কেউ কাউকে ছাড়তে পারি না

>
মেহতাব খানম
মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

২০১৫ সালের ঘটনা। ফেসবুকে এক মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমরা ভালো বন্ধু হয়ে যাই। সে বন্ধুত্ব একটা সময় সম্পর্কে গড়ায়। দুজনের মধ্যে খুব ভালো বোঝাপড়া ছিল। আমি ওর জন্য সবকিছু ছাড়তে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু ওর পরিবার থেকে ওর বিয়ে ঠিক করা ছিল। সেটা আমরা কেউ জানতাম না। যখন জানলাম তখন মেয়েটি ওর বাবা-মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে গ্রহণ করেনি। এতে ওর বাবা-মা ওকে পড়ালেখার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর আমি ওর জীবন থেকে সরে আসতে চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না। দুজন দুজনকে এত ভালোবাসি যে কেউ কাউকে ছাড়তে পারি না। এদিকে যে ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক ছিল, সেই ছেলে ওর পড়ালেখার খরচ দিত। আর আমি ওকে ছাড়তে চাই এসব কারণে। এ ছাড়া আমার মা-বাবাও কখনো এটা মেনে নেবেন না। ওর মা-বাবা শেষবারের মতো ওর মত জানতে চেয়েছিলেন। মেয়েটা বলেছে, সারা জীবন একাই থাকবে। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। এখন আমার কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তুমি তোমার বা মেয়েটির বয়স উল্লেখ করোনি। এ ছাড়া তুমি এখন উপার্জনক্ষম হয়েছ কি না, সেটিও জানা খুব প্রয়োজন ছিল। মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় খুব বেশি দিনের না হলেও, তোমরা অল্প সময়ের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হওয়ার জন্য সম্পর্কটিকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছ। মেয়েটির অভিভাবকেরা কি অর্থনৈতিকভাবে ততটা সচ্ছল নন? ছেলেটির কাছ থেকে তাঁরা কী কারণে পড়ার খরচ নিয়েছেন, সেটি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এ ছাড়া মেয়েটিকে একেবারে না জানিয়ে তার বিয়ে কারও সঙ্গে ঠিক করে রাখার ব্যাপারটি একটি অসম্মানজনক আচরণের পর্যায়ে পড়ে। তাঁরা ওকে জন্ম দিয়েছেন ঠিকই, তবে তার জীবনটি সে যার সঙ্গে কাটাবে সে ব্যাপারে তার মতামত নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। সন্তানদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালে তারাও আন্তরিকভাবে বাবা-মাকে শুধু সম্মানই করবে না, তাঁদের প্রতি শর্তহীন ভালোবাসাও অনুভব করবে।
মা-বাবা নিজেদের স্বার্থের কথা না ভেবে যখন শর্তহীনভাবে সন্তানদের ভালোবাসবেন, তখন আর কোনো শাস্তি প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে না। মেয়েটির পড়ালেখা বন্ধ করে কিন্তু তাঁরা ওর মন জয় করতে পারবেন না। উপরন্তু মেয়েটির মধ্যে একধরনের হতাশা, কষ্ট, জেদ ও প্রতিশোধপরায়ণতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলো।
তুমিও যেহেতু মনে করছ তোমার মা-বাবাও তোমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন না, কাজেই তোমার পক্ষে খুব বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। মেয়েটিকে তুমি অনুরোধ করো, সে যেন কোনোভাবেই পড়াশোনাটা ছেড়ে না দেয়। আত্মীয়স্বজনের সহায়তা নিয়ে হলেও সে যেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সে যদি কোনোভাবে সেটি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে অনেক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মা-বাবার সঙ্গে বসে দৃঢ়তা ও বিনয় প্রকাশ করে নিজের অবস্থানটি স্পষ্ট করতে সক্ষম হবে। তার প্রতি যে মানসিক নির্যাতন হয়েছে এবং তার অধিকারও কিছুটা লঙ্ঘিত হয়েছে, সে ব্যাপারটি নিয়েও সুন্দরভাবে মা-বাবার সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর চেয়ে বেশি কিছু করা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তুমি শুধু মেয়েটিকে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য উৎসাহিত করো।