গেম খেলা বিনোদন, না আসক্তি

বেশির ভাগ গেমস তৈরি করা হয়েছে বিনোদনের জন্য
মডেল: প্রেরণা ও আকিব, ছবি: অধুনা

ইন্টারনেট গেমস, ভিডিও গেমস—নাম শুনলেই অভিভাবকেরা যেন আঁতকে ওঠেন। গেল গেল রব শুরু হয়ে যায়। শঙ্কায় থাকেন তাঁদের সন্তানেরা কখন এই গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। গেম মানেই কি আসক্তি বা গেম খেলা কি খুব খারাপ?

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বেশির ভাগ ইন্টারনেট গেমস তৈরি করা হয়েছে বিনোদনের জন্য, পাশাপাশি এসব গেমের মাধ্যমে শিশু–কিশোরদের সমস্যা সমাধান করার সক্ষমতা বাড়ে, নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারে এবং অনলাইনে বন্ধুত্ব আর সামাজিক দক্ষতা বাড়ে। গেমিফিকেশন বলে একটি বিষয় আছে, যার অর্থ গেমের মাধ্যমে আমাদের ধারণা ও আচরণের পরিবর্তন। একটি গেমের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়, যাতে যিনি গেমটি খেলছেন, তাঁর আচরণ আর মানসিকতায় পরিবত৴ন ঘটতে পারে। গেমের ডিজাইন ইতিবাচক হলে পরিবর্তনটি ইতিবাচক হবে; আর গেমের ডিজাইন ক্ষতিকর হলে পরিবর্তন নেতিবাচক দিকে যাবে।

একটি ভালো ডিজাইনের গেম যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসতে পারে, তা হচ্ছে—

• সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বাড়ে;

• সমস্যা সমাধানের কৌশল শেখা যায়;

• বিশ্লেষণমূলক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরি হয়;

• সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বা রিফ্লেক্স বেড়ে যায়;

• প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার চর্চা করতে শেখায়;

• গাণিতিক দক্ষতা বাড়ে;

• মাল্টি টাস্কিংয়ে সক্ষমতা বাড়ে;

• পরিবারের সদস্যরা মিলে গেম খেললে পারিবারিক সম্প্রীতি বাড়ে।

গেমে আসক্ত হলে সামাজিক দক্ষতা কমে আসে
ছবি: অধুনা

কখন বুঝবেন গেমে আসক্তি হয়েছে

গেম খেললেই সেটিকে নেতিবাচকভাবে নেওয়া যাবে না। দেখতে হবে সেটি আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে কি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন গবেষক দলের মতে, গেমিং আসক্তির লক্ষণগুলো ১২ মাস ধরে থাকতে হবে।

• ইন্টারনেট ব্যবহার বা গেম খেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অনেক বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে;

• দিন দিন ইন্টারনেটে গেম খেলার সময় বাড়তে থাকবে;

• জীবনের সব আনন্দের উৎস হবে ইন্টারনেট বা গেম। এগুলো ছাড়া আর কোনো কিছুতেই আনন্দ পাবে না;

• যে কাজগুলো করার কথা, যেমন: পড়ালেখা, অফিস, বাসার কাজ, তা ব্যাহত হবে। পরীক্ষার ফল খারাপ হতে থাকবে। কাজের মান কমে যাবে। অফিসে দেরিতে যাবে।

• নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে উৎকণ্ঠা আর অস্বস্তিতে ভুগবে। খিটখিটে মেজাজ হবে। আচরণ আগ্রাসী হয়ে উঠবে;

• ঘুমের সমস্যা দেখা দেবে। দিনে ঘুমাবে আর রাতে জাগবে।

• খাবার গ্রহণে অনিয়মিত হয়ে উঠবে। দ্রুত খাওয়া যায় এমন খাবার গ্রহণ করবে, যেমন ফাস্টফুড।

• সামাজিকতার দক্ষতা কমে যাবে। কারও সঙ্গে মিশবে না। নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।

গেমে আসক্তি হতে পারে—এই ভেবে গেম থেকে দূরে থাকা যাবে না; বরং নিরাপদ গেম খেলতে হবে, পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে গেম খেললে আসক্তির আশঙ্কা কমে যাবে আর গেম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। যেসব গেমে সহিংসতা, আগ্রাসী আচরণ আর অশালীন ভাষা থাকে, সেসব গেম পরিহার করতে হবে। ইন্টারনেট গেম, যেমন বিনোদন, তেমনি এতে আসক্তির ঝুঁকি রয়েছে। যৌক্তিকভাবে নিয়ম মেনে গেম খেললে আসক্তির ঝুঁকি কমানো যায়।