
অবসর কিংবা কাজের ব্যস্ততার মধ্যে গান শুনলেই মনে প্রশান্তি অনুভব করেন মাহাবুবুল হক। অন্যদিকে প্রেমের সম্পর্ক ভাঙার পরে রোমান্টিক গান শুনলে সোমার (ছদ্মনাম) মন বিষণ্ন হয়ে যায়। গান যেমন মনকে উদ্বেলিত করতে পারে আবার মনকে নিরানন্দেও ভরিয়ে দেয় কখনো কখনো।
মানুষের মন ও আবেগের ওপর গানের প্রভাব অনেক বেশি। পছন্দের কোনো গান শুনলে অতিসাধারণ একটি দিনও ভালো হয়ে যেতে পারে। যাঁরা গান শুনতে বা গাইতে পছন্দ করেন, তাঁদের গান ছাড়া যেন দিনই কাটে না।
আবার আবেগীয় বিভিন্ন পর্যায়ে গান মনকে স্মৃতিকাতর করে তোলে। মন বিষণ্নে ভরে যায় তখন।
গান কখন মনে প্রশান্তি আনে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের ট্রেইনি কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা পছন্দের বিষয় থাকে। গান তেমনই একটি বিষয়। যাঁরা গান পছন্দ করেন, গান শুনলে তাঁদের ভালো লাগে। অনেকে গানের মাঝেই শক্তি ও উদ্যম খুঁজে পান। আবার অনেকে গানকে তাঁর নিঃসঙ্গতার সঙ্গী করে নেন।’
গান শুনলে বোধ হয় ভালো লাগে অনেকেরই। তবে শুধু ভালো লাগানো ছাড়াও গানের আরও গুণ আছে। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দূর করতে গান কাজ করে ওষুধের মতোই।
গান দুশ্চিন্তা ও ধকল থেকে মুক্তি দেয়
ট্রেন্ডস ইন কগনেটিভ সায়েন্স জার্নালে গানের প্রভাব নিয়ে প্রায় ৪০০ প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সেগুলোর সারসংক্ষেপ হলো—গান মানুষের দুশ্চিন্তা, যেকোনো শারীরিক ও মানসিক ধকল সামলাতে সাহায্য করে।
বাস্তবজীবনে চাকরি, সংসার, সম্পর্কসহ নানা কিছু নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তা ও ধকল। তখন গানের সুর, বাজনা, ছন্দ ও গানের কথা মনেকে স্থির করতে সাহায্য করে। তাই অনেক গবেষণায় গানকে ‘রিলাক্সজেশন’-এর একটি অংশ হিসেবে দেখা হয়।
গান মস্তিষ্কের অনুশীলন করায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেজাবিন হক বলেন, মানব মস্তিষ্কের যে অংশগুলো আনন্দ ও উৎফুল্লবোধের জন্য কাজ করে, গান সেই অংশগুলোকে উজ্জীবিত করে। ফলে গান শুনে ভালো লাগা তৈরি হয়।
মস্তিষ্কের অনুশীলন বা ব্যায়াম হয় গান শুনলে। যাঁরা গান গাইতে পারেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি আরও ভালো কাজ করে। মস্তিষ্কের যে অংশ মানুষের রাগ, দুঃখবোধ, আনন্দবোধের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করে, গান শুনলে সেই অংশগুলোর সক্ষমতা বাড়ে। এ জন্য গান মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ও সুস্থভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। অক্সিটোসিন হরমোনকে সঞ্চালিত করে। যেটি মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করে।
গান মানসিক অবস্থা ভালো করতে সাহায্য করে
গান মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। মানসিক শক্তি জুগিয়ে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তাঁদের মানসিক স্থিতি আনতেও গান ভূমিকা রাখতে পারে। গান চিন্তাশক্তি বাড়াতে ও মনোযোগী হতেও সাহায্য করে।
গান মনকে বিষণ্নও করে?
মানসিক অবস্থার ওপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে গানের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। গান মনকে করে তোলে উতলা কিংবা বিষণ্ন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গান শুনে মানুষের মধ্যে বিষাদ ও দুঃখবোধ বেড়ে যায়। অনেকে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এর কারণ হিসেবে মেহেজাবিন হক বলেন, মানব মস্তিষ্কের যে অংশ দুঃখবোধ বা বিষণ্নতার জন্য দায়ী, অনেক গান তাদের আন্দোলিত করে। ফলে গান শুনলে অনেকের মন খারাপ হয়ে যায়।
বিভিন্ন গানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভালো সময়ের স্মৃতি। ফলে মন খারাপের সময়ে এই বিশেষ গানটি মনকে স্মৃতিকাতর করে তোলে।
কখন কোন গান শুনবেন?
গানের সঙ্গে মানব মনের গভীর যোগসূত্র আছে। তাই মানসিক অবস্থা বুঝে গান নির্ধারণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। মেহেজাবিন হক বলেন, যখন মন কোনো কারণে অস্থির বা বিষণ্ন থাকে, তখন দুঃখের গান না শোনাই ভালো। কারণ এটি মনকে আরও বিষাদগ্রস্ত করে দিতে পারে। তাই এই সময়ে মনকে উজ্জীবনকারী আনন্দের গান শুনলে ভালো লাগবে।
সূত্র: বি ব্রেইন ফিট. কম, সাই ব্লগ, ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোলজি জার্নাল