ওজন কমাতে কার্ডিও করুন, ফিগারের জন্য রেজিস্ট্যান্স
![শরীর ও মনকে ঝরঝরে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞগণ। কৃতজ্ঞতা: কমব্যাট জিম। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F05%2F12%2Fae522f63897f9e3a7ca5e98ad6ca47e4-5af699642ad3f.jpg?auto=format%2Ccompress)
‘আমি মনে হয় বাতাস খেলেও মোটা হই।’ স্থূলকায় মানুষদের অনেকেই হরহামেশা এই ধরনের অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু আসলেই কি বাতাস খেয়ে কারও ওজন বাড়ে? কখনো সম্ভব? বিজ্ঞান বলে এটি অসম্ভব। অতিরিক্ত ওজনের মানুষ মনের দুঃখে এসব কথার কথা বলে থাকেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও যখন ওজন মাপার যন্ত্র খুশি করতে পারে না, তখন দুঃখ হতেই পারে। অনেক সময় পরিমিত খাবার গ্রহণ করলেও কায়িক পরিশ্রমের অভাবে মেদ পোড়ে না। অর্থাৎ চর্বি না পুড়ে শরীরে জমতে থাকে। জমতে জমতে আপনার শরীরেই একসময় সে বানিয়ে ফেলে বিশাল বসত। ফলে শরীর হয়ে ওঠে স্থূলকায়। সহজ কথায় মোটা।
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই অনেক ধরনের ডায়েট করেন। পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়ে ডায়েট করলে অনেক সময় বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। আবার ডায়েটের বেশি কড়াকড়িতে অসুস্থও হয়ে পড়ার নজিরও কম নয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওজন কমাতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি শরীরচর্চার অভ্যাসও গড়ে তোলা প্রয়োজন। শরীরের বাড়তি মেদ ঝরানোর জন্য কার্ডিও, অ্যারোবিক ও রেজিস্ট্যান্স বেশ জনপ্রিয় পদ্ধতি। এগুলো হচ্ছে শরীরচর্চার একেকটি ধরন। তবে করার আগে কোনটির কী কাজ, সেটা আগে জানা দরকার।
![হাঁটা ও দৌড়ানো কার্ডিও ভাসকুলার অ্যাকটিভিটির আওতায় পড়ে। ছবি: প্রথম আলো](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F05%2F12%2Fe3f528b4b0a3c329b03aae79fec49055-5af69963ef2c8.jpg?auto=format%2Ccompress)
কার্ডিও ভাসকুলার অ্যাকটিভিটিগুলো আসলে কী?
ঢাকার কমব্যাট জিমের নারী শাখার স্বত্বাধিকারী ও পরামর্শক শামীমা আক্তার বলেন, কার্ডিও ভাসকুলার অ্যাকটিভিকেই সংক্ষেপে বলা হয় কার্ডিও। এটি হৃৎকম্পন বাড়িয়ে শরীরের রক্ত চলাচলও বৃদ্ধি করে। মেটাবোলিজম বা বিপাক বৃদ্ধি করে এই ধরনের শরীরচর্চা। মেদ কমাতেও কার্ডিওর জুড়ি নেই।
নিয়মিত দৌড়ানো, হাঁটা, সাঁতার, সাইকেল চালানো, ব্যাডমিন্টন খেলা কার্ডিওর আওতায় পড়ে। এসব কাজ হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এবং হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, ফুসফুস থেকে শুরু করে শরীরের সব অঙ্গে রক্ত ও অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ জন্যই দৌড়, সাঁতার বা এই ধরনের কাজের পর শরীর থেকে অনেক ঘাম ঝরলেও নিজেকে বেশ ফুরফুরে ও হালকা মনে হয়। খেলাধুলার পর ক্ষণিক বিশ্রাম নিয়ে কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেখবেন দ্রুত মন বসছে। এ জন্য শুধু মেদ কমানোর উদ্দেশ্যে নয়, শরীর ও মন ঝরঝরে রাখতেও নিয়মিত শরীরচর্চা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
কার্ডিও আর অ্যারোবিক কি আলাদা?
![সুন্দর শারীরিক গঠন পেতে চাইলে কার্ডিও ও রিজিস্ট্যান্স দুটোই প্রয়োজন। কৃতজ্ঞতা: কমব্যাট জিম। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F05%2F12%2F8beafa2fbd41b48c417bd70a3016e175-5af69963f2146.jpg?auto=format%2Ccompress)
কার্ডিওর একটি অংশ হলো অ্যারোবিক। কার্ডিওর মতোই এটি হৃৎস্পন্দন ও শরীরের পেশিতে অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে। শ্বাসক্রিয়া বাড়াতেও সাহায্য করে। সংগীতের তালে তালে নাচও যে একধরনের শরীরচর্চা, সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। এটিও অ্যারোবিকের মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া যেকোনো কার্ডিও মেশিনে শরীরচর্চা, হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার, কিক বক্সিং ইত্যাদি অ্যারোবিকের অন্তর্ভুক্ত। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অ্যারোবিক খুব উপকারী। শামীমা আক্তার বলেন, অ্যারোবিক শরীরচর্চা ফিটনেসের জন্য কার্যকরী। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশের ফলে এই ধরনের শরীরচর্চায় কাজের মনোবল বাড়ে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্টের নানা রোগ, হাড় ক্ষয় হওয়া ও মানসিক অবসাদ প্রতিরোধ করে অ্যারোবিক।
রেজিস্ট্যান্স কী?
ওজন নিয়ে যে শরীরচর্চাগুলো করা হয়, সেগুলোকে বলে রেজিস্ট্যান্স প্রশিক্ষণ। একধরনের রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড আছে, যার সাহায্যে এই ট্রেনিং নিলে মনে হবে কোনো ভারী জিনিস বহন করছেন। পেশিশক্তি বাড়িয়ে এর আকৃতিও সুন্দর করে রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং। এটি চর্চা করলে হাড় মজবুত হয়। সঠিক পদ্ধতিতে এ ব্যায়াম করলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়া বিপাক হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
ওজন কমানোর জন্য কার্ডিও সেরা
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি ১১৯ জন অতিরিক্ত ওজনের মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সেই ১১৯ জনকে তিনটি দলে ভাগ করে দীর্ঘ আট মাস পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের মধ্যে একটি দল ওজন কমানোর জন্য অ্যারোবিক শরীরচর্চা করে, আরেকটি দল নেয় রেজিস্ট্যান্স প্রশিক্ষণ। আর তৃতীয় দল এই দুটিই একসঙ্গে চর্চা করেন।
গবেষণা শেষে দেখা গেল, যাঁরা কার্ডিও বা অ্যারোবিক শরীরচর্চা করেছেন, তাঁদের ওজন কমেছে চার কেজি। আর রেজিস্ট্যান্স দলের উল্টো দুই কেজি ওজন বেড়েছে। কারণ, রেজিস্ট্যান্স প্রশিক্ষণের ফলে পেশি বেড়ে যায়। আর এমন পেশি শরীরের চর্বির থেকেও বেশি ওজনদার। তাই ওজন কমানোর নিয়তে জিমে প্রতি সপ্তাহে ৪৭ মিনিট বেশি শরীরচর্চা করলেও ওই দলের সদস্যদের একটুও ওজন কমেনি, বরং পেশির কারণে ওজন আরও বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ওজন কমানোর জন্য তাই কার্ডিও সেরা পদ্ধতি।
![এই ধরণের ব্যান্ড দিয়ে রিজিস্টেন্স ট্রেনিং করা যায়। কৃতজ্ঞতা: কমব্যাট জিম। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F05%2F12%2Fdfceaa69b1a6197ac158ffdb5a33f64d-5af69963ec050.jpg?auto=format%2Ccompress)
সুন্দর শারীরিক আকৃতির জন্য কোন শরীরচর্চা?
কোন ধরনের শরীরচর্চা করবেন, এটা জানতে হলে আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে আপনি কী চান? আপনার লক্ষ্য কি ওজন কমানো? শরীরের বাড়তি মেদ ঝরানো নাকি পেশিবহুল শরীর তৈরি? উদ্দেশ্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট ‘ওয়ার্ক আউট’ বেছে নিতে হবে। এ জন্য অভিজ্ঞ শরীরচর্চা প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। গবেষকদের মতে, সুন্দর দৈহিক গঠন পেতে চাইলে কার্ডিও ও রেজিস্ট্যান্স দুটোই প্রয়োজন। মেদ ঝরাতে চাইলে রোজ অন্তত আধা ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট কার্ডিও শরীরচর্চা করতে পারেন। যেকোনো একটি কাজ বা কয়েকটি কাজ মিলিয়ে করতে পারেন।
ধরুন, সকালে ২০ মিনিট দৌড়ালেন। সন্ধ্যায় কাজের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট সাঁতার কাটলেন। আপনার পক্ষে যেটি সহজ ও আরামদায়ক হয়, সেভাবে সাজিয়ে নিন শরীরচর্চার রুটিন। কার্ডিও যেমন আপনার ওজন কমাবে, তেমনি রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজের পেশিগুলোকে সুন্দর আকৃতিতে নিয়ে গেলেই আদর্শ দৈহিক গঠন পাবেন।
তবে মনে রাখতে হবে, কোনো কাজেই তাড়াহুড়া ভালো নয়। ভালো ফল পেতে চাইলে ধৈর্য ধরুন। ওজন কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে প্রথম দিনেই যদি ৪০ মিনিট শরীরচর্চা করে বসেন, তাহলে ফল কিন্তু হবে উল্টো। এই জন্য প্রথম কয়েক দিন ১০ মিনিট, এরপর ২০ মিনিট এভাবে আস্তে আস্তে শরীরচর্চার সময় বাড়ান। প্রশিক্ষক শামীমা আক্তারের পরামর্শ, নিজের সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে শরীরচর্চা করতে হবে।
হার্টের রোগীদের যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে না বেরিয়ে বিকেলে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে শরীরচর্চা করার আগেই চিকিৎসক ও প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।