কেন খাবেন পাটশাক?

পাটশাক
পাটশাক

গরম পড়েছে বেশ। এ সময় ঝোলে-শাকে ভাত খেতে ভালোই লাগবে। শরীরেও থাকবে স্বস্তি। বাজারে গেলেই অন্যান্য শাকের মধ্যে এখন আঁটি বাঁধা পাটশাক চোখে পড়ে। এক আঁটির দাম পড়বে ৮-১০ টাকা।

পাটের গুণ ও উপকারিতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তেতো সবজি হিসেবে তেতো পাটশাক খাবারে রুচি বাড়ায় ও মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়। খেতে বসে প্রথম ডিশ হিসেবে যদি তেতো খাওয়া হয়, তাহলে সেটা মুখে লালা ক্ষরণ করে শ্বেতসারকে ভাঙতে সাহায্য করে। এতে হজমের সুবিধা হয়। লিভারও ভালো থাকে।

মুগ ডাল দিয়ে পাটশাক খাওয়া যেতে পারে। কিংবা খাওয়া যেতে পারে পাটশাক ভাজি। তেতো পাটশাক শুকিয়ে শুক্তো করা হয়।

পাটশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালকালয়েড, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, লিপিড, কার্বহাইড্রেট এবং ফলিক অ্যাসিড আছে। দেশীয় অন্যান্য শাকের তুলনায় পাটশাকে ক্যারোটিনের পরিমাণও থাকে অনেক বেশি।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি ও পথ্যবিদ আখতারুন নাহারের তথ্য অনুযায়ী, পাটশাক তুলনামূলক সস্তা ও সহজলভ্য। ১০০ গ্রাম পাটশাকে ক্যালরি থাকে ৭৩। এতে আমিষ থাকে ৩ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ)।

জেনে নিন পাটশাকের কয়েকটি গুণের কথা:

১. পাটশাক খাওয়ার রুচি বাড়ায়। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে।
২. এতে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন থাকায় মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে।
৩. রাতকানা রোগের বিরুদ্ধে লড়ারও ক্ষমতা আছে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্যতে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত পাটশাক খেতে পারেন।
৫. যাঁদের বাতের ব্যথা আছে, তাঁদের জন্য উপকারী।
৬. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যাঁরা দীর্ঘদিন ভুগছেন, পাটশাকে সমাধান খুঁজতে পারেন।
৭. রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও পাটশাক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
৮. পাটপাতায় টিউমার ও ক্যানসাররোধক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।
৯. হাড় ভালো রাখার জন্যও খেতে পারেন।
১০. দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত পাটশাকের কয়েকটি রেসিপি:

পাটশাক
পাটশাক

কাঁঠাল বিচি ও পাটশাক ভাজা
উপকরণ: পাটশাক ২ আঁটি, পরিষ্কার করা কাঁঠালের বিচি ১০-১৫টি, নারকেল বাটা ২ টেবিল-চামচ, চিংড়ি মাছ ২ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল-চামচ, রসুন কুচি ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ (ফালি) ৪-৫টি, বোম্বাই মরিচ কুচি অর্ধেক, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: কাঁঠালের বিচি পরিষ্কার করে পাতলা করে কাটুন। পাটশাক ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কুচি করে নিন। কড়াইয়ে তেল দিন। একে একে পেঁয়াজ কুচি, নারকেল বাটা, চিংড়ি মাছ, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। কষানো হলে কাঁঠালের বিচি ও আধা কাপ পানি দিন। বিচি সেদ্ধ হলে পাটশাক, কাঁচা মরিচ ও বোম্বাই মরিচ দিয়ে নাড়ুন। সব মসলা মিশে ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

পাটশাকের ঘণ্ট
উপকরণ: পাটশাক ২ আঁটি, মসুর ডাল ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল-চামচ, কাঁচা মরিচ ৪-৫টি ফালি। রসুন কুচি ৩-৪ কোয়া, হলুদ গুঁড়া সামান্য, বোম্বাই মরিচ ১টি, লবণ, তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: পাটশাক ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। ডাল ধুয়ে ২ কাপ পানি, ১ কোয়া রসুন কুচি, কাঁচা মরিচ ফালি, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে চুলায় দিতে হবে। ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে পাটশাক দিতে হবে। পাটশাক ও ডাল সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হলে অন্য একটি কড়াইয়ে তেল, পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি দিয়ে ভাজতে হবে। ভাজা হলে পাটশাকসহ ডাল আস্তে আস্তে কড়াইয়ে ঢেলে দিতে হবে। বোম্বাই মরিচ টুকরা করে শাকে দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে নামিয়ে পরিবেশন করা যায় মজাদার পাটশাকের ঘণ্ট। (মিষ্টি অথবা তেতো পাটশাক একই পদ্ধতিতে রান্না করা যায়)