
সমস্যা
আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালু করি। কিন্তু কৌশলে কিছু বন্ধু আমার আইডি হ্যাক করে। তারা আমার সম্পর্কে কুপ্রচার করে সবার কাছে, এমনকি আমার মা-বাবাও এ ঘটনা জানতে পারেন। তাঁরা আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। এখনো আমাকে সন্দেহ করেন। অথচ আমি খারাপ কিছুই করিনি। তাঁদের আচরণ আমার কাছে একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। তাঁরা হয়তো আমাকে অবিশ্বাস করেন। আমি কোনোভাবেই এ কথাটা মানতে পারছিলাম না। কারণ, আমি ও রকম ছেলে নই। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, এত হতাশা নিয়ে বাঁচার চেয়ে আত্মহত্যা করা ভালো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। সম্প্রতি আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। আমি কলেজ বাসে যাতায়াত করি। সেখানে প্রতিদিন একটা মেয়ের চোখে চোখ পড়ত আমার। এভাবে অনেক দিন যায়। পরে বুঝতে পারি, আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। মেয়েটিও জানতে পারে তাকে আমার ভালো লাগার কথা। তাকে প্রায় চিরকুট দিতাম। কিন্তু কথা বলার সাহস পেতাম না।
সে বলল, আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারবে না। তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু সে আমার সঙ্গে কথা বলে না। আমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সামনে দুজনেরই পরীক্ষা। আমি শুধু তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছি, এর বেশি কিছু নয়। আমি এখন একটা দ্বিধার ভেতর পড়ে গিয়েছি। ভালোবাসাহীন কী করে বেঁচে থাকা যায়? আমি কারও সঙ্গে কথাও বলি না। বাসায়ও নয়, বাইরেও নয়। আমার কোনো বন্ধুও নেই।
সন্ধি (ছদ্মনাম)
পরামর্শ
ফেসবুক হ্যাক করে যে তোমার সম্পর্কে মিথ্যা রটনা করা হলো, সেটি তো সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়ে। বর্তমানে এই আইনটির প্রয়োগ হচ্ছে। এই ঘটনাটির ফলে তুমি দুটি খুব বড় ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছ। একটি হচ্ছে, অপরাধ না করলেও তোমাকে অন্যায়ভাবে দায়ী করা হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে, পরিবার প্রথমে তোমার ওপর আস্থা রাখলেও পরে তাঁরা সন্দেহ করতে শুরু করেছেন। আপনজনেরা যখন ভুল বোঝেন, তখন সেটির আঘাত খুব তীব্র মনে হয়। এরপর একটি মেয়েকে দেখে তোমার ভালো লাগল এবং তুমি নিজেকে আবার দোষী ভাবতে শুরু করলে। এতে বোঝা যাচ্ছে, তুমি নিজেকে যথেষ্ট ভালোবাসতে পারো না। হয়তোবা শৈশবে পরিবারের কাছ থেকে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা ও ভালোবাসা না পাওয়ায় তোমার নিজেকে শ্রদ্ধা করা সম্ভব হচ্ছে না। তুমি ভাবতে পারো যে তোমার যেমন কাউকে পছন্দ করার অধিকার রয়েছে, অন্য একজনেরও ঠিক তেমনই অধিকার রয়েছে তোমাকে ‘না’ বলার, তাই না? এর অর্থ এই নয় যে তোমার মধ্যে কোনো ভালো গুণ নেই।
বুঝতে পারছি না তোমার কেন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। এই বয়সে কিন্তু অন্তত কিছু বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকা প্রয়োজন। এভাবে কষ্টগুলো বুকে চেপে রাখলে সত্যিই খুব অসহায় মনে হওয়ার কথা। তুমি চেষ্টা করো অন্তত দু-একজন ছেলেবন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানোর এবং সুস্থ বিনোদনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার। এ ছাড়া প্রতিদিন মেডিটেশন ও রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করলেও আশা করি ভালো অনুভব করবে।