
রাজার বিয়ের জন্য সুন্দরী কন্যার খোঁজে রাজ্য চষে বেড়ায় ঘটক। অবশেষে দেখা মেলে কমলা সুন্দরীর। এরপর ধুমধামে বিয়ে হয়। রানিকে নিয়ে নিজ রাজ্যে ফেরার পথে রাজা দেখেন এক মাঠে চলছে ব্যবসায়ীদের দুতক্রীড়া (ছক্কা খেলা)। তা দেখে রাজা রানির সঙ্গে দুতক্রীড়া খেলার ইচ্ছা পোষণ করে। কমলা সুন্দরী রাজাকে বলে, খেলায় তার সঙ্গে রাজা পারবে না। রাজাও নাছোড়। রাজা বলে, যদি রানি খেলায় জেতে তবে রানির নামে একটি দিঘি কেটে দেবে আর যদি রানি হেরে যায় তাহলে তাকে ১২ বছরের বনবাসে যেতে হবে। এভাবে এগিয়ে চলে ঘটনা প্রবাহ।
৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগের জিয়া হায়দার মঞ্চে পরিবেশিত হয় ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে নেওয়া ‘কমলা রানির সাগরদিঘির পালা’। পালাটি পরিবেশন করেন নেত্রকোনার মিলন বয়াতি ও তাঁর দল।
সৃষ্টিকর্তার বন্দনা দিয়ে শুরু হয় পালা। পালার একপর্যায়ে দুতক্রীড়া (ছক্কা) খেলা শুরু করার আগে কমলা রানি জানায় তার নামে দিঘি কাটার প্রয়োজন নেই এমনিতেই খেলা হতে পারে। কিন্তু রাজা সিদ্ধান্তে অটল। অবশেষে খেলা হয়, জেতে রানি। কমলা রানির নিষেধ অমান্য করে রাজা দিঘি কাটতে রওনা হন। এর মধ্যে রানি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এক রাতে কমলা রানি স্বপ্নে দেখল দিঘি থেকে পানি উঠবে না যদি না সে দিঘিতে যায়। আর দিঘিতে নামলে সে আর উঠতে পারবে না। তখন তার শিশুর কি হবে এই ভেবে কাঁদতে লাগল। এদিকে দিনের পর দিন চলে দিঘি কাটা। মাটি কাটতে কাটতে ক্লান্ত শ্রমিকেরা। কিন্তু দিঘি থেকে পানি ওঠে না। একদিন রাজা স্বপ্নে দেখল কমলা যদি দিঘিতে নেমে এক কলসি পানি মাথায় ঢালে আর পানি চুল বেয়ে দিঘিতে পরে তবে পানি উঠবে। এই স্বপ্ন দেখার পর রাজা ছুটে গেল রানির কাছে। এ সময় রানির প্রসব বেদনা উঠল পরে তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। রাজা এসে সন্তান হয়েছে দেখে হলো খুশি। আর তখনই রানিকে জানাল স্বপ্নের কথা। রাজার অনুরোধে রানি চলল দিঘির পারে। রানি জানত এই যাওয়া শেষ যাওয়া। অতঃপর রানি দিঘিতে নামল। শেষ বারের মতো দেখল ছেলে আর স্বামীর দিকে। আস্তে আস্তে মাথায় পানি ঢালল, চুল বেয়ে পানি পড়ল দিঘিতে। সঙ্গে সঙ্গে পাতাল ফুঁড়ে উঠতে লাগল পানি...
গীতবাদ্য ও নৃত্য সহযোগে পরিবেশিত হয় পালা। মিলন বয়াতিকে দেখা গেছে কখনো পুরুষ, কখনো নারী চরিত্রে। সংলাপে ঠাসা বুনন, সাবলীল অভিনয়ে দেড় ঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন দর্শকদের।
পালা শুরুর আগে অতিথি শিল্পীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি অসীম দাশ। অতিথি ছিলেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন সেকান্দর চৌধুরী, অধ্যাপক কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ, সংগীত বিভাগের সভাপতি সৌরেন নাথ বিশ্বাস ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক শিরীন আখতার।