খুদে বিজ্ঞানীদের দেশ গড়ার স্বপ্ন

চিটাগাং গ্রামার স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় প্রকল্প উপস্থাপন করছে এক শিক্ষার্থী
চিটাগাং গ্রামার স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় প্রকল্প উপস্থাপন করছে এক শিক্ষার্থী

চিটাগাং গ্রামার স্কুলের ন্যাশনাল কারিকুলামের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহম্মদ সারাফ বিজ্ঞান মেলায় দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার প্রকল্প উপস্থাপন করছিল। ইংরেজিতে বেশ গুছিয়ে প্রকল্পের বিবরণ তুলে ধরছিল সে। একফাঁকে জানতে চাইলাম, ‘কী হতে চাও বড় হয়ে?’ সারাফের উত্তর, মহাকাশ গবেষক। বড় রকেট বানাতে চায় সে। কিন্তু সে রকেট কি উড়বে এ দেশের আকাশ থেকে, থাকবে কি সে এ দেশে? এমন প্রশ্ন ছিল তার প্রতি।
প্রশ্নের পিঠে খুদে এই শিক্ষার্থীর উত্তরটা ছিল বেশ অপ্রত্যাশিত। বলল, ‘আমার দাদু মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের জন্য লড়েছেন। আমি সে গল্প শুনেছি। বুঝতে পেরেছি এ দেশ অনেক কষ্টের ফসল। তাই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। একদিন এ দেশের রকেট মহাকাশ বিজয় করবেই।’
চিটাগাং গ্রামার স্কুলের নাসিরাবাদ ক্যাম্পাসে ১০ ডিসেম্বর হয়ে গেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। বিদ্যালয়ের কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় মেলায়। সেখানে পরিবেশ ও প্রযুক্তিবিষয়ক ১২৫টি প্রকল্প উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যতের দূষণমুক্ত ও প্রযুক্তি নির্ভর একটি দেশের পরিকল্পনাই যেন হাজির করল খুদে বিজ্ঞানীরা। সারাফের মতো তাদের সবার স্বপ্ন উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ।
জ্বালানি–সংকট সমাধানের উপায়, খাদ্য সমস্যা দূর করা, পরিবেশবান্ধব বাসস্থান ও ডিজিটাল বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনাসহ অনেক ভাবনাই মাথায় এসেছে খুদে গবেষকদের। এ ছাড়া টেলিভিশন, কম্পিউটারসহ নানা যন্ত্রপাতি গত কয়েক দশকে কীভাবে বদলেছে সেটাও তুলে ধরেছে তারা। বিদ্যালয়ের আঙিনাজুড়ে খুদে শিক্ষার্থীদের এই উদ্ভাবনের আসরে এসে মুগ্ধ অভিভাবক ও সাধারণ দর্শকেরা।
হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন জাতের চালের পরিচিতি তুলে ধরেছিল তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বিন্নি, কাউন, লাল আউশ ধান দেখিয়ে ছোট্ট মোহতাসিমা বলল, ‘এসবই আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী ধান। এমন কয়েক হাজার প্রজাতির ধান ছিল আমাদের দেশে। এখন আছে হাতে গোনা কয়েকটি জাত। রক্ষা না করলে সেসবও হারিয়ে যাবে।’
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মেলায় দুটো প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে একটি ছিল ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিদ্যালয় পরিচালনাবিষয়ক। বিদ্যালয়ে ফি জমা দেওয়া বা নোটিশ, সিলেবাস ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য জানার কাজ হয়ে যাবে অনলাইনে। এ জন্য একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে বিদ্যালয়ের কম্পিউটার। শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন আমাদের। সবকিছু ডিজিটাল হলে স্কুল পরিচালনা ডিজিটাল হতে দোষ কোথায়? অভিভাবকদের আর ভর্তি ফি বা বেতন জমা দিতে স্কুলে আসতে হবে না। স্কুলের ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হলে ঘরে বসেই এসব করা সম্ভব হবে।’
বিদ্যালয়ের আপার সেকশনের বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বনগোপাল চৌধুরী এই আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিজ্ঞান মেলা আয়োজনের মূল কারণ তাদের বিজ্ঞানচর্চায় আরও উৎসাহিত করে তোলা।
সকাল সাড়ে নয়টায় মেলা উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের পরিচালক ফারহাত খান। অতিথি ছিলেন ইউআইটিএস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের প্রধান দীপক কুমার চৌধুরী।