ঐতিহ্যে উজ্জ্বল উত্তরের দিনাজপুর সরকারি কলেজ

দিনাজপুর সরকারি কলেজ
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শহরের প্রবেশমুখেই হালকা সবুজ আর খয়েরি রঙা ফটকটা চোখে পড়ে। ওপরে বড় করে লেখা—দিনাজপুর সরকারি কলেজ। এ এলাকার প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন কারণে কলেজের নাম ও স্থান বদলে শেষে পুনর্ভবা নদীর পূর্ব তীরে থিতু হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী কলেজের বয়স প্রায় ৭৯ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে কলেজটি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ বৃহত্তর দিনাজপুরের শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক শওকত আলী, লেখক–সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ এস এ বারী এই কলেজ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।

চারবার পাল্টেছে নাম, তিনবার ধাম

১৯৪১ সালের কথা। কলকাতার স্বনামধন্য রিপন কলেজের অধ্যক্ষ তখন দিনাজপুরেরই সন্তান রবীন্দ্রনারায়ণ ঘোষ। একবার ছুটিতে বাড়িতে এলে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে নিজ জেলায় রিপন কলেজের শাখা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। শহরের বালুবাড়ি এলাকায় মহারাজা গিরিজানাথ হাইস্কুলে শুরু হয় কার্যক্রম। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন অমরেন্দ্রকুমার ঠাকুর ও কে সি ব্যানার্জি।

দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে শাখা রিপন কলেজের নাম বদলে রাখা হয় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। কলকাতার রিপন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, তাঁর নামেই নাম। ১৯৫৩ সালে শহরের নিমনগর এলাকায় কলেজটি পায় নিজস্ব ভবন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত করা হয় তখনই। সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন দর্শনবিদ্যার অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব (জি সি দেব)।

১৯৬৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের যাবতীয় আসবাব, নথি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে দিনাজপুর ডিগ্রি কলেজ। ১৯৬৮ সালে ডিগ্রি কলেজের নতুন নাম হয় দিনাজপুর সরকারি কলেজ। অধ্যক্ষের আসন গ্রহণ করেন মুহম্মদ খোদা বখশ।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সুইহারিতে মূল কলেজ ক্যাম্পাস, মুন্সিপাড়ায় বাংলা স্কুলসংলগ্ন মুসলিম হোস্টেল উচ্চমাধ্যমিক শাখার ক্যাম্পাস এবং নিমনগর এলাকায় অধ্যক্ষের বাসভবন।

কী আছে, কী নেই

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা অনুষদে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে নিয়মিত পাঠদান চলছে। এখন শিক্ষার্থীসংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি। শিক্ষক আছেন ১১৪ জন। ১৫টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে। আছে বিশাল খেলার মাঠ, ২৫ হাজার বইয়ের গ্রন্থাগার, ক্যানটিন, বিজ্ঞান পরীক্ষাগার, মিলনায়তন। ছাত্রীদের জন্য তিনটি এবং ছাত্রদের জন্য তিনটি আবাসিক হল আছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা কম থাকায় পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েছেন বেশি। ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা নেই। আছে ক্লাসরুম ও সেমিনারকক্ষের সংকট। নেই গবেষণার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

অন্যান্য কার্যক্রম

কলাভবনের সামনে বটগাছের গোড়ায় বিশাল বেদি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এখানেই। শিক্ষার্থীদের নাট্য সংগঠন ‘পথিকৃৎ’ একসময় নিয়মিত মহড়া ও মঞ্চনাটক করত। এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। অন্যান্য সহশিক্ষামূলক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, রোভার স্কাউট গ্রুপ, বিজ্ঞান ক্লাব, ইংরেজি ক্লাব ও ডিবেট সোসাইটি। এ ছাড়া কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপভিত্তিক সংগঠন আছে, যারা বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন করে।