প্রচ্ছদ
গরমে প্রশান্তির গোসল
রোগজীবাণু প্রতিরোধ, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো, ত্বক কোমল-মসৃণ করার পাশাপাশি মনের প্রশান্তির জন্যও গোসল প্রয়োজন। গরমের এ সময়ে একটুখানি বাড়তি আয়োজন যোগ করলে আরামের পাশাপাশি পেয়ে যাবেন আয়েশ
শরীর-মনে প্রশান্তি আনে গোসল। আমাদের মতো আবহাওয়ার দেশে দিনে হোক বা রাতে—প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করা উচিত। কর্মব্যস্ত একটা সপ্তাহ শেষে সময় নিয়ে একটু আয়েশ করে কাজটি করতে পারলে মন্দ হয় না। সেটা স্বাভাবিক সাবান-পানির গোসলের বাইরে একটু আলাদা করেও হতে পারে। শরীর ও মনের প্রশান্তির জন্য গোসলকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে বহু আগে থেকেই চলেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। স্বাভাবিক গোসলের পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফুলের পাপড়ি, লেবু, হলুদ, দুধ, মধু ইত্যাদি। উপকারও রয়েছে অনেক। রোগজীবাণু প্রতিরোধ, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো, ত্বক কোমল ও মসৃণ করার পাশাপাশি মনের প্রশান্তির জন্যও গোসলের জুড়ি নেই। কেবল স্যালনে গিয়ে নয়, চাইলে অল্প পরিসরে, অল্প সরঞ্জাম দিয়ে এসব গোসল করা যেতে পারে বাড়িতেও।
গোসল হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পানি দেওয়া হয়। গোসল শরীরের রোমকূপগুলোকে পরিষ্কার করে এবং ক্লান্তি দূর করে মানসিক স্বস্তি আনে, বলছিলেন হারমোনি স্পার কর্ণধার ও আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
গোসলের সময় যে পানির ধারা শরীরে বয়ে যায়, সেটা আমাদের স্বস্তি দিতে সাহায্য করে জানিয়ে মহিলা উন্নয়ন অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমিন রহমান বলেন, সাধারণত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, রাগ, বিষণ্নতার চরম মুহূর্তগুলোয় মুখে ও ঘাড়ে পানির ঝাপটা নিতে বলা হয়। মানসিক এসব সমস্যার চিকিৎসা হিসেবে পানির ঝাপটা সাহায্য করে। পাশাপাশি গোসল করে নিতে পারলে আরও ভালো। শরীর ও মনে গোসলের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। গোসল মন-মেজাজকে চাঙা করে; শরীর-মনে শক্তি আনে। সাধারণত বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তিদের প্রতিদিন গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিষণ্নতায় একজন মানুষ এমনিতেই দৈনন্দিন কাজ থেকে বিরত থাকতে চান, অনীহা প্রকাশ করেন। তাই জোর করে হলেও তাঁদের গোসল করতে হবে। এ ছাড়া যাঁদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও রাতে শোয়ার আগে গোসল করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যাঁদের ঠান্ডা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা হয়তো গোসলে সব সময় চুল ভেজালেন না, কেবল গায়ে পানি ঢাললেন। এতে অনেকটা স্বস্তি আসে।
হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি বলেন, বর্তমানে ফ্লাওয়ার, লেমন, মিল্ক বাথ বেশ জনপ্রিয়। এসব গোসলের প্রক্রিয়া শরীর ও মনকে সতেজ ও চাঙা রাখতে অসম্ভব সাহায্য করে। সপ্তাহে না হোক, অন্তত মাসে একবার হলেও এসব বাথ নিতে পারলে উপকার হয়।
গোসলের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। অনেকে গোসলখানায় ঢুকে হুট করে মাথায় পানি দিয়ে ঝটপট গোসলটা সেরে ফেলেন। শুরুতেই মাথায় পানি ঢালা হলে শরীেরর সঙ্গে পানির তাপমাত্রা সমন্বয় করতে পারে না। এতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। গোসলের স্বাভাবিক নিয়মের বিষয়ে রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘অনেক সময় শুনবেন, গোসলের পর স্ট্রোক করে মানুষ মারা গেছে বা বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তাই কিছু নিয়ম মানা খুব জরুরি। গোসল করতে হবে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে। শুরুতে পা, হাত, ঘাড়, মুখ ইত্যাদি অংশ পানির স্পর্শ পাওয়ার পর মাথায় পানি ঢালতে হবে। গোসলের পর গা মুছে সম্পূর্ণ শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখা ভালো।’
লেমন বাথ
লেমন বাথ বা লেবুর রস দিয়ে করা গোসলের এই পদ্ধতি সারা বিশ্বেই বেশ জনপ্রিয়। লেবু পরিষ্কারক হিসেবে উপকারী। দেহে জমে থাকা সারা দিনের ধুলাময়লা দূর করতে এই গোসলের জুড়ি নেই। আর এই পদ্ধতির ঝক্কিও কিছুটা কম। একটি মগ বা পাত্রে গরম পানি নিয়ে লেবুর রস মেশাতে হবে। কিছুক্ষণ পর পানিটি সাধারণ পানির মধ্যে মিলিয়ে গোসল করুন। সুগন্ধের জন্য বালতি বা বাথটাবে লেবু গোল গোল আকৃতি করে কেটে রেখে দিতে পারেন।
স্বাভাবিক গোসল
স্বাভাবিক গোসলের আগে স্যালনগুলোয় সাধারণত তেল মালিশ করা হয়। এরপর গায়ে পানি ঢেলে শাওয়ার জেল ব্যবহার করে গোসল করানো হয়। চুল ধোয়ার পর্বটি হয় সবার শেষে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে শ্যাম্পু করে পরে কন্ডিশনিং করা হয়। এভাবে বাড়িতেও গোসল করতে পারেন। এ ছাড়া পানির সঙ্গে নিমপাতা, আদা বা হলুদের রস মেশাতে পারেন। গায়ের বিভিন্ন র্যাশ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমাতে এই পদ্ধতির গোসল উপকারী। আসলে কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে হয়তো অনেকটা সময় ধরে আয়েশ করে গোসল করা হয় না অনেকের। পারলার বা স্যালনে গিয়ে যাঁদের গোসল করা হয়ে ওঠে না, তাঁরা বাথরুমের পরিবেশে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। গোসলখানায় রাখতে পারেন সুগন্ধি। কয়েকটা মোমবাতি হয়তো জ্বালিয়ে দিলেন গোসলের সময়। মৃদু গান ছেড়ে দিলেও ভালো লাগবে। গোলাপ বা বেলি ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিলেন চারপাশে অথবা একটা বা দুটো ইনডোর প্ল্যান্টও রাখতে পারেন। মূলত গোসল বাসার বাথরুমেই হোক অথবা বাইরের স্যালনে—তা যেন পূর্ণ প্রশান্তি আনে আর নতুনভাবে কাজ করতে উদ্যমী করে আপনাকে।
ফ্লোরাল বাথ
ফ্লোরাল বাথকে সহজ ভাষায় বলা যেতে পারে ফুল বা ফুলের নির্যাস দিয়ে গোসল। এই গোসল ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, রোগজীবাণু প্রতিরোধ করে এবং ছত্রাক প্রতিরোধ করে। এ ক্ষেত্রে ফুল হিসেবে সাধারণত গোলাপ, বেলি, গাঁদা ব্যবহার করা হয়। গরমে এই গোসল খুবই আরামদায়ক।
সাধারণত দুইভাবে এটি করা যায়। বাথটাবের ভেতর বা বালতিতে অনেক ফুল একত্রে ভিজিয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা রেখে সেই পানি দিয়ে গোসল করা হয়। গোলাপ দিয়ে বাসায় গোসল করতে চাইলে অন্তত ১০ থেকে ১২টি ফুল লাগে। বেলি বা গাঁদা দিয়ে করলে অনেক ফুলের প্রয়োজন পড়ে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো ফুলের নির্যাস দিয়ে গোসল। এ ক্ষেত্রে পানির মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফুল নিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এরপর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে গোসলে ব্যবহার করা যেতে পারে। যে ফুল বা ফুলের পাপড়িগুলো ছাঁকার পর জমাট হয়ে থাকে, সেগুলোতে চিনি, কফি, জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে স্ক্রাবার বানানো যায়। স্ক্রাবার মেখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ফুলের নির্যাসমিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করে নিতে পারেন।
মিল্ক বাথ
একে সহজ ভাষায় দুধ গুলিয়ে গোসল বলা যেতে পারে। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কাঁচা দুধ ব্যবহার করা হয়। এই গোসল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে দুই কাপ কাঁচা দুধের সঙ্গে চারটি লেবুর রস মেশাতে হবে। লেবুর খোসা কুচি করে চিনি, ঘি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। এটি স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এরপর গোসলের জন্য দুধের সঙ্গে লেবুর তেল মিশিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। তবে বেশি জ্বাল দেওয়া যাবে না। এতে দুধ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। লেবুর কুচির স্ক্রাবার ২০ থেকে ২৫ মিনিট গায়ে মেখে জ্বাল দেওয়া দুধ মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করে নিতে হবে।