খোসপাঁচড়া বা স্ক্যাবিসে সচেতনতা ও চিকিৎসা

স্ক্যাবিস একটি বিরক্তিকর ও বিব্রতকর এবং খুবই পরিচিত সমস্যা। বাংলায় একে বলা হয় খুজলি বা খোসপাঁচড়া। এর সঙ্গে শীতের বা বাতাসের আর্দ্রতার সরাসরি কোনো সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারপরও দেখা গেছে, শীত এলেই এ সমস্যা ব্যাপক আকারে বাড়ে। বিশেষ করে, শিশুরা এতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়। এক বিছানায় একত্রে অনেকেই গাদাগাদি করে ঘুমালে, এক তোয়ালে বা বালিশ–চাদর ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় এ রোগ। এ ছাড়া অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকেও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়।

স্ক্যাবিস আসলে একটি সংক্রামক রোগ। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নয়, এটি একধরনের কীটের কারণে হয়। এই কীটের নাম স্ক্যাবিয়াই সারকপটিস স্ক্যারিবাই। এটি ত্বকের মধ্যে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে।

স্ক্যাবিসের প্রধান উপসর্গ হলো চুলকানি। ভীষণ ও তীব্র চুলকানি হয়, রাতে চুলকানির তীব্রতা আরও বাড়ে। সারা শরীরেই স্ক্যাবিস হতে পারে। তবে হাত, হাতের আঙুলের ফাঁকে, কনুই, বগল, লজ্জাস্থান, স্তন, পশ্চাদ্দেশ ইত্যাদি জায়গায় বেশি হয়। শিশুর মাথা–মুখেও হতে পারে। চুলকাতে চুলকাতে অনেকে ত্বক ছিঁড়ে ফেলেন, রক্ত বের করে ফেলেন। এতে ঘা বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও হতে পারে।

রোগটি খুব সাধারণ। কিন্তু সচেতনতার ঘাটতির কারণে চিকিৎসা পেতে দেরি হয়। এ কারণে সেরে উঠতেও সময় লাগে। বেশির ভাগ মানুষ প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে খাওয়ার ওষুধ বা মলমজাতীয় ওষুধ কিনে ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বাড়িতে নানা ধরনের জীবাণুনাশক দিয়ে শরীর পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। এতে রোগটি তো সারেই না, বরং বাড়ির একাধিক ব্যক্তির মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে একসঙ্গে চিকিৎসা করাতে হয়। নয়তো ভালো ফল পাওয়া যায় না।

চিকিৎসা নেওয়ার পর সব কাপড়চোপড়, চাদর, তোয়ালে, বালিশ, গরম সাবান–পানি দিয়ে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে।

সাধারণ কিছু হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ ধরনের বিরক্তিকর রোগ এড়ানো সম্ভব। পরিবারের সদস্যদের তোয়ালে, জামাকাপড় আলাদা থাকা উচিত। এ ছাড়া একজনের বিছানার চাদর, বালিশ অন্যের ব্যবহার করা উচিত নয়। জামাকাপড় ও নিয়মিত ব্যবহার্য জিনিস নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে কড়া রোদে শুকালে বা ভালো করে ইস্তিরি করলে নিরাপদ থাকবেন। খোসপাঁচড়া হলে অনেকে ভালো করে সাবান মাখেন, কেউ জীবাণুনাশক দিয়ে গোসল করেন। এতে চুলকানি আরও বাড়ে। কাজেই আক্রান্ত জায়গায় সাবান, জীবাণুনাশক ইত্যাদি না লাগানোই উচিত। এ ছাড়া চুলকানি বাড়ে এমন অ্যালার্জি জাতীয় খাবারও এড়ানো উচিত।

স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পারমিথ্রিন ক্রিম বা বেনজাইল বেনজোয়েট লোশন ইত্যাদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে। তবে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে বা ঘা হয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক লাগতে পারে। চুলকানি কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন খাওয়া যাবে। ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আসেন এমন সবারই একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার পর সব কাপড়চোপড়, চাদর, তোয়ালে, বালিশ, গরম সাবান–পানি দিয়ে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে। কড়া রোদ না পেলে কাপড় শুকানোর পর ইস্তিরি করে নিতে হবে। সম্ভব হলে বিছানার তোষক–গদিও রোদে দিন।

ডা. এ এস এম বখতিয়ার কামাল, সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ