কেবল মন্দ কেন? কেন কেবল তীব্র দহন জ্বালা?
কিছু ভালো আছে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলাপচারিতায় উঠে আসে। অনেকে বলেছেন, মা–বাবার যত্ন নেওয়া, তাঁদের সময় দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় সেই ছেলেবেলার–মেয়েবেলার আমি, আমরা উঠে আসি তাঁদের কাছে। মায়ের গলা জড়িয়ে আদর।
কেউ বলেন, স্ত্রী–স্বামী, ছেলেমেয়ে পাচ্ছে বেশি সময়। মাঝেমধ্যে ঝগড়া, আবার সন্ধি। মেঘের কোলে রোদ হাসে।
বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে কতবার হ্যাপি বার্থ ডে দুবার করে কতবার বলা হলো। ২০ সেকেন্ড সময় মেনে হাত ধোয়া করতল। পিছ, আঙুলের ফাঁকফোকর, নখের ডগার নিচ। জীবনে যা করা হয়নি। সাবানের কী ভাগ্য! মানুষ এখন হাত ধুয়ে খাবার খায়, আগে যা করত না।
অহেতুক ঘোরাঘুরি, রেস্তোরাঁয় গুলতানি, চায়ের কাপে ঝড় তোলা বন্ধ। উইন্ডো শপিং চালু হয়েছে। মলগুলো খুলেছে। তবে ফুড কোর্টে নেই এত ভিড়। বাড়ির মধ্যে বন্দী, সংসারের বন্ধন শক্ত হয়েছে আরও। তবে অতিথি নেই।
মিতব্যয়ী হওয়া গেছে। বন্ধ হয়েছে অহেতুক অর্থ অপচয়, হাত ধোয়ার অভ্যাস বেড়েছে; যা বিখ্যাত সাবানের ব্র্যান্ড কোটি কোটি টাকা খরচ করে করতে পারেনি। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস বেড়েছে। অনেকে এসির ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন, সিডিসি বলেছে ঘরে বেশি করতে হবে বায়ু চলাচল, তা না হলে করোনার প্রকোপ কমবে না।
বাচ্চাদের জন্মের আগে থেকে জব আমার এবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম বাচ্চাদের খেয়াল বেশি রাখতে পারছি—এমন মন্তব্য। অনেক দিন খোঁজখবর নেওয়া হয় না, এমন সব বন্ধুর খোঁজ নেওয়ার সময় পাওয়া গেল মনের মতো রান্না করছি, খেয়ে সবাই তুষ্ট।
মন ভালো রাখতে বহু বছর সময়ের অভাবে পড়া হয়নি, এমন বই পড়া হচ্ছে। গান শুনছি।
বাথরুমে গলা ছেড়ে গান, কত দিন পর ‘এই করেছ ভালো নিঠুর হে, এই করেছ ভালো...।
ঘরে রান্না করছেন স্বামী–স্ত্রী, নতুন নতুন রান্না আর রেসিপি ফেসবুকে তুলে ধরছেন খাবারের ডিশ। অনেকে নেমনতন্ন করছেন (করোনাকালে যাওয়ার উপায় নেই!)। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১ দিন আইসোলেশনে থেকে বললেন একজন, নিজের মতো একা থাকা এর আগে আর হয়নি কখনো।
চিকিৎসা যাঁরা দেন, তাঁদের কি কষ্ট! সবাইকে দেখভাল করা। সবার প্রতি নজর দেওয়া। রান্না আর খাওয়া প্রায় কথার মধ্যে। উম্ম! কি ইয়ামি খাবার রান্না করেছি নিজ হাতে! নিজেই নিজেরটা চেটেপুটে অর্ধেক সাবাড়। একজনের কথা, প্রতিটি ধাপে নতুন নতুন ভাবনা। একজন বলেন পর্যবেক্ষণের ভঙ্গিতে, যার আপনজন গেছে, তার কাছে ভালো কিছু নেই; যার যায়নি, তার সবকিছু ভালো।
অনেকের আয় বেড়েছে। মাস্ক, গ্লাভস বেচে ভালো ব্যবসা। আলু আর পেঁয়াজ, সবজি—এগুলোর দাম বেড়েছে, তাতে কী, খেয়ো না।
সুদূর আমেরিকা থেকে একজন লিখলেন—আমরা এখন জানি স্বাস্থ্যবিধি কী? বুঝতে পারছি জীবন এত ভঙ্গুর, এত সাময়িক। যত দিন বাঁচি, পরিপূর্ণভাবে বাঁচতে চাই। ভবিষ্যতে হয়তো প্রতিষ্ঠানে এত পড়া হবে না। হয়তো ঘরে থেকে পড়ার চল হবে। অনেকেই দূরে দূরে আছি, প্রত্যকে প্রত্যেককে ভালোবাসতে হবে। জীবন কম সময়ের।
খারাপ মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ হয়েছে মনে হয়। অনেকে একমত নন। একজন বলেন, টাকা কম খরচ হচ্ছে বলে ভালো লাগছে। তবে ব্যয় জমে যাচ্ছে, তবুও ভালো, পরিবেশদূষণ কমেছে। পৃথিবী কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে। বুড়িগঙ্গার জল কি স্বচ্ছ, কোনো গন্ধ নেই। পাখি সব করে রব রাতি পোহালে। কাননে কুসুম কলি ফোটে আনন্দে।
অনেক পেশাগত কাজ যে বাসা থেকে করা যায় বোঝা গেল। কেউ নাকি ধূমপান বর্জন করেছেন। বিয়েবহির্ভূত অবৈধ গর্ভপাত কমেছে। বাণিজ্যিক জীবন থেকে নিজেকে ফিরে পেলাম। নিজেরে হারায়ে খুঁজি। পরিবারকে বুঝতে শেখা। সংসারী হওয়ার নতুন পাঠ। রাস্তায় থুতু ফেলা কমেছে। নাক খিমটানো কমেছে।
অনেক সেমিনার–সম্মেলন হচ্ছে। করোনা না এলে কী হতো? কিচেন গার্ডেন করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ব্যায়াম করা বেড়েছে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি মনোযোগী করেছে, তবে সবাইকে নয়।
একজন বলেন, বিশ্বমারির কোনো ভালো দিক থাকে না। যা থাকে তা ‘লেসন লার্নট’, মানুষের জন্য শিক্ষা। তা তো ঠিক, প্রতি শত বছর পরপর মারি এসেছে। ২০২০ সালে আসার কথা ছিল, এসেছে আগে, কেন প্রস্তুতি নাওনি? ঘুমে ছিলে, কিছু শয়তানের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়লেও মানুষ হয়েছে প্রতিবাদমুখর। তরুণ–তরুণী–বয়স্ক সবাই রাজপথে নেমে এসেছেন। ধর্ষণের শাস্তি করা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
একজন উচ্ছ্বসিত: ওয়েবিনার ওয়ে বিনার ওয়ে বিনার, অনলাইন অনলাইন অনলাইন।
ঘরের কাজে সাহায্যকারীকে আর বলা হবে না রুটি পাতলা হয় না কেন? আরও কিছু কাজ আগে করতাম না, এখন করি। টের পাই। শ্রমের মর্যাদা যা দিচ্ছি, তা অপ্রতুল। কায়িক শ্রমের মূল্য অনেক। দেশের বাইরে গেলে খুব বোঝা যায়।
এত ব্যস্ত না থাকলে চলে। জীবনে সব জরুরি তা নয়। ভাবুন। একান্তে। একমনে। অল্প কিছু সময় প্রতিদিন। বারান্দায় রোদে বসে গরম চা খেতে খেতে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে। হাতে প্রথম আলো খুব সকালে এল।
চায়ের কাপের ধোঁয়ার সঙ্গে মন ওড়ে। ভাবনার কী হাওয়ায় কে মাতাল? এই ভালো সেই ভালো।