কপি করাই কামরুলের নেশা

আঁকা: শিখা
আঁকা: শিখা

​িবতর্ক, গান, গল্প, অভিনয়...কী জানেন না তিনি! কামরুল ভাই, একনামে যাঁকে সবাই চেনে। তাঁকে ছাড়া ক্যাম্পাস একটা দিনও কল্পনা করা যায় না। এই কামরুল ক্যাম্পাসে আছেন দশ বছর ধরে। না, এটুকু পড়েই তাকে ‘আদুভাই’ গোত্রের কেউ ভাববেন না! ‘ক্যাম্পাসে আছেন’ তিনি অন্য কারণে। একমাত্র ফটোকপির দোকানটির মালিক যে তিনিই। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অলসভাবে! পেশায় ফটোকপি দোকানের মালিক হলে কী হবে, তাঁর গানের গলা ভীষণ ভয়ংকর! ফটোকপি করার মাঝেই কখনো গুনগুনিয়ে, কখনোবা হেঁড়ে গলায় গেয়ে ওঠেন, ‘ও মোর বানিয়া বন্ধু রে...’! দোকানে শিক্ষার্থীরা আছে কি নেই, তা যেন তাঁর চিন্তার বিষয় নয়। তিনি সংগীত সাধনা করেন, সংগীত তাঁর কাছে অক্সিজেনসম। স্বাধীনচেতা তরুণদের উজ্জ্বল প্রতিনিধি তিনি।
শোনা যায়, ক্যাম্পাসে একটি কচ্ছপ এনেছিল জনৈক শিক্ষার্থী। তার থেকেও ততোধিক ধীরগতির কামরুলকে দেখে প্রাণীটি অচিরেই অ্যাকোরিয়াম থেকে পালিয়ে গেছে! এ বিষয়ে কামরুল বলেন, ‘কেউ হয়তো জরুরি প্রয়োজনে এক পাতা ফটোকপি করতে এসেছেন, আমি কিন্তু সেটা বিদ্যুৎগতিতে ফটোকপি মেশিনে ঢুকিয়ে ফেলি। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সময় অপচয় আমার মোটেও পছন্দ নয়। তবে ছাত্রদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণের দায়িত্ব আমার ওপরেও বর্তায়।’

হ্যাঁ, এখানেই কামরুল অনন্য। ফটোকপি হতে হতে তিনি শিক্ষার্থীদের শোনান অজানা সব গল্প। শুরুটা হয় এভাবে, ‘আরে ভাই, এত তাড়া কিসের, তারপর শোনেন না কী হইল..’। ধৈর্যের চরম পরীক্ষা যখন শেষ হয় না, একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দাঁতে দাঁত চেপেও সহ্য করতে পারে না, তখনই হয়তো হাতে এসে পৌঁছায় বহু আকাঙ্ক্ষিত কপিটি। তবে এসবই সহ্য করতে হয় বিনা প্রতিবাদে। কারণ, ক্যাম্পাসে আর কোনো ফটোকপির দোকান নেই।

ফটোকপি শেষ হলে শুরু হয় কামরুল ভাইয়ের অভিনয়-প্রতিভা। দশ টাকার নোট ক্যাশবাক্সে রেখে একটু পরই দেখা দেয় তাঁর শর্ট টাইম মেমোরি লস রোগ। একে রোগ না বলে মধুর সমস্যাও বলা যায়। তাই টাকা পরিশোধের কথা বললেই কামরুল বলে ওঠেন, ‘আপনি টাকা দিছেন! বলেন কী...?’ বলেই আকাশ থেকে পড়েন তিনি। এটাও তাঁর প্রতিভার অন্যতম স্বাক্ষর। আর এরপরই কামরুলের সুপ্ত বিতার্কিক প্রতিভা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ‘কখন দিলেন টাকা, আপনিই বলেন, কখন দিলেন?’ কামরুলের তর্ক আর অভিনয়-প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো টাকা না দিয়েই ক্লাসে দৌড় দিতে বাধ্য হয়।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কামরুলের কাছে জানতে চাই, ‘ফটোকপির দোকানের মালিক হলেন কীভাবে?’ উত্তরে তিনি ফিরে যান সুদূর বিষেখালি গ্রামের কুমারডাঙ্গা স্কুলে। বলেন, ‘গ্রামের স্কুল। পরীক্ষায় পারতাম না কিছুই। তাই পরীক্ষায় বন্ধু মতিনের খাতা কপি করতাম। সেই থেকে কপি করতে এত ভালো লাগত যে বড় হয়ে ফটোকপির দোকানই দিয়ে ফেললাম।’ বলেই হা হা হা করে হেসে ওঠেন সদা হাস্যোজ্জ্বল কামরুল। ফেসবুকে তাঁর একটা আইডি আছে। মাঝেমধ্যে সেখানে তিনি দেশ, জাতি, অর্থনীতি, জীবন ও দর্শন নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসগুলো কারও না কারও থেকে কপি করা। সহ্য না হলেও কেউ তাঁকে কিছু বলে না। কী বলবে? কপি করা যে কামরুলের কেবল নেশা নয়, পেশাও! 

.
.

সফল ড্রপআউট
বোকাবুরা বলের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়, ২০১৬ সালের ২৮ মে। জন্মের পরপরই তিনি ভর্তি হন মেলবোর্ন ক্রিকেট একাডেমিতে। তবে মাঠের গৎ​বাঁধা নিয়মকানুন তঁার কখনোই ভালো লাগেনি। তাঁর দুচোখজুড়ে স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ে বেড়ানোর। সুযোগ পেলেই ক্লাস ফাঁকি দেওয়া এই বল এখন আকাশছোঁয়া অনেক ছক্কার গর্বিত মালিক! তাঁর ভাষায়, ‘সাফল্যের সূত্র একটাই—ড্রপ আউট!’ হ্যাঁ, বোকাবুরা প্রতিনিয়ত বাউন্ডারি লাইনের ওপারে ড্রপ আউট হচ্ছেন, আর তাঁর ঝুলিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ছক্কার সংখ্যা!