গোলাপী এখন কানাডায়!

সিনেমার গোলাপীর সাজে কানাডার পথে বাংলাদেশের মেয়ে রাইসা আফ্রিদা
সিনেমার গোলাপীর সাজে কানাডার পথে বাংলাদেশের মেয়ে রাইসা আফ্রিদা

কানাডার ক্যালগেরি শহরে দেখা গেল এক বাংলাদেশি তরুণীকে। লাল-সবুজ শাড়ি, হাতে ঝোলা—অদ্ভুত বেশ! ঝা চকচকে শহরটার সঙ্গে তাঁকে যেন ঠিক মানায় না। কে িতনি?
ছবিটা বাঙালি সাজপোশাকে, বাক্সপেটরা হাতে এক তরুণীর। খুব চেনা এই বেশভূষাই আপনাকে দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য করবে নিশ্চিত। তরুণীর আশপাশের দালানকোঠা, রাস্তাঘাট—সবই যে দেখাচ্ছে একদম ভিনদেশের মতো। ফেসবুকে পাওয়া এই ছবিগুলোর অ্যালবামের নামটাও আকৃষ্ট করার মতো—‘গোলাপী এখন ক্যালগেরিতে’। কৌতূহল আর দমিয়ে রাখা গেল না। ঝটপট যোগাযোগ হলো এই ‘গোলাপী’র সঙ্গে। প্রবাসী ‘গোলাপী’ রাইসা আফ্রিদা জানালেন তাঁর অভিনব কর্মকাণ্ডের গল্প।

যেই ভাবা সেই কাজ

.
.

আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৮ সালে। সে সময়ের সাড়া ফেলা এই ছবিতে গোলাপী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। সে ছবির প্রসঙ্গ টেনেই কথা শুরু করলেন আফ্রিদা। কানাডার লিথব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন এই বাঙালি মেয়ে। বলছিলেন ‘চলচ্চিত্রের গোলাপী যেমন পেটের দায়ে শহরে আসে, তেমনি গ্রামবাংলার অসংখ্য নারী ঢাকায় পাড়ি জমিয়ে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যান। তাঁদের মুখে প্রসাধনীর আড়ম্বর থাকে না ঠিকই, কিন্তু থাকে একটা অকৃত্রিম সৌন্দর্য। আমাদের সমাজ এঁদের উপেক্ষা করে প্রসাধনীর আস্তরণে ঢাকা “রূপসী”দের ছবি তুলতেই যেন বেশি ব্যস্ত। গোলাপীদের ছবি যদি কেউ তুলেও থাকেন, সেখানে বেশির ভাগ সময় আলোকপাত করা হয় তাঁদের দৈন্যদশার দিকে। অথচ সব কষ্ট ছাপিয়ে তাঁদের জীবনেও যে কিছু রং আছে, সেটা কারও চোখে পড়ে না।’ এই সৌন্দর্য তুলে ধরাই ছিল রাইসার উদ্দেশ্য। চলচ্চিত্রের সেই গোলাপীর মতো করে গামছা, কাপড়ের শাড়ি, চুড়ি, তাবিজ, ফিতা আর নথ পরে, পুরোদস্তুর গ্রামীণ সাজে তিনি নেমেছিলেন কানাডার ক্যালগেরি শহরের রাস্তায়। ‘গোলাপীদের হাসি-আনন্দ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি ছবিগুলোতে। আমি চাই আমার মতো আমার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জীবনের সৌন্দর্য আর সুখগুলোও অন্য চোখে দেখুক। এই শ্রেণির মানুষগুলো যে কত অল্পতেই সুখী তা তারা উপলব্ধি করুক।’ বলেন রাইসা আফ্রিদা।
বরাবরই তিনি আকৃষ্ট ছিলেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উচ্ছল, সুন্দর ও রঙিন জীবনের প্রতি।

সেদিনের কথা

পরীক্ষামূলক এই ফটোশুটটি হয়েছিল ৩১ আগস্ট, কানাডার আলবার্টা রাজ্যের উঁচু-নিচু পাহাড় আর ম্যাপেলগাছে ভরা শহর ক্যালগেরিতে। এক দিনের জন্য ‘গোলাপী’ হয়ে রাইসা শহরের ব্যস্ততম সড়ক, রেলস্টেশন, গির্জা, হোটেল, কফি শপসহ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাংলার গ্রামীণ পোশাকে বাংলা গান গাইতে গাইতে তিনি যখন স্টেফিন অ্যাভিনিউতে লেস, ফিতা, চুড়ি ইত্যাদির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন, তখন অসংখ্য উৎসুক পথচারী ভিড় করেছিলেন সেখানে। কৌতূহল নিয়ে তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, রাইসা কোথা থেকে এসেছেন। ‘ভীষণ ভালো লাগছিল, যখন তাঁদের বলছিলাম, “আই অ্যাম ফ্রম বিউটিফুল বাংলাদেশ”’ বললেন রাইসা। সেখানে অনেকেই তাঁর কাছে বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। জিনিস বিক্রি নয়, বরং নিজ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানান দেওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

বিদেশবিভুঁইয়ে
রাইসা কানাডায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন গত বছর থেকে। পড়ালেখার পাশাপাশি ‘দ্য হাডসন বে’ নামক চেইন রিটেইল কোম্পানিতে রিজিওনাল সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করছেন। বরাবরই রোমাঞ্চকর ও ভিন্নধর্মী কাজের নেশায় মত্ত রাইসাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেন তাঁর নানি, মা-বাবা ও বন্ধু সাদাব মাহমুদ। ‘গোলাপী এখন ক্যালগেরি’তে অ্যালবামের ছবিগুলো তুলেছেন আরেক বন্ধু অভিরূপ গোস্বামী।

.
.
নিজ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানান দেওয়াই ছিল রাইসার উদ্দেশ্য
নিজ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানান দেওয়াই ছিল রাইসার উদ্দেশ্য