কান্না

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার জানালার পাশে একটা কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। খুব মিহি কণ্ঠ। প্রথমে মনে হলো, হয়তো এটা কোনো স্বপ্ন। কিন্তু নাহ্, কান্নার শব্দটা খুব স্পষ্টভাবে কানে এসে লাগছে। ইদানীং বিদ্যুৎ খুব জ্বালাতন করে, তাই জানালাটা বন্ধ করিনি। মনে হচ্ছে, যে কাঁদছে সে রাস্তার এমাথা-ওমাথা পায়চারি করছে আর কাঁদছে। আমি চোখ বন্ধ করে শুনে যাচ্ছি সেই অদ্ভুতুড়ে কান্না। খুব ইচ্ছে করছে জানালায় চোখ গলিয়ে দেখতে, কে এত করুণ সুরে কাঁদছে। কিন্তু চোখ খুলতে পারছি না। অনেক কষ্টে মাথার পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলাম রাত ৩টা ৪৫ মিনিট। একটু পর দেখলাম কান্নাটা থেমে গেল। কে কাঁদল এমন করে, তা-ও আবার এত রাতে, এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।
পরদিন আবার সেই কান্নার শব্দ। দরজা খুলে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম দূরে কে যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ‘কে ওখানে?’ ডাক দিলাম।
‘আমি।’
‘কাঁদছ কেন? এদিকে আসো?’
বেশ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এল। আমি বাড়িতে তেমন থাকি না, তাই মানুষজন কম চিনি। তবে এই ছেলেকে চিনেছি। আমাদের গ্রামের শেষ মাথায় ওদের বাড়ি। শুনেছি ওর নিজের মা নেই। ‘তুমি কাঁদছ কেন?’ কোনো উত্তর নেই। কান্না থামিয়েছে। তবে আমার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। মায়াভরা মুখটা বেশ শুকনা দেখাচ্ছে। ‘খিদা লেগেছে?’ আবারও চুপ ছেলেটি। ‘তুমি বিস্কুট খাবে?’ ছেলেটি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল। আমি রুমে এসে কাগজে মুড়ে কিছু বিস্কুট নিয়ে আবার ব্যালকনিতে গেলাম। ছেলেটি নেই। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না।
সকালে নাশতার টেবিলে মাকে জিজ্ঞেস করলাম সেই ছেলেটির কথা। রাতের ঘটনাও বললাম। ছেলেটির সৎমা খুব বাজে হয়তো। জানো, খুব করুণ সুরে কাঁদছিল সে। সব শুনে মা বলল, ‘এই ছেলে তো ১০ বছর আগে রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে।’
লিজা জাহান
মিঠাপুকুর, রংপুর।