গুড়, মুড়ি আর চিড়া

অধুনা

আমাদের দেশের অতিপরিচিত খাবার গুড়, মুড়ি ও চিড়া। এক মুঠো চিড়া ভিজিয়ে সঙ্গে খানিকটা গুড় দিয়ে খেয়ে নিলে দীর্ঘ সময় পেট ঠান্ডা থাকে। পেট ভরা রাখতে তাই অনেকেই খাবার হিসেবে চিড়া, গুড় আর মুড়ি খেয়ে থাকেন।

গুড়ের গুণ

গুড়ের সন্দেশ ও গুড়ের পায়েস অনেকেরই প্রিয় খাবার। গুড় দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করে খাওয়া যায় যেমন, তেমনি গুড় অনেকে শুধু শুধুও খেয়ে থাকেন। চিনির চেয়ে গুড়ে পুষ্টির পরিমাণ বেশি। আখ কিংবা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। তালের রস দিয়েও গুড় তৈরি হয়, তবে সেটা কম প্রচলিত। আবার তালের গুড়ের সঙ্গে চিনি মিলিয়ে তৈরি করা হয় তালমিছরি। রক্তস্বল্পতায় গুড় বেশ উপকারী। এতে সহজ শর্করা আছে বলে এটি শরীরে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া লোহা ও অন্যান্য খনিজ লবণ বেশি থাকে বলে একে মিশ্র খাদ্য বলা হয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম আখের গুড়ে আছে জলীয় অংশ ৩.৯ গ্রাম, শর্করা ৯৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম, লোহা ১১.৪ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে আছে জলীয় অংশ ৯.৬ গ্রাম, শর্করা ৮৭.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৬৩ মিলিগ্রাম, লোহা ১৬.২ মিলিগ্রাম। আখের গুড়ে ক্যালরির পরিমাণ ৩.৯৩ এবং খেজুরের গুড়ে ক্যালরি আছে ৩৫৩। ১০০ কেজি আখ থেকে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। এদিকে ৭৫ কিলোগ্রাম খেজুরের রস থেকে মেলে ১০-১২ কেজি গুড়।

চিড়া চমৎকার

চিড়া তৈরি হয় সরাসরি ধান থেকে। এটি সহজপাচ্য খাবার। ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। কারণ, পুষ্টিগুণ চালের কাছাকাছি। ডায়রিয়া ও আমাশয়ে চিড়া ভেজানো পানি খুবই উপকারী। দূরের যাত্রায় অথবা হাতের কাছে কোনো খাবার না থাকলে চিড়া বহন করা যেমন সুবিধা, খাওয়াও সহজ। কারণ, এতে জ্বালানির কোনো প্রয়োজন হয় না। চিড়া ভেজালে প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়। যেমন ২০ গ্রাম চিড়া ভেজানোর পর প্রায় ৮০ গ্রাম ওজন হয়। সব বয়সে এবং সবখানে বসে চিড়া খাওয়া যায়। এটি দু–তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

১০০ গ্রাম চিড়ায় আছে ৩৪৬ ক্যালরি, ৬.৬ গ্রাম আমিষ, ৭৭.৩ গ্রাম শর্করা, ২.০২ মিলিগ্রাম লোহা, ২৩৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস। এদিকে ১০০ গ্রাম চালে আছে ৩৪৯ ক্যালরি। গুড়ের সঙ্গে চিড়ার একটি চমৎকার সমন্বয় আছে। পেট ভরার জন্য এই দুটি খাবার একসঙ্গে খেলে সারা দিনের খাওয়া থেকে চিন্তামুক্ত থাকা যায় অনেক সময়।

মুচমুচে মুড়ি

চিড়ার মতোই খাবার মুড়ি। তবে চিড়া যেমন সরাসরি ধান থেকে হয়, মুড়ি তৈরি হয় চাল থেকে। মুড়ির ভেতরটা ফাঁপা। তাই পরিমাণে বেশি খাওয়া যায়। দূরের যাত্রায় চিড়ার তুলনায় মুড়ি বহনে অসুবিধা। কারণ, মুড়িতে অনেক জায়গা লাগে, আবার সংরক্ষণ করতে হয় বাতাসরোধীভাবে। মুড়ির মুচমুচে ভাব নষ্ট হয় গেলে শুকনা খেতে অসুবিধা হয়। তবে মুড়ি ভিজিয়ে নারকেল আর গুড় বা চিনির সঙ্গে খেতেও মজা। মুড়িও চিড়ার মতো সব বয়সীরা খেতে পারেন।

প্রতি ১০০ গ্রাম মুড়িতে ক্যালরি আছে ৩২৫, লোহা ৬.৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম ও ফরফরাস ১৫০ মিলিগ্রাম। মুড়ি সাধারণত হাতে ভাজা হলেও এখন যন্ত্রে ভাজা মুড়ি বেশি পাওয়া যায়। যন্ত্রে ভাজা মুড়ির চেয়ে হাতে ভাজা মুড়ির গুণাগুণ বেশি। দুপুর বা রাতের খাবারে ভাতের বদলে দুধ বা তরকারির সঙ্গে মুড়ি খাওয়া যায়।