কূপে কসরত

মৃত্যুকূপে চলছে গাড়ি। ছবি: লেখক
মৃত্যুকূপে চলছে গাড়ি। ছবি: লেখক

সাভারের হেমায়তপুরের এলাকাটির নাম হরিণধরা। গন্তব্যহীন ঘোরাঘুরির দিনে সেখানেই সন্ধ্যা নেমেছিল। 

তবে হরিণধরা থামিয়েছিল মাইকে ভেসে আসা আওয়াজ, ‘সার্কাস, সার্কাস...’ ।

সেই সার্কাসের সন্ধানে এগিয়ে যেতেই খোলা মতন একটি মাঠে পাওয়া গেল ছোট্ট এক চায়ের দোকান। সেখানে নীল চাদর মুড়ি দিয়ে যিনি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন, তাঁর নাম আবদুল মান্নান। কাকতালীয়ভাবে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে আসা মান্নানই সার্কাস দলটির স্বত্বাধিকারী। তিন বন্ধু মিলে দলটি গড়েছেন। দলে কাজ করেন
১১ জন।

তাঁর সঙ্গে নানা গল্পে আগ্রহ আরও বেড়ে যায় সার্কাস দেখার। চা শেষে মান্নানের সঙ্গে যাই কাঠের তৈরি বিশাল কূপের দিকে। সার্কাস বা প্রদর্শনীর এই খেলা ‘মৃত্যুকূপ’ নামে পরিচিত। এটি আসলে গাছের গুঁড়ি, কাঠের পাটাতন, বাঁশ ও লোহার আংটা দিয়ে তৈরি গোলাকার বিশেষ এক খাঁচা। এর ভেতরে কাঠের পাটাতন মাটি থেকে ২০-২৫ ফুট ওপরে উঠে গেছে। কূপের জমিন থেকে এই দেয়াল বেয়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে ওপরের দিকে উঠতে হয়।

তখন সেই কূপের ভেতর মোটরসাইকেল নিয়ে যিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কসরত দেখানোর, হাতে বাড়িয়ে নিজের নাম জানালেন আসর আলী। তিনিসহ আরও দুজন মিলে মোটরসাইকেল ও গাড়ির কসরত দেখান। সে দুজনের মধ্যে শাকিল মিয়া এলেন একটু পর। মোটর মেকানিক ছিলেন একসময়। মেকানিকের সঙ্গে তাঁর ইচ্ছা ছিল ব্যতিক্রম কিছু শেখার। সেই আগ্রহ থেকেই ধীরে ধীরে খেলাটি রপ্ত করেন শাকিল।

আবদুল মান্নান জানালেন, সাত কি আট বছর ধরেই এই খেলা দেখান তাঁরা। পুরো কূপ তৈরি করতে লাগে চার মাস। আর মেলার মাঠে বসাতে লাগে তিন দিন। ৩০ থেকে ৪০ রকম খেলা দেখিয়েছে তাঁর দল।

মোটরবাইকে আসর আলী ও শাকিল মিয়ার এমন কসরত দেখে মুগ্ধ হন দর্শকেরা।
মোটরবাইকে আসর আলী ও শাকিল মিয়ার এমন কসরত দেখে মুগ্ধ হন দর্শকেরা।

ততক্ষণে কসরত পর্ব শুরু হয়ে গেছে। ভটভট আওয়াজ তুলে মোটরসাইকেল চালু করেন আসর আলী। দর্শকেরা তুমুল করতালি দিয়ে ওঠে। গতি বাড়িয়ে কূপের ভেতর
ঘুরতে থাকেন আসর। একদৃষ্টিতে মৃত্যুকূপের ভেতর তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ দর্শকেরা। মোটরসাইকেল নিচ থেকে ওপরে উঠছে। দক্ষ চালকের হাতে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ছুটে চলছে মোটরসাইকেল। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন শাকিল মিয়া। কখনো এক হাত ছেড়ে, কখনোবা দুই হাত ছেড়ে নানাভাবে কারিকুরি দেখিয়ে চলেন আসর আলী ও শাকিল মিয়া।

একসময় মোটরসাইকেল নিয়ে কূপের নিচের দিকে নামতে  শুরু করেন তাঁরা। তখনই গাড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকেন রকি বর্মণ। গাড়ির ঘূর্ণি দেখে সোল্লাসে চেঁচিয়ে ওঠেন দর্শকেরা, তাঁদের হাততালিতে ফেটে পড়ে চারদিক।

তখনো দর্শনার্থী আসছিলেন। ভিড় বাড়ছিল ক্রমেই। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক—কে আসেননি দেখতে। তবু মাইকে বেজে চলছিল, ‘সার্কাস, সার্কাস...’ ।