কেমিস্ট হিসেবে চাকরির হরেক সুযোগ

একজন কেমিস্টের কাজের ক্ষেত্র অনেক। প্রায় প্রতিটি সেক্টরে, হোক তা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা বিলাসদ্রব্য, সবখানেই কেমিস্টের প্রয়োজন হয়  l ছবি: এসকেএফের সৌজন্যে
একজন কেমিস্টের কাজের ক্ষেত্র অনেক। প্রায় প্রতিটি সেক্টরে, হোক তা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা বিলাসদ্রব্য, সবখানেই কেমিস্টের প্রয়োজন হয় l ছবি: এসকেএফের সৌজন্যে

বর্তমানে পেশা হিসেবে কেমিস্ট একটি স্থান করে নিয়েছে সবার কাছে। ২০১৩ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা তালিকায় দেখা যায়, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় পেশাগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে কেমিস্টের নাম। পেশা হিসেবে কেমিস্ট সম্পর্কে এসকেএফ (এসকে+এফ) বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক (কমার্শিয়াল অ্যান্ড এইচআর) মো. মোস্তফা হাসান বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই বাজারে নতুন নতুন কোম্পানি আসছে, ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সেক্টরে চাকরির সম্ভাবনাও।

কাজের ধরন
একজন কেমিস্টের কাজের ক্ষেত্র অনেক। প্রায় প্রতিটি সেক্টরে, হোক তা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা বিলাসদ্রব্য, সবখানেই কেমিস্টের প্রয়োজন। পণ্যের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায়, কীভাবে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করা যায় তার কৌশল আয়ত্ত করা, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা—এসবই একজন কেমিস্টের কাজ। এ ছাড়া স্যাম্পলিং, ম্যাটেরিয়াল অ্যানালাইসিস, কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস, কেমিক্যাল টেস্ট, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল অ্যানালাইসিস, গ্রেডিং ঠিক আছে কি না, তা মানসম্পন্ন কি না সেসবও একজন কেমিস্ট পর্যালোচনা করে থাকেন। এ ছাড়া নতুন নতুন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা ও সেগুলোকে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সেগুলোর ব্যবহার ঘটানোর প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করাও একজন কেমিস্টের কাজ। এর বাইরে ওষুধশিল্পেও কেমিস্টদের রয়েছে একটি বড় কাজের ক্ষেত্র। শুধু ওষুধ তৈরির পদ্ধতিই নয় এর প্রক্রিয়া, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মাপা এসবও কেমিস্টের কাজ।

চাকরির ক্ষেত্র
কেমিস্টের কাজের ক্ষেত্র যেমন বিশাল তেমনি এই সেক্টরে চাকরির ক্ষেত্রও ব্যাপক। বিভিন্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, সার কারখানা, পেপার মিল, সুগার মিল, গ্লাস ও সিরামিক শিল্প, পেইন্টস কারখানা, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি, কসমেটিকস কোম্পানি, সিমেন্ট কারখানা, ট্যানারি শিল্প, ওষুধ শিল্পসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই কেমিস্ট হিসেবে চাকরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে আর্মড ফোর্সেস, সরকারি হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চপদেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সিমেন্ট কোম্পানি হোলসিমের ভাইস প্রেসিডেন্ট (মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ) সৈয়দ মাসউদুল হাসান এ সম্পর্কে বলছিলেন, সিমেন্টের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিয়মিত তদারকি কাজের জন্য তাঁরা কেমিস্ট নিয়োগ করেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
মো. মোস্তফা হাসান বলেন, কেমিস্ট হিসেবে কাজ করতে হলে রসায়নবিজ্ঞান, ফলিত রসায়নবিজ্ঞান, অণুজীব বিজ্ঞান, ফার্মেসি ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হবে। এন্ট্রি লেভেলে চাকরির জন্য কমপক্ষে স্নাতক হতে হয়। কোয়ালিটি কন্ট্রোলার পদে আবেদনের জন্য কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হতে হয়। আর সেলসের জন্য ন্যূনতম স্নাতক হতে হয়। এন্ট্রি লেভেলে চাকরির আবেদনের জন্য সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে কমপক্ষে ৩ থাকতে হয়। এর বাইরে পদ ভেদে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন।

.
.

বাড়তি যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি একজন কেমিস্টকে প্রচণ্ড ধৈর্যশীল হতে হয়। যেহেতু এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ কাজই ল্যাবনির্ভর তাই তাঁকে হাতে-কলমের কাজে দক্ষ হতে হবে, বিশ্লেষণে ও আগ্রহী মনোভাব থাকতে হবে। কেমিস্টের কাজ হলো আর্টের মতো, এই আর্টকে সমৃদ্ধ করতে প্রচুর পড়াশোনার অভ্যাস থাকাটা বিশেষভাবে জরুরি বলে জানান দীর্ঘদিন কেমিস্ট হিসেবে কর্মরত এবং বর্তমানে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের সিনিয়র কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা
মো. মোস্তফা হাসান জানান, প্রাথমিক অবস্থায় একজন কেমিস্টের বেতন ধরা হয় ২০ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এরপর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যত বাড়ে পদোন্নতির সুযোগ এবং বেতনও সেই অনুযায়ী বাড়তে থাকে। কাজে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলে এ ক্ষেত্রে বেতন অনেক হয়। আর নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ কোম্পানির অন্যান্য সুযোগসুবিধাও থাকে বলেও জানান তিনি।
কোথায় পড়বেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, কুয়েটসহ প্রায় প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই রসায়নশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনারও। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও রসায়ন বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়।