কেন ক্যালসিয়াম খাবেন?

সবার কৈশোর হোক এমন প্রাণোচ্ছল। তাই হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। মডেল: রাইয়ান  ছবি: অধুনা
সবার কৈশোর হোক এমন প্রাণোচ্ছল। তাই হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। মডেল: রাইয়ান ছবি: অধুনা

ক্যালসিয়ামের অভাবে এটা হয়-সেটা হয়, এমন কথা তো শুনে থাকেন। কিন্তু কজন সমস্যাটাকে সেভাবে গুরুত্ব দেয় বলুন তো? সমস্যাটার গুরুত্ব আক্ষরিকভাবেই হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় তখন, যখন ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। তবে একবার হাড়ক্ষয় হতে শুরু করলে তার ক্ষতি থেকে বাঁচা বেশ কঠিন। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এড়ানো প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাতু রুমানা বিনতে রহমান জানান, কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে। আর বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনমতো ক্যালসিয়ামের ওষুধ গ্রহণ করলে সুস্থ থাকা যায়।
বয়স যাঁদের একটু বেশি
ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলোয় সাধারণত মেয়েরাই বেশি ভোগে। বয়স একটু বেড়ে গেলে যখন মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, সেই সময়টায় শারীরবৃত্তীয় কিছু পরিবর্তন হয় তাদের। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ক্ষয় হতে থাকে, হাড়ে হতে থাকে ফুটো (অস্টিওপোরোসিস)। অনেকগুলো ছোট-বড় ফুটোর কারণে ধীরে ধীরে হাড় হতে থাকে দুর্বল। দুর্বল হাড় একটু আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর বয়স বাড়লে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাটাও খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। 
এসব সমস্যা এড়াতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজন ক্যালসিয়ামের ওষুধও। তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে এই বয়সে।
গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়
গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পুষ্টি উপাদানগুলোর চাহিদা এমনিতেই বেশি থাকে, এ সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদাও বাড়ে। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার তো খাবেনই, খেতে হবে ক্যালসিয়ামের ওষুধও। এ সময় মা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পেলে তাঁর সন্তানের হাড় ও দাঁতের গঠন সঠিকভাবে হয় না।
একটু সতর্কতা
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট যিনি খাচ্ছেন, তাঁকে হয়তো কোনো কারণে আয়রন ট্যাবলেটও খেতে হচ্ছে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন এ দুটি ওষুধ একই সঙ্গে খাওয়া না হয়। কেউ হয়তো দুপুরে আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, তাঁকে সকালে ও রাতে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে। এ দুটি ওষুধ একই সঙ্গে খেলে আয়রন ট্যাবলেট থেকে খানিকটা কম উপকার পাওয়া যাবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যেন অবশ্যই ভিটামিন ‘ডি’র ওষুধও খাওয়া হয়, তা না হলে ক্যালসিয়ামের থেকে উপকার পাওয়া যাবে সামান্যই। আজকাল অবশ্য ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ‘ডি’ একই সঙ্গে একই ট্যাবলেটের মধ্যে পাওয়া যায়।
অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খান। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধটি সেবন করুন নিয়মিত। তবে যাঁদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাঁরা চিকিৎসককে এই তথ্যটি দিতে ভুলবেন না যেন। কারণ, এ তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক আপনার জন্য ওষুধের মাত্রা ঠিক করে দেবেন। আপনার সমস্যাটির জন্য বাড়তি যেসব সতর্কতা প্রয়োজন, তা-ও তিনি আপনাকে বলে দেবেন।

কৈশোরেই হোক শুরু
বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
গ্রন্থনা: রাফিয়া আলম