কেঁচো খুঁড়তে পুরস্কার!

বাঁ থেকে সূর্য, দিশা, লেখক ও দীপ্ত
বাঁ থেকে সূর্য, দিশা, লেখক ও দীপ্ত

গত বছর ৬ ডিসেম্বরের ঘটনা। প্রায় বেশ কয়েক মাসের খাটুনির পর আমরা তখন একটা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে। সুট-কোট পরে সবাই যখন দুর্দান্ত সব প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিল, আমরা তখন একটা বালতি নিয়ে বিচারকদের সামনে হাজির হলাম। কী আছে সেই বালতিতে? কেঁচো! হ্যাঁ, ভুল পড়েননি। বালতিতে কেঁচো চাষের আইডিয়া উপস্থাপন করতেই হাজির হয়েছিলাম আমরা। এমন অদ্ভুত আইডিয়ার জন্য বন্ধুদের কেউ কেউ আমাদের ‘পচানি’ দিচ্ছিল।
প্রতিযোগিতাটির বিষয় ছিল, পৃথিবীর শরণার্থীদের জন্য ‘সামাজিক ব্যবসার’ মডেল তৈরি করা। আমাদের দলের এক সদস্য দিশাই প্রথম বুদ্ধিটা দিয়েছিল, ‘কেঁচো চাষের আইডিয়া দিলে কেমন হয়? এই চাষটা সহজ। আর কেঁচো সহজে মাছের খাদ্য হতে পারে। শরণার্থীরা চাইলেই তো এটা চাষ করতে পারে।’ আইডিয়াটা আসলেই কার্যকর কি না, সেটা পরীক্ষা করার জন্য দীর্ঘ দিন আমাদের কেঁচোর পেছনে লেগে থাকতে হয়েছে। কেঁচো চাষ করা কতটা সহজ, সেটা বোঝাতেই বালতিভর্তি কেঁচো নিয়ে আমরা হাজির হয়েছিলাম বুয়েট মিলনায়তনে।
বুয়েট ক্যাম্পাসে সারা বছরই নানা প্রতিযোগিতা লেগে থাকে। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আমাদের এই প্রতিযোগিতার নাম ছিল ‘হাল্ট প্রাইজ’। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় পর্বে অংশ নিয়েছিলাম আমরা। গতানুগতিক ধারার বাইরে একটা সৃজনশীল, ভিন্নধর্মী কিছু করে দেখাতে চেষ্টা করেছিলাম। নানা আইডিয়া ভাবতে ভাবতেই শেষে কি না কেঁচোর ভূত মাথায় চেপে বসল!
বালতিতে কেঁচো চাষ শুরু করেছিলাম এই অনুষ্ঠানের আরও সপ্তাহ তিনেক আগে থেকে। আমার সঙ্গে দলে ছিল সূর্য, দীপ্ত আর দিশা। আমরা বিভিন্ন কৃষিবিদ থেকে শুরু করে লোকাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গেও কথা বলেছি, বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এত কষ্টের পর তাই ৬ ডিসেম্বর দিনটা আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সংকোচ হচ্ছিল, বিচারকদের সামনে এতগুলো কেঁচো তুলে ধরা কি ঠিক হবে? কিন্তু বিচারকেরা আমাদের প্রকল্প দেখে খুবই খুশি হয়েছিলেন। কতটা খুশি, সেটা বোঝা গেল পুরস্কার ঘোষণার পর। দেখা গেল, বুয়েট থেকে আমরাই চ্যাম্পিয়ন! পরের ধাপে চীনে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগও হয়েছিল আমাদের।
দিন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র—সবাই আমাদের পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল।
বুয়েট ক্যাম্পাসের ঘটনাবহুল জীবনে এই দিনটাই আমার জীবনে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
লেখক: তৃতীয় বর্ষ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।