গরমে ঠান্ডা হাওয়া

গরমে স্বস্তি এনে দেবে বৈদ্যুতিক পাখা। মডেল: সুবা, ছবি: সুমন ইউসুফ
গরমে স্বস্তি এনে দেবে বৈদ্যুতিক পাখা। মডেল: সুবা, ছবি: সুমন ইউসুফ

ঘরে ফিরলে স্বস্তিটাই আগে চাই এখন। ফ্যানটা ছেড়ে গা না জুড়ানো পর্যন্ত যেন শান্তি নেই। গরমের এই সময়টায় এই যন্ত্র ছাড়া তো চলেই না। বাজারে আছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক পাখা। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে নিত্যনতুন নকশাও যোগ হচ্ছে ফ্যানে। ফ্যানের খোঁজখবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।

যত রকমের পাখা
হ্যাঁ, আগেকার সেই তিন ব্লেডযুক্ত ফ্যানের মধ্যেই তালিকাটি আর সীমিত নেই। এমনটাই জানালেন ওয়ালটনের একজন বিক্রয়কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রিচার্জেবল ফ্যান থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলড, ওয়াল মাউন্টিং ফ্যান এবং বিভিন্ন ধরনের সিলিং ফ্যান রয়েছে। আপনি আপনার বাড়ির যেকোনো ঘর, এমনকি স্নানঘর, সিঁড়িঘর কিংবা রান্নাঘরের আকৃতি অনুযায়ী পাখা লাগাতে পারেন।’

সিলিং ফ্যানের যত ধরন
সাধারণত বাসাবাড়িতে এই পাখাটিই বেশি ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ধরনের আসবাবপত্র বা ঘরের আকৃতির সঙ্গে এটি মানানসই। সিলিং ফ্যানের মাঝখানের গোল অংশটিতে আলোর ব্যবস্থাও থাকতে পারে। সাদা, কালো, হালকা বাদামি কিংবা চাপা সাদার মধ্যে সোনালি কারুকাজ, বিভিন্ন নকশার সিলিং ফ্যান আপনি বেছে নিতে পারেন।

লো প্রোফাইল সিলিং ফ্যান
ঘরের মেঝে ও সিলিংয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম হলে এ ধরনের ফ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্যে লো প্রোফাইল সিলিং ফ্যানের আকৃতিও খানিকটা ছোট হয়ে থাকে। এর ব্লেড বরাবরই তিনটি। পানপাতা আকৃতির ব্লেডযুক্তও হয়ে থাকে এ ধরনের ফ্যান। স্নানঘর, ছোট বারান্দায় আপনি চাইলে এই পাখা লাগিয়ে নিতে পারেন।

ডুয়েল মোটর সিলিং ফ্যান
মাঝের একটি লোহার হাতলের দুপাশে মাঝারি কিংবা ছোট আকৃতির দুটি পাখা লাগানো থাকে। সাধারণত বড় আকারের বসার ঘর কিংবা পড়ার ঘরে এই পাখা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যাতে একই সময়ে দুই দিকেই বাতাস যেতে পারে। এবং চাইলে দুই দিকের দুটি পাখাই ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

.
.

রিমোট কন্ট্রোলড সিলিং ফ্যান
বারবার রেগুলেটর ঘোরানো কিংবা সুইচ চালানো-বন্ধ করা ভারি ঝামেলার কাজও মনে হয় অনেক সময়। তাই আপনার সুবিধার্থেই রিমোট কন্ট্রোলযুক্ত সিলিং ফ্যানও রয়েছে বাজারে। এগুলো সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ফুট দূরত্বের মধ্যে বাতাস সরবরাহ করতে পারে। কোনো কোনো রিমোট কন্ট্রোলযুক্ত ফ্যানে লাইটেরও সুবিধা থাকে। সেটাও আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন রিমোট দিয়েই।

সিঁড়ি বা ব্যালকনির জন্য
সিঁড়িঘর কিংবা ব্যালকনি যদি স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে, তাহলে এই ফ্যানটি ব্যবহার করতে পারেন। শুধু স্যাঁতসেঁতেই নয়, সেই সঙ্গে ঘরটিতে যদি পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না ঢোকে, কিংবা গুমোট হয়ে থাকে, তাহলেও এই ফ্যান সুবিধাজনক। এ ছাড়া আপনি চাইলে মাঝারি আকৃতির এই পাখা বসার ঘরের জন্যও ব্যবহার করতে পারেন। এই ফ্যানের ব্লেড তিন থেকে চারটি হয়ে থাকে।

রান্নাঘরের বিভিন্ন পাখা
রান্নার কারণে ধোঁয়া, গরম বাতাস আবদ্ধ থেকে যায় রান্নাঘরে। এতে রান্নাঘরটি আরও বেশি গুমোট হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কাটা-বাছার কাজটাও সারা হয় এই ঘরে, তাই জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে। এ জন্য গরম ধোঁয়া বের করে ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেটর বা চিমনি ব্যবহার করতে পারেন। এটিও একধরনের ফ্যান। নিজের স্বস্তির জন্য ছোট অ্যাটাচড পাখা, সিলিং ফ্যান বসাতে পারেন। টেবিল ফ্যানের মতো পাখার গোল অংশটুকু দেয়ালে লাগিয়ে নিতে পারেন। এগুলোয় সুইচের ব্যবস্থা ছাড়াও রিমোট কন্ট্রোলেরও সুবিধা রয়েছে।

স্নানঘরের ফ্যান
রান্নাঘরের মতোই বাতাস চলাচলের জন্য স্নানঘরেও ভেন্টিলেশন পাখা বসানো যায়। এটি স্নানঘরের ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করে দেবে।
এসব ছাড়াও টেবিল, শোয়ারঘরে ছোট কিংবা বড় স্ট্যান্ডযুক্ত টেবিল বা রিচার্জেবল ফ্যানও রাখতে পারেন। বাতাসের জন্য নির্দিষ্ট ওয়াট দেখে ফ্যান কিনুন।

যেখানে যেমন
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একেকটি ডিজাইন, রং ও ব্লেডযুক্ত পাখার দাম ভিন্ন। তেমনি দাম অনেকাংশে নির্ভর করবে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর। সিংগার, ওয়ালটন, গাজী, ভিশন প্রতিষ্ঠানের ফ্যানের দাম পরবে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। হ্যাবেলস, ওরিয়ান্ড সিলিং ফ্যান পাওয়া যাবে আড়াই হাজার থেকে ৫ হাজারের মধ্যে।
ঢাকার নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররম, স্টেডিয়াম মার্কেট, চকবাজার, বসুন্ধরা শপিং মল, নবাবপুর মার্কেটে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ডিজাইন ও ওয়াটের ফ্যান। ওয়ালটন, মিয়াকো, সিংগারের শোরুম থেকেও কিনতে পারেন।

খেয়াল রাখুন
* ফ্যান কেনার সময় এর ওয়ারেন্টি কিংবা গ্যারান্টির মেয়াদ বুঝে নিন।
* মাসে একবার হলেও ফ্যান পরিষ্কার করা উচিত। ডিটারজেন্টযুক্ত পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুছে নিতে পারেন। টেবিল ফ্যানের ক্ষেত্রে চিকন ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।
* ফ্যান ও এয়ারকন্ডিশনার একই সঙ্গে না চালানোই ভালো।