ঘড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি

পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনেকেই হাতে পরছেন ঘড়ি। মডেল: বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: নকশা
পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনেকেই হাতে পরছেন ঘড়ি। মডেল: বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: নকশা

একটা সময় এমনটাই ছিল চল, হাতের ঘড়ি দেখে মানুষের রুচি মাপতেন অনেকে। তারপর এল মুঠোফোনের যুগ। হাতে হাতে পৌঁছে গেল প্রযুক্তি। সময় তো ফোনেই দেখা যাচ্ছে, এই অজুহাতে হাতের ঘড়িটি হাতছাড়া করলেন অনেকেই। ব্যতিক্রম রয়ে গেল তবু। স্রোতের সম্পূর্ণ বিপরীত, তবু এই সময়েও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী এষার হাতে শোভা পেয়েছে ঘড়ি। ‘আসলে ঘড়ি আমার খুব প্রিয় অনুষঙ্গ। অনেক পোশাকের সঙ্গে শুধু ঘড়িই আমার অলঙ্কার। আলাদা কিছু লাগে না। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়েও আমি ঘড়ি কিনি। আর দেশের বাইরে বেড়াতে গেলেও ব্র্যান্ড দোকান খুঁজে বের করি শুধু বাহারি নকশার ঘড়ির সন্ধানে,’ এভাবেই নিজের ঘড়িপ্রীতির কথা জানান এষা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্রী সেঁজুতিরও বড় এক দুর্বলতার নাম হাতঘড়ি। মজা করে বলেন, ‘জানেন, আমার এমন একটা ঘড়ি আছে, যার সময় আর ঠিক নেই। ঠিক করাও যাচ্ছে না। অথচ ওই ঘড়িটা আমার খুবই পছন্দের। আমার অনেকগুলো পোশাকের সঙ্গে ম্যাচও করে দারুণ। আর ঘড়িটা এত সুন্দর যে ওকে বাতিলের খাতায় ফেলতে মন চায় না। আর এখন তো নানা রঙের বেল্টের সঙ্গে এক ডায়ালের ঘড়ি সহজেই মেলে কম দামেই।’
কোন পোশাকে কেমন ঘড়ি
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অবধি মেয়েদের ঘড়ি বলতে কেবল চামড়ার সরু বেল্টের সঙ্গে ছোট্ট ডায়ালের ঘড়িরই চল ছিল। আর ছেলেদের হাতে দেখা মিলত মোটা স্টেইনলেস স্টিল অথবা চেইনের ঘড়ি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল এসেছে হাতের ঘড়িতেও। এখন মেয়েরা পরছেন মোটা বেল্টের ঘড়ি। ছেলেদের হাতের স্টেইনলেস স্টিলের ঘড়ির জায়গায়ও ভাগ বসাচ্ছে চামড়া বা রেক্সিনের ঘড়ি। ঘড়ির দাম ছিল বেশি। একটাতেই কাজ চলে যেত। শুধু কাজ চালিয়ে নেওয়ার চিন্তায় ছেদ ধরিয়েছে ফ্যাশন-ভাবনা। এখন কম দামেই পাওয়া যায় ফ্যাশনেবল, রংচঙে নানা ঘড়ি। ‘জামদানিকে যেমন কোনো সময়ের আবর্তে বেঁধে ফেলা যায় না, ঘড়িও তা-ই। চিরন্তন এক অনুষঙ্গ। এখন করপোরেট জীবনেও ঘড়ি বেশ চলছে। যদিও মাঝে কিছু বছর দেখা যায়নি। তবে ছেলেরা ঘড়ি এমনিতেও পছন্দ করে। অনেকের কাছে এটাই একমাত্র অনুষঙ্গ। অনেকে দাম দিয়ে কিনতেও ভালোবাসে। ভারিক্কি মেজাজের ছেলেরা মেটালের ঘড়ি বেছে নিতে পারেন। শিক্ষার্থীরা বেল্টের ঘড়িতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। এই সময়ে মেয়েদের লম্বা জামার চল। তাঁরা সরু বেল্টের ঘড়ি পরতে পারেন। মোটা বেল্টও খারাপ লাগবে না। এখন তো তাঁতের শাড়ির সঙ্গেও মোটা বেল্ট পরেন অনেকে। পোশাকটা হালকা হলে নকশাদার ঘড়িতে ভালো মানাবে। মোদ্দাকথা, যার যেটা ভালো লাগে, সেটার সঙ্গে শুধু নিজের গড়নটা একটু মানিয়ে নিলেই হলো। ব্যস!’ জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার।

যেখানে যেমন
ঘড়ির বাজারের কথা এলে প্রথমেই আসে নামী ব্রান্ডের দামি ঘড়ির কথা। সিকোর একটা ঘড়ি পেলেই খুশি হয়ে যেত মাধ্যমিকে পাড়ার স্ট্যান্ড করা ছেলেটা। সেই কালও গেছে বহুকাল। বাংলাদেশে টাইটান, ফাস্ট ট্র্যাকের ঘড়িও এখন মিলছে। ডিজায়ার, রাডো, টিসো, এম্পোরিও আরমানি, পুলিশ, কেলভিন ক্লেইনের ঘড়ি এখন অনেক শপিং মলেই পাওয়া যাচ্ছে। একটু দামি ঘড়ির খোঁজ করলে যেতে পারেন ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলের টাইম জোনে। এখানকার বিক্রয় কর্মকর্তা সায়মন রহমান জানালেন, টাইটান, রাডো, টিসো, কিংবা লংজিন্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি আমদানি করে কল্লোল গ্রুপ। তাদেরই অফিসিয়াল শোরুম এটি। এখানে ঘড়ির দাম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত আছে। একটু ফ্যাশনেবল ঘড়ি চাইলে জেমস গ্যালারি কিংবা আলমাসে ঢুঁ মারতে পারেন। পাথর খচিত নানা রঙের ঘড়ি পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। আবার ৩০০ টাকায়ও নিজের পছন্দের ঘড়ি পাবেন। হাতের কাছের যে কোনো মার্কেটে।