গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। গর্ভকালীন শরীরে ক্যালরির সঙ্গে লৌহ বা আয়রনের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। চাহিদামাফিক লৌহ পূরণ না হলে এ সময় রক্তশূন্যতা হয়।
স্বাভাবিকভাবেই একজন গর্ভবতী নারীর দেহে রক্তের পরিমাণ ১৫-২০ শতাংশ। রক্তের তরলের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং শারীরবৃত্তীয় রক্তশূন্যতা হতে পারে। আগে থেকে রক্তশূন্যতা, পুষ্টিহীনতা ও ঘন ঘন সন্তান জন্মদান এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
লৌহের অভাবের কারণ
লৌহের বর্ধিত চাহিদা, বমি বমি ভাব, বমি ও ক্ষুধামান্দ্য, ভুল খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অপ্রতুল ধারণা, যমজ শিশু গর্ভে ধারণ, অল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় গর্ভধারণ, গর্ভবর্তী হওয়ার আগে থেকেই লৌহ-স্বল্পতায় ভুগলে।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ
শরীর দুর্বল লাগা ও সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করা, ফ্যাকাসে বিবর্ণ মুখ ও চোখ সাদা হয়ে যাওয়া, জিহ্বা ও মুখে ঘা, রক্তশূন্যতা বেশি হলে বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট এবং পা ফুলে যেতে পারে।
কী করবেন
গর্ভধারণের প্রথম থেকেই যথেষ্ট লৌহসমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন: কচুশাক, কাঁচা কলা, পেয়ারা, শিম, মটরডাল, বাঁধাকপি, কলিজা, গোশত, খোলসসহ মাছ, যেমন চিংড়ি মাছ।
চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথম তিন মাসের পর থেকে নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। সাধারণত প্রথম তিন মাসে মাসিক বন্ধ থাকার কারণে রক্তশূন্যতা ততটা প্রকট হয় না এবং এ সময় আয়রন খেলে বমি ভাব ও ক্ষুধামান্দ্য বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভকালীন কয়েকবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখা দরকার। রক্তশূন্যতা তীব্র আকার ধারণ করলে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে আয়রন ইনজেকশন, এমনকি রক্ত পরিসঞ্চালনেরও দরকার হতে পারে।
ক্ষতিকর প্রভাব
দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে পানি আসা, গর্ভকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী সংক্রমণের আশঙ্কা, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশু প্রসব, রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে, প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, দুগ্ধ উৎপাদন ব্যাহত হয়। আর শিশুর ভ্রূণের বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, অপরিপক্ব শিশু প্রসব, জন্মের আগেই জরায়ুতে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, ঢাকা মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতাল