খাবারের স্বাদ বাড়াতে সস

বাসায় অতিথি এসেছে কিংবা বিকেলে নাশতা পরিবেশন করবেন, এর সঙ্গে যদি একটু সস থাকে। আহ! খাবারের স্বাদটাই যেন বেড়ে যায়। নানা রকম খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা যায় ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের সস। বাড়িতেও তৈরি করে নিতে পারেন এগুলো। এ সম্পর্কে জানিয়েছেন রান্নাবিদ ফাতিমা আজিজ।

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

জেনে নিন
 টক, ঝাল, মিষ্টি এবং ঝাঁঝালো স্বাদের সস ভাজাপোড়া, ভুনাজাতীয় নাশতার সঙ্গে পরিবেশন করা যায়। যেমন টমেটো সস, হল্যান্ডেইজ সস, তেঁতুলের সস, টারটার সস, কাঁচা মরিচের সস, চিলি-গার্লিক সস, কাসুন্দি ইত্যাদি।
 আবার চকলেট সস, ক্যারামেল সস, পাইনআপেল সস, কাস্টার্ড সস- এসবের স্বাদ মিষ্টি। পুডিং এবং আইসক্রিমের ওপরে দিয়ে এগুলো পরিবেশন করতে পারেন।
 উস্টার সস, সিজনিং সস সাধারণত রান্নায় ব্যবহার করা যায়।
 সয়াসস সাধারণত চীনা রান্নায় ব্যবহূত হয়।
 পাতলা সাদা সস স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
 ঘন সাদা সস সেদ্ধ এবং বেক করা খাবার তৈরিতে ব্যবহূত হয়।
বাইরে থেকে সস কিনে না এনে ঘরে বসেই ভিন্ন স্বাদের সস তৈরি করতে পারেন সে বিষয়ে বলছিলেন ফাতিমা আজিজ।

টমেটোর সস

টমেটো ধুয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপর পেঁয়াজ কুঁচি, দারুচিনি, শুকনা মরিচ, লবণ, চিনি, সিরকা একসাথে মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে চুলায় দিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে ফুটলে নামিয়ে অ্যালুমিনিয়ামের চালনি বা বাঁশের চালনিতে চেলে নিতে হবে। বিচি থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। এবার টমেটো, লবণ, চিনি, সিরকা একসাথে মিশিয়ে চুলায় দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। ঘন হলে নামিয়ে ঠান্ডা করে পরিস্কার কাচের বোতলে ভরে রাখতে হবে। ছত্রাক সংক্রমণ যেন না হয় সেজন্য চুলা থেকে নামানোর আগে সোডিয়াম বেনজয়েট খুব অল্প পরিমাণে দিতে হবে।

টারটার সস

মেয়োনেজ, সবজির পিকেলস কুচি, একটু সরিষার গুঁড়া, পেঁয়াজ কুচি, ধনেপাতা, লেবুর রস—এসব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে পাঁচ-ছয় ফোঁটা টাবাস্কো সস, লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে। পরিবেশনের এক ঘণ্টা আগে রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে রাখতে হবে।

কাঁচা মরিচের সস
সসপ্যানে অথবা কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, রসুন বাটা ও লবণ দিয়ে তিন-চার মিনিট কষিয়ে নিন। তারপর পানি দিয়ে ২০ মিনিট চুলায় ঘন ঘন নেড়ে জ্বাল দিতে হবে। নামিয়ে ঠান্ডা করে মসৃণভাবে ব্লেন্ড করতে হবে। এবারে অল্প অল্প সিরকা দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। ২০টি কাঁচা মরিচ হলে দেড় কাপ পানি দিতে হবে।

সবুজ সস
ধনেপাতা বাটা, পুদিনাপাতা বাটা, রসুন বাটা, চিনি, লবণ ও তেঁতুলের মাড় একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিলে তৈরি হয়ে যাবে সবুজ সস।

সাদা সস
সসপ্যানে অল্প আঁচে মাখন গলিয়ে ময়দা দিতে হবে। ময়দায় বুদ্বুদ উঠলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। তাতে তরল দুধ দিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ফেলতে হবে। এরপর লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে একবার ফুটিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সাদা সস।

পনির সস
এক কাপ সাদা সসের সঙ্গে আধা কাপ নরম পনির দিয়ে চুলায় নাড়তে থাকুন। পনির গলে যাবে। এরপর অনবরত ঝুরি করা পনির ঢালতে থাকুন। পছন্দের স্বাদমতো হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

বারবিকিউ সস
সসপ্যানে মাখন গলিয়ে পেঁয়াজের কুচি কিছুক্ষণ ভেজে নিন। বাদামি রং হওয়ার আগে সরিষার গুঁড়া, উস্টার সস, টমেটোর সস, গোলমরিচ, চিনি, মরিচ বাটা, লবণ, সিরকা ও পরিমাণমতো পানি দিন। খুব অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিট ঘন ঘন নেড়ে জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যাবে বারবিকিউ সস।

মিষ্টি সস তৈরি
ঘরে বসে মিষ্টি সস তৈরি করার প্রণালি জানিয়েছেন রান্নাবিদ সিতারা ফিরদৌস। তিনি আরও জানান, বাসায় তৈরি করা এ ধরনের সস সাধারণত ১৫-১৬ দিন সংরক্ষিত অবস্থায় ভালো থাকে। তবে টমেটোর সস, লাল চিলি সস, সবুজ চিলি সস—এসব সস প্রায় তিন থেকে পাঁচ মাস ভালো থাকে।

চকলেট সস
কুকিং চকলেট ১০০ গ্রাম, মাখন ৫০ গ্রাম, তরল দুধ আধা কাপ লাগবে। এসব উপকরণ মিশিয়ে দুবার সেদ্ধ করে অথবা ওভেনে এক মিনিট গরম করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চকলেট সস। কোকো পাউডারের সঙ্গে পানি আর চিনি মিশিয়ে চুলায় মাঝারি আঁচে নেড়ে দিতে হবে। তারপর ফুটতে শুরু করলে ভ্যানিলা দিয়ে নাড়তে হবে। এভাবে তৈরি হয়ে যাবে চকলেট সস।

আনারস সস
আনারসের ভেতরের শাঁস বের করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। এতে চিনি, লেবুর রস, মাখন, সামান্য লবণ দিতে হবে। মাখন ছাড়া সব উপকরণ একসঙ্গে চুলায় জ্বাল দিতে হবে। ঘন থকথকে হলে মাখন দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে।
গ্রন্থনা: নাঈমা আমিন