এ কেমন মামা!
কথায় আছে, মামা–ভাগনে যেখানে আপদ নেই সেখানে। তবে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী নতুন বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিমের ক্ষেত্রে তার উল্টোটাই ঘটেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি মো. সেলিমের সাড়ে ১১ লাখ টাকা ছিনতাই করেন তাঁর মামার ভাড়াটে লোকজন। এ ঘটনার পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সেলিমের মামা ও অপর একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর এই তথ্য বেরিয়ে আসে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের শিকার মো. সেলিম বোয়ালখালী নতুন বাজারের সম্পন্ন মুদি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাঁর মামার নামও মো. সেলিম। তিনি বোয়ালখালী বাজারে মুরগির ব্যবসা করেন।
ছিনতাইয়ের ঘটনার পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি মামা মো. সেলিম ও রনেল চাকমা নামের অপর একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অন্য একজন বাবু ধন চাকমা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে একজন অজ্ঞাতনামাসহ চারজনকে আসামি করে দীঘিনালা থানায় ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ভাগনে মো. সেলিম মামলা করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি মামা মো. সেলিম খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত প্রধান বিচারিক হাকিম রোকেয়া আক্তারের আদালতে ছিনতাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীঘিনালা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. সেলিম ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি ভাগনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে এই কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
এদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মো. সেলিমের ৫ ফেব্রুয়ারি দীঘিনালা থানায় প্রথম আলোর কাছেও ছিনতাইয়ের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়জুল করিমের কক্ষে মো. সেলিম বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছি। আমার ভাগনে সেলিমের সঙ্গে চাল কেনা নিয়ে একটু ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। এ জন্য এভাবে তাঁকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।’
তবে তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া রনেল চাকমা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে সেলিম আমার কাছে গিয়ে তাঁর ভাগনের টাকা ছিনতাইয়ের প্রস্তাব দেন। আমি এ কাজ সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিই। ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আমার বাড়িতে সেলিম আর বাবু ধন চাকমা আসেন। তাঁরা দুজন কী পরামর্শ করেছেন আমি জানি না। তবে সেটা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল বলে আমার ধারণা।’
ঘটনার শিকার উপজেলার বোয়ালখালী নতুন বাজারের পাইকারি মুদি ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, ‘৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার সময় বোয়ালখালী নতুন বাজারের নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা নিয়ে জেলা শহরের উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হই। মোটরসাইকেলটি দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি শহরের ভৈরফা অটলটিলা এলাকায় পৌঁছালে তিন যুবক অস্ত্র ঠেকিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। তাঁরা আমাকে ও মোটরসাইকেলচালক মো. আলমকে সেগুনবাগানে নিয়ে যান। এ সময় আমাদের মারধর করে সঙ্গে থাকা সাড়ে ১১ লাখ টাকা, মুঠোফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার মামা মো. সেলিমের সঙ্গে টাকা লেনদেন ও মোটরসাইকেল নিয়ে আমার কথা-কাটাকাটি হয়। তখন তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। রোববার সকালে আমি টাকা নিয়ে বের হওয়ার আগে আমার মামাসহ আরও একজন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঘোরাঘুরি করছিলেন। টাকা ছিনতাইয়ের পর আমি থানায় অভিযোগ করি ও আমার সন্দেহের বিষয়টি পুলিশকে জানাই।’
মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ছিনতাই ঘটনার পর সন্দেহবশত মো. সেলিমকে থানায় আনা হয়। এ সময় বাবু ধন চাকমা নামের এক যুবকের মুঠোফোন থেকে বারবার সেলিমের মুঠোফোনে কল এলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি তখন বাবু ধন চাকমার মাধ্যমে ভাগনে সেলিমের টাকা ছিনতাই করানোর কথা স্বীকার করেন। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রনেল চাকমাকেও (৩৫) আটক হয়।’
এ ব্যাপারে দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, মো. সেলিম তাঁর ভাগনের টাকা ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনাতেই সাড়ে ১১ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত অন্য আসামি বাবু ধন চাকমাকে গ্রেপ্তার ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।