যেখানে তাদের আদর-ভালোবাসার কমতি হবে না। কাজ করতে চাই প্রাণীদের অধিকার সংরক্ষণে। সুযোগ পেলে যোগদান করতে চাই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে, যারা প্রাণী অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছেন।
আয়শা আরা লস্কর
চতুর্থ বর্ষ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
গড়ব স্বপ্নের বাংলাদেশ

‘মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়’ কথাটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাই আমার স্বপ্নগুলোও আকাশ সমান বড়। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আমার আদর্শ। তাঁর মতোই একজন বৈচিত্র্যময় মানুষ হতে চাই। স্থপতি হয়ে বাংলাদেশে স্থাপত্যশিল্পের প্রসার ঘটাতে চাই। ঢাকাকে একটি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলে এর ঐতিহ্য ও সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাই। চারপাশের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই। চাই নারী-পুরুষ নয়—কাজ দিয়েই মানুষের মূল্যায়ন হোক।
সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যেক শিশুকে বইপড়ার আনন্দ দিতে চাই, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। স্বপ্ন দেখি প্রতিটি ঘরে লাইব্রেরি গড়ে তোলার। চাই আলোকিত স্বপ্নের বাংলাদেশ।
সৃষ্টি বৈদ্য
দ্বাদশ শ্রেণি, শহীদ স্মৃতি কলেজ, মাদারীপুর
স্বপ্ন যখন আকাশ ছোঁয়ার

স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। ছোটবেলায় যখন কেউ প্রশ্ন করত, ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’ বলতাম, প্রথমত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, আর তারপর নাসার বিজ্ঞানী। নাসা সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তবু কীভাবে এই ভালোবাসা জন্মেছিল কে জানে!
প্রকৌশলী হয়ে এমন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে চাই, যা আমার দেশের আপামর জনসাধারণ স্বল্প খরচে এবং সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। আমি প্রযুক্তিকে আনতে চাই সবার নাগালে। একই সঙ্গে মহাকাশ গবেষণায়ও নতুন মাইলফলক স্থাপন করতে চাই। চাই আমার কাজের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব আমার দেশকে চিনুক, বাংলাদেশকে জানুক।
লামিসা কাইয়ূম
উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ, হাজি লালমিয়া সিটি কলেজ, গোপালগঞ্জ
ক্যামেরা-যোদ্ধা হব

এখন সবার হাতে হাতে ক্যামেরা। হুট করেই দেশে হাজারো আলোকচিত্রী তৈরি হলেও সময়ের অসংগতিগুলো তুলে ধরার মতো আলোকচিত্রী বোধ হয় খুব বেশি নেই। আমি তাই একজন সফল ফটোসাংবাদিক হতে চাই। আলো, ছায়া আর রঙের কারিকুরি দিয়ে নিজেকে ক্যামেরা-যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করতে চাই। সাহস আর উদ্যমের পুরোটা ঢেলে দিয়ে কাজ করতে চাই এই পেশায়। কেবল টাকা কিংবা সম্মান নয়, কাজ করতে চাই নিজের জন্য।
ক্যামেরাকে অস্ত্র বানিয়ে সামাজিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই। সমস্যা আর সমাধানগুলোকে তুলে এনে কাজ করতে চাই দেশের বড় কোনো সংবাদমাধ্যমে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই আমার ছবিগুলো। তুলে আনতে চাই এ দেশের সাফল্য, সম্ভাবনার অসাধারণ গল্পগুলো। যেন অন্ধকারে পিছিয়ে পড়া গল্পগুলোও আলোর মুখ দেখে। পাশাপাশি এ দেশের সৌন্দর্য আর প্রকৃতিকে তুলে আনতে চাই বিশ্ব মঞ্চে। বিশ্বকে দেখাতে চাই এ দেশ সত্যিই সোনার বাংলা।
মীর মাইনুল ইসলাম
দ্বিতীয় বর্ষ, বিবিএ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য...

শুধু নিজের জন্য না, কিছু করতে হবে আমার চারপাশের মানুষগুলোর জন্যও। ইচ্ছাটা জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হয় ভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে। যখন সত্যিকার অর্থেই মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ পেলাম। আমাদের ক্যাম্পাস বড় অদ্ভুত জায়গা। যেখানে দেশের সেরা ছাত্রছাত্রীরা আসছে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে, সেখানেই ছোট ছোট বাচ্চাকে দেখি দুবেলা খাবারের জন্য ফুল বিক্রি করে। হয়তো বাস্তবতার জাঁতাকলে শৈশব হারিয়ে গেছে এদের, কিন্তু স্বপ্ন তো হারায়নি। ওদের কাছাকাছি গেলে বোঝা যায়, অন্য বাচ্চাদের মতো এদের জীবনেও শখ-আহ্লাদ আছে। এরাও অন্য শিশুদের মতোই আইসক্রিম খেতে চায়, খেলনা নিয়ে মেতে উঠতে চায়, বন্ধুদের সঙ্গে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যেতে চায়। আরেকটা জিনিস খুব চমৎকারভাবে পারে ওরা। তা হলো ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া। ওদের জন্য খুব সামান্য কিছু করলে, ভালোবেসে কাছে টানলে যে কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার বন্ধনে আটকে ফেলে, সেই অনুভূতি একবার পেলে বারবার পেতে ইচ্ছা হয়। স্বপ্নটা দেখে ফেলেছি তাই। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে যেভাবেই এগোই না কেন, পাশাপাশি কাজ করব পথশিশুদের জন্য।
আফসানা রহমান
নৌযান ও নৌ যন্ত্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
আমি হব গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

মানুষ ও পৃথিবীর জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বাড়ছে দুর্যোগ, বাড়ছে রোগের বিস্তার। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে চাই। সবুজ প্রযুক্তি গড়ে তুলতে চাই, যা আমাদের দেশের কলকারখানা, বিভিন্ন কয়লাখনি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড কম উদ্গিরণ করবে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য একজন পরিবেশবিজ্ঞানী ও উন্নয়নকর্মী হতে চাই। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সোহাগ সরকার
ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ, তৃতীয় বর্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্নটা আমার ‘মেড ইন বাংলাদেশ’

কিছু মোটা বই আর ম্যাগাজিন দিয়ে একটা ব্রিজের মতো বানিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে পাশে বসে আছে ছোট্ট একটা ছেলে। হাতে দুটো খেলনা গাড়ি। একটার গায়ে লেখা ‘মেড ইন চায়না’, অন্যটা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। গাড়ি দুটোতে দম দিয়ে ব্রিজ বরাবর ছেড়ে দিল সে। দেখা গেল একটা গাড়ি একটু ওপরে উঠে আর এগোতে পারল না। আর অন্যটা এক পাশ দিয়ে উঠে অন্য পাশ দিয়ে নেমে গেল। ছেলেটার মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হলো। কারণ, পরের খেলনা গাড়িটা ছিল ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।
এ ঘটনা সে সবাইকে গর্ব ভরে বলে। আর বলে, ‘দেখো ওটা কিন্তু পারে নাই। এটা পেরেছে!’ ছোট্ট ছেলেটা খেয়াল করেছে, আব্বু তাকে যত খেলনা কিনে দেয়, তার প্রায় সব কটিতেই লেখা থাকে মেড ইন চায়না। সেই থেকে সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, একদিন বড় হয়ে সে অনেক অনেক খেলনা বানাবে। আর তার সব কটিতে লেখা থাকবে মেড ইন বাংলাদেশ।
এই হলো ছোটবেলার আমি। এমনটাই স্বপ্ন আমার। তবে এখন সেটা আর শুধু খেলনায় সীমাবদ্ধ নয়। স্বপ্ন দেখি একদিন ইলেকট্রনিকস কুটিরশিল্পের মতো ছড়িয়ে দেব সারা দেশে। এমআইবি (মেড ইন বাংলাদেশ) নামে একটা কোম্পানি হবে, আর সে কোম্পানির সিইও হব আমি! মানুষকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করব, মুগ্ধ হয়ে শুনবে সবাই আর অনুপ্রাণিত হবে। বিভিন্ন দেশি পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি এমআইবি বছরের বিভিন্ন সময়ে সারা দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মজার মজার খেলনা বানানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। যাদের পণ্য সেরা হবে, তাদের পণ্য বাজারজাত করতে তাদেরকে সহায়তা করা হবে। সেখানে লেখা থাকবে বাংলাদেশের নাম! আর যে শিক্ষার্থী খেলনাটা তৈরি করবে তার নাম। তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে সারা দেশে সৃজনশীলতার এক বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে এমআইবি, শুরু হবে এক নতুন যুগ!
মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
হতে চাই সংবাদ উপস্থাপক

আমার মনে হয়, এ সময়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পেশা হলো টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপনা। এ পেশায় খ্যাতি, সম্মান, পরিচিতি—সবকিছুই মেলে। মানুষ দেখবে, চিনবে, জানবে—এটাই তো আনন্দ!
পরিবারের সদস্য অথবা আত্মীয়স্বজন একসঙ্গে টিভি রুমে জড়ো হয়ে আমার উপস্থাপনা দেখবে। আবার কোনো বন্ধু হয়তো ফেসবুকে বা মোবাইলে খুদে বার্তা দিয়ে জানাবে, ‘দোস্ত, তোকে তো আজ টিভিতে সংবাদ পড়তে দেখলাম।’—ভাবলেই ভীষণ ভালো লাগে। তাই সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার স্বপ্নই আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। একসময় ভাবতাম, আইটি-সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনা করে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করব। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে ওঠেনি। স্বপ্ন ভাঙবে, গড়বে—এটাই তো নিয়ম। স্বপ্ন পূরণ হোক বা না হোক, মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বপ্ন দেখি আকাশ ছোঁয়ার। কারণ, স্বপ্ন না থাকলে জীবনটাই তো থমকে যাবে!
আরিফুল ইসলাম
বিএসসি অনার্স (দ্বিতীয় বর্ষ), ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
অন্তর্জালে ছড়িয়ে দেব আমার মাতৃভাষা!

আমার জানামতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে ছয় কোটি অতিক্রম করেছে। অঙ্কটা প্রায় ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার সমান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অন্তর্জালের এই বিস্তৃতি বাংলায় খুব সামান্যই হয়েছে। ‘সার্চিং’ আর ‘ওয়েব ব্রাউজিং’য়ের মতো মৌলিক আর সাধারণ কাজও ইংরেজি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ভাষা প্রতিযোগে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে একটাই স্বপ্ন দেখি, বাংলা ওসিআর (অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিডার) ডেভেলপ করব। যা যে কোনো ছবি বা পিডিএফ ফাইলকে বাংলা ‘প্লেইন টেক্সটে’ রূপান্তর করবে। এর মাধ্যমে দিনের পর দিন শত শত বাক্য টাইপ না করে শুধু বই থেকে ছবি তুলেই তাকে ইন্টারনেটের বিশাল তথ্যভান্ডারে যুক্ত করা সম্ভব হবে। আমরা রক্ষা করতে পারব বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা সাহিত্যের বিশাল সম্ভার। মনেপ্রাণে এই স্বপ্নটাই বিশ্বাস করি।
ইমতিয়াজ আহমেদ
প্রথম বর্ষ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, এম.আই.এস.টি
স্বপ্ন যখন বিশ্বভ্রমণ

ইন্টারনেটের যুগে যখন মোবাইল ছুঁয়ে দিয়েই দেখে ফেলা যায় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত, আমার মাথায় শুধু বিশ্বভ্রমণের স্বপ্নই ঘুরপাক খায়। দুর্গম এলাকা থেকে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য, কিচ্ছু বাদ যাবে না! এত ভিন্নতা মানুষের আচার, সংস্কৃতি, জাতি, বর্ণে। কয়েকটি দেশ ভ্রমণের পর অনেক অভিজ্ঞতাই আমার হয়েছে। নেপালের প্যারাগ্লাইডিং, থাইল্যান্ডে স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেইলিংয়ের অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ।
অনেক কিছুই এখনো দেখা হয়নি। তাতে কী? পুরো জীবনটাই তো পড়ে আছে। সবে এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষে পড়ছি। শেষ করার পরই বেরিয়ে পড়ব বিশ্বভ্রমণে। একের পর এক পুরোনো পাসপোর্টের ভিসার পাতাগুলো বিভিন্ন দেশের সিল দিয়ে ভর্তি করে নতুন পাসপোর্ট হাতে নিতে চাই। বাংলাদেশের দর্শনীয় জায়গা প্রায় সবই ঘুরে দেখেছি। এখন আইসল্যান্ডের নর্দার্ন লাইট, জর্ডানের পেত্রা, চীনের রেইনবো মাউন্টেন, ইতালির ভেনিস, মিসরের পিরামিড, আমেরিকার অ্যান্টিলোপ ক্যানিয়ন, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, মনুমেন্ট ভ্যালে, পেরুর মাচুপিচু, স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, ইন্দোনেশিয়ার বালি, ইংল্যান্ডের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিসসহ বিভিন্ন জায়গার স্থিরচিত্র দিয়ে ভরে তুলতে চাই ফেসবুকের দেয়াল।
অদিতি ঘোষ
চতুর্থ বর্ষ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
হতে চাই পুলিশ সুপার

আমি পড়ালেখা শেষ করে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেশ ও দেশের মানুষের হয়ে কাজ করতে চাই। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে নিজেকে যুক্ত করেছি। সব সময় মনে রাখি, বিশ্বখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামের কথাটা, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো; স্বপ্ন তা, যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।’ আমি জানি, যত সহজে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি, তা পূরণ করা অত সহজ নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কোনো বাধাবিপত্তি আমাকে থামাতে পারবে না। উল্টো স্বপ্নপূরণের পথ নতুন করে চিনিয়ে দেবে।
রুবেল আহম্মেদ
তৃতীয় বর্ষ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ই-আইনি সহায়তা নিয়ে আসছি

আইন পেশায় আছি। নানা রকম মামলার দেখভাল করতে হয় প্রতিদিন। হাজারো মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। অনেক অবহেলিত মানুষ আছেন যাঁরা জানেনই না, কীভাবে তাঁরা সাহায্য পেতে পারেন। আবার অনেকেই আছেন, টাকাপয়সার অভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারেন না। বিনা মূল্যেও যে এই সেবা পাওয়া সম্ভব, সেটা অনেকের ধারণাতেই নেই। এসব দেখতে দেখতেই একসময় মনে হলো, একা রাষ্ট্র বা সরকার আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না, যদি আমরা হাতে হাত না মিলাই। এই তো সুযোগ দেশের জন্য, দশের জন্য কাজ করার।
তাই আমরা কজন নবীন মিলে শুরু করছি ‘ই-আইনি সেবা’ প্রকল্প। যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত সব মানুষকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। আমাদের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে।
আমাদের সবাইকে নিজের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে, লড়তে হবে। তবেই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। আমাদের কাছে আসা প্রতিটি মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তবেই আমরা আইনি লড়াইয়ে নামব। যেন সব অনিয়ম ভেঙে এগিয়ে যেতে পারি।
সৈয়দা ফেরদৌস আহমেদ
লিগ্যাল কনসালট্যান্ট, ধানমন্ডি, ঢাকা
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করব

ছোটবেলা থেকেই মানুষের মন, মানুষের আচার-ব্যবহার—এসবের প্রতি আগ্রহ অনুভব করতাম। স্নাতক পর্যায়ে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ফলে সেই আগ্রহ এখন আরও ডালপালা মেলেছে। আমাদের দেশে শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সবাই আজকাল কমবেশি সচেতন, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব কম মানুষই ভাবেন। অথচ সুস্থতা বলতে শারীরিক, মানসিক—দুই ধরনের সুস্থতাকেই বোঝায়। একজন মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে আমার ইচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করব। আমাদের দেশে মানসিক রোগ যেন লুকিয়ে রাখার বিষয়, বেশির ভাগ মানুষ তাদের মানসিক সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলাফল—দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক সমস্যা বয়ে বেড়ানোর ফলে একসময় তা জটিল আকার ধারণ করে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সহজলভ্য করে তোলাই হবে আমার লক্ষ্য। ‘কাউন্সেলিং সাইকোলজি’ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছি।
আদনিন জেবিন
মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাইবার অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ

দেশে প্রযুক্তির সুবিধা বাড়ছে। সঙ্গে অসুবিধাও। প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে একটি আইন হয়েছে। আরও একটি আইন হচ্ছে। তবুও থামছে না সাইবার অপরাধ।
আমি তথ্যপ্রযুক্তির ছাত্র নই। আগ্রহ থেকেই কম্পিউটারের নানা রকম কাজ শিখেছি। সাইবার সচেতনতায় এক বছর ধরে আমি ফেসবুকে একটা কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমার একার স্বপ্ন এখন ছড়িয়ে পড়েছে আরও অনেকের মধ্যে। একাকী শুরু করা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে ১০ জন মেধাবী তরুণের একটা দল। তাঁদের মধ্যে ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, গবেষক, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, আইটি উদ্যোক্তাসহ অনেকেই আছেন। আমাদের সংগঠনের নাম সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশন। ভুক্তভোগীরা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে (facebook.com/pageCCA) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমার বিশ্বাস, নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই এগিয়ে এলে সাইবার অপরাধ পুরোপুরি বন্ধ না করা গেলেও অন্তত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
কাজী মুস্তাফিজ
নয়া পল্টন, ঢাকা
সফল প্রোগ্রামার হতে চাই

আমার স্বপ্ন হলো একজন সফল ও দক্ষ কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়া। বর্তমানে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
সেই লক্ষ্যেই এসএসসি পাসের পর ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছি। এখন সপ্তম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। ইচ্ছা আছে অনেক দূর যাওয়ার। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজেকে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে তৈরি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সামান্য হলেও অবদান রাখতে চাই।
শাকিব হাসান
রুমডো ইনস্টিটিউট অব মডার্ন টেকনোলজি, ময়মনসিংহ।
ভ্রমণকারী হতে চাই

আর দশটা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর মতো একজন প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন আমিও দেখি। কিন্তু এর পাশাপাশি আমি একজন ভ্রমণকারী হতে চাই। কোনো মেয়ে এমন স্বপ্ন দেখে কিনা জানি না, কিন্তু আমি দেখি। পৃথিবীর প্রতিটা কোণ দেখতে চাই। শুধু চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চাই না। সবার আগে ঘুরে দেখব নিজের দেশ, তারপর বাইরের দেশগুলো। মরার আগে ভ্রমণের ইচ্ছেটা পূরণ করতে চাই। নয়তো মরেও শান্তি পাব না। ইচ্ছাশক্তি তো প্রবলভাবেই আছে, বাকিটা ওপরওয়ালার ওপর ছেড়ে দিলাম।
উম্মে হাবিবা
দ্বিতীয় বর্ষ, বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ