কন্টাক্ট লেন্স: ঝুঁকি ও সাবধানতা

গবেষণায় দেখা গেছে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের চোখে সংক্রমণের প্রধান কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চলা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান/অ্যালামি
গবেষণায় দেখা গেছে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের চোখে সংক্রমণের প্রধান কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চলা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান/অ্যালামি

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সমস্যা লেন্সের নয়, বরং যাঁরা এই লেন্স ব্যবহার করেন তাঁদের নিজেদের! চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ এবং লেন্স ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ঠিকঠাক না মানার কারণেই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন মানুষজন। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক সাম্প্রতিক গবেষণায়ও এমন তথ্যই উঠে এসেছে। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী সবাই কি ঝুঁকিতে আছেন? দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের নানা ঝুঁকি এবং সেসব প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সাবধানতা।

ঝুঁকি ও সমস্যা
চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি সংক্রমণ। আর চোখে সংক্রমণের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো কেরাটিটিস। ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণুর কারণে এই সংক্রমণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ মানেন না বলেই এমন সংক্রমণের শিকার হন বেশির ভাগই। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫ ভাগ ব্যবহারকারীই লেন্স খোলা বা পরার আগে হাত ধুয়ে নেন না। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, মাসে লেন্স ব্যবহারের সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে এক থেকে দেড়গুণ বেশি সময় লেন্স পরে থাকেন অনেকেই। এ ছাড়া, স্বল্প মেয়াদে (দুই সপ্তাহ) ব্যবহারযোগ্য লেন্স দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি সময় ধরে ব্যবহার করেন অনেকেই।

ভুলে গেলে চলবে না যে, কন্টাক্ট লেন্স একটা স্পর্শকাতর ‘মেডিকেল ডিভাইস’। স্টেরিলাইজ করা ছোট্ট পাত্রে বিশেষ তরলের মধ্যে রাখা এই লেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে নিজেই দূষিত হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের আঙ্গিলা রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন অ্যান্ড আই রিসার্চ ইউনিটের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক রজার বাকলি বলেন, সংক্রমণের সবচেয়ে বড় কারণ রাতে কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমাতে যাওয়া। কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমালে কর্নিয়ায় সংক্রমণ ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। লেন্স পরা অবস্থায় চোখের পাতা বন্ধ থাকায় কর্নিয়া অক্সিজেন সংকটে পড়ে। এ কারণে জীবাণু মোকাবিলায় দুর্বল হয়ে পড়ে চোখ।

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে করণীয়

১. সব সময়ই লেন্স পরা এবং খোলার আগে অবশ্যই হাত ভালো করে সাবান বা কোনো জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধোয়ার পর হাত শুকিয়ে নিয়ে শুকনো হাতেই লেন্স পরতে বা খুলতে হবে।

২. কন্টাক্ট লেন্স কখনোই গোসলের পানি বা অন্য কোনো পানিতে ভেজানো ঠিক না। কারণ পানিটা নিজেই সংক্রমিত হয়ে অতি ক্ষুদ্র জীবাণু লেন্সে লেগে থেকে কর্নিয়ার আলসার সৃষ্টি করতে পারে।

৩. গোসল বা সাঁতারের আগে লেন্স খুলে নিতে হবে। এমনকি পানি রোধক ‘ওয়াটার-টাইট গগল্স’ চোখে পরার আগেও লেন্স খুলে নিতে হবে।

৪. ভুলেও কন্টাক্ট লেন্স থুতুতে ভিজিয়ে রাখা যাবে না বা থুতুর সংস্পর্শে আনা যাবে না। কেননা মুখের ভেতর এবং থুতুতে বহু ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ার অনেকগুলোই আমাদের পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও চোখের জন্য নয়।

৫. চোখে আইলাইনার বা মাশকারা ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই আগে লেন্স পরে নিয়ে তারপর চোখের মেকআপ করতে হবে।

৬. আপনার চোখ যদি লালচে হয়ে ওঠে, চোখ যদি জ্বালা-পোড়া করতে থাকে, তাহলে দেরি না করে লেন্স খুলে নিন। চোখের চিকিৎ​সকের কাছে যান। আর সব সময়ই লেন্সের বিকল্প হিসেবে আপনার সঙ্গেই চশমা রাখুন।

৭. অনলাইনে কন্টাক্ট লেন্স কেনার সুযোগ বেড়েছে। কিন্তু সাবধান। চোখের চিকিৎসকের পরামর্শপত্র অনুযায়ী আপনার জন্য উপযোগী লেন্সের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই লেন্স কিনুন।