গভীর সমুদ্রে মুহুর্মুহু আক্রমণ!

রণসজ্জায় মিসাইল বোট ‘উত্তাল’। শুধু নির্দেশের অপেক্ষা। অবশেষে জাহাজের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে এল চূড়ান্ত ঘোষণা। বিকট শব্দে ‘উত্তাল’ থেকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে গেল ক্ষেপণাস্ত্র। এবার ক্ষণ গোনা। কিছুক্ষণ পর সেই কাঙ্ক্ষিত খবর—১৬ কিলোমিটার দূরে সাগরে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে ক্ষেপণাস্ত্র। বানৌজা বঙ্গবন্ধু জাহাজে উল্লাস, হাততালি।

পতেঙ্গা মোহনা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে এই চিত্র ছিল নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়ার। টানা ১৬ দিনব্যাপী মহড়ার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গত সোমবার। ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব। মহড়ার জন্য গঠন করা হয় ইস্টল্যান্ড ও ওয়েস্টল্যান্ড নামে দুটি প্রতীকী বাহিনী। এ মহড়ার শিরোনাম ছিল ‘এক্সারসাইজ সি থান্ডার ২০১৪’। গভীর সাগরে সত্যিকারের গোলা নিক্ষেপ করা হয় লক্ষ্যবস্তুতে। তবে লক্ষ্যবস্তু ছিল প্রতীকী। মহড়া ঘিরে এই পুরো এলাকায় ছিল নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও জলযানের ছোটাছুটি।
প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর বানৌজা দুর্বার থেকে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রও আঘাত হানে লক্ষ্যবস্তুতে। এরপর আকাশের দিকে একটি লক্ষ্যবস্তু নিক্ষেপ করা হয়। সেই লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্রের পর শুরু হয় ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী সমরাস্ত্র নিক্ষেপ। বানৌজা নির্মূল ও দুর্জয় থেকে ‘রকেট ডেপথ চার্জ’ ছুটে যায় প্রতীকী ডুবোজাহাজের লক্ষ্যবস্তুতে। সমরাস্ত্রটি আঘাত হানার পরই পানির নিচে প্রবল চাপ তৈরি করে। পাহাড়সমান উঁচু ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এর পরই সাগরে ভাসমান প্রতীকী টমেটো লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয় বঙ্গবন্ধু জাহাজ থেকে।
সমরাস্ত্রের এ মহড়া শেষ হওয়ার পরই বঙ্গবন্ধু জাহাজের পাশ দিয়ে ছুটে যায় চারটি দ্রুতগতির স্পিডবোট। নৌবাহিনীর একটি জাহাজকে সাজানো হয় বাণিজ্যিক জাহাজ হিসেবে। খুব দ্রুতই স্পিডবোট থেকে জাহাজে উঠে যায় নৌবাহিনীর কমান্ডো দল। এর পরই জাহাজে থাকা নাবিকদের তল্লাশি শুরু হয়। এটি ছিল চোরাচালানি প্রতিরোধের মহড়া।
মহড়ার সবশেষে আয়োজন করা হয় নৌবহরের পর্যালোচনা। এই ধাপে মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট প্রথমেই ছুটে যায় বঙ্গবন্ধু জাহাজের ওপর দিয়ে। এর পরই নৌবাহিনীর ২০টি যুদ্ধজাহাজ ও ১০টি বোট অংশ নেয় এ ধাপে।
বানৌজা বঙ্গবন্ধু জাহাজে অবস্থান করে মহড়া প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব। এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদসহ তিন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন।