পাঠকের ঈদ অভিজ্ঞতা
একটি কালো গরু
পাঠকের কাছে ঈদ অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিল ছুটির দিনে। অনেক পাঠক নিজের অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা লিখে পাঠিয়েছেন। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত একটি ঈদ অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হলো এখানে।
সেই স্মৃতি এখনো ভুলিনি। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি তখন। ভাইয়ার সঙ্গে গরুর হাটে যাওয়ার বায়না করলাম। আমার নাছোড়বান্দা আচরণ দেখে ভাইয়াও বেশি আপত্তি করল না। গেলাম হাটে।
হাটের এ–মাথা থেকে ও–মাথা ঘোরাঘুরির পর একটা কুচকুচে কালো গরু কেনা হলো। গরু কেনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই ভাই গরু নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম।
তখন কেবল সন্ধ্যা নামছে। ভাইয়া গরু নিয়ে একটু সামনে হাঁটছে আমি পেছনে। মনে হলো, আমিও একটু গরুর দড়ি ধরে হাঁটব। ভাইয়াকে বলাতেই সে রেগে গেল। আমি বললাম, ‘গরু তো শান্তশিষ্টই, কিছু হবে না’!
যাহোক, গরুর দড়ি হাতে পেয়েই আনন্দে আটখানা হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরেই বিপত্তিটা বাধল! হঠাৎ একটা হেঁচকা টান অনুভব করার পরই দেখি গরুর দড়ি আমার হাতে নেই।
কিছুক্ষণ গরুর পেছনে দৌড়ানোর পর, হালকা অন্ধকারে কালো গরুটা মিলিয়ে গেল। আর বৃথা না দৌড়ে বাড়িতে ফিরলাম গরু ছাড়াই। বাড়িতে এসে ঘটনা বলার পরই সবাই অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন।
একদিন পরই ঈদুল আজহা। দিতে হবে কোরবানি, এখন কী হবে! আমার ছোট মনেও রাজ্যের হতাশা ভর করল। চিন্তা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল। মা বিছানা থেকে টেনে নিয়ে বাইরে দাঁড় করালেন আমাকে। চোখ কচলে সামনে দেখি একজন উঠানে দাঁড়িয়ে। তার হতে গরুর দড়ি। আরে, তিনিই তো গরুর মালিক। গতকাল বাজারে দেখেছি। কালো গরুটা হাতে নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু জিজ্ঞেস না করেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম আমি।
এরপর অনেকবারই হাটে গিয়েছি, কিন্তু গরুর দড়ি ধরার আর সাহস হয়নি।