একবার গালভরা ডাকে
কবি কামিনী রায় তাঁর কবিতায় মায়ের বন্দনা করে বলেছেন, ‘জড়ায়ে মায়ের গাল শিশু কহে আসি/ মা তোমারে কত ভালবাসি/ কত ভালবাস ধন? জননী শুধায়/ ‘এত বলি দুই হাত প্রসারি দেখায়।’/ তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?/ মা বলেন, ‘মাপ তার আমি নাহি জানি’। যতখানি ধরে তোমার মায়ের বুকে।’ অতুল প্রসাদ সেন বলেছেন, ‘একবার গালভরা মা ডাকে/ মা বলে ডাক মাকে।’ কবি-সাহিত্যিকেরা এভাবেই যুগে যুগে মাকে অর্ঘ্য নিবেদন করেছেন।
জীবনের চরম সংকটে পরম আশ্রয়স্থল মমতাময়ী মা। সুন্দর এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ চিনিয়েছেন, দেখিয়েছেন মা। যে মায়ের জন্য আজ আমার আমিকে চিনি, সেই মাকে ভালোবাসার জন্য দিন-ক্ষণের দরকার হয় না।
তবু আজ বিশ্ব মা দিবসে গভীর আবেগে-ভালোবাসায়-মমতায় মায়ের জন্য আমার ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলি।
প্রতিটি দিনই মাকে ভালোবাসার দিন। তবু একটি বিশেষ দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় মায়ের ত্যাগের কথা, মর্যাদার কথা। শিশুকালে জীবনের সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তে মায়ের অবদানের কথা। রোগশয্যায় মায়ের বিনিদ্র রাত জেগে সন্তানের সুস্থতা কামনা করে সেবা করার কথা। বিনিময়ে মা সন্তানের আদরমাখা ‘মা’ ডাকটুকু ছাড়া আর কিছুই প্রত্যাশা করেন না।
আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি অথবা হতে আশা করি, তার সবকিছুর জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।’
সময় বদলে যাচ্ছে দ্রুত। মায়ের জায়গা ঘরে হচ্ছে না, হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। এমন দ্রুতলয়ে বদলে যাওয়া সময়ে বিশ্ব মা দিবসের গুরুত্ব অনেক। এই একটি দিনে ছেলেমেয়েরা মাকে স্মরণ করে। অন্তত আর পাঁচটা দিন থেকে একটু আলাদাভাবে মাকে মনে করে, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ফোন করে মা পেয়ে যান তাঁর শ্রেষ্ঠ উপহারটি। এই সামান্য একটু উপহার হিরে, মানিক, টাকাপয়সা নয়, শুধু একটি সম্বোধন। জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাকে অর্ঘ্য দিতে পারার মধ্যেই সন্তানের জন্মের সার্থকতা। প্রতিদিন না পারি, অন্তত এই একটি দিন আমরা মাকে বলি, ‘এত্ত ভালোবাসি মা তোমায়।’