ঘরে বসেই ঈদের কেনাকাটা
মানুষ বদলে যায়, আবার বদলে যেতে বাধ্য হয়। করোনা মহামারিতে অনেক কিছুই বদলে গেছে বা বদলাতে বাধ্য হয়েছে। জীবনযাপনসহ অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে করোনাভাইরাস। আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি নতুন স্বাভাবিকে। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আর ঈদ মানে কেনাকাটার ধুম। কিন্তু করোনার কারণে ইচ্ছেমতো বাজার–মার্কেট–শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটার সুযোগ নেই। নিরাপদও নয়। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে আপনার মুঠোফোন, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটারকেই বানিয়ে ফেলতে পারেন শপিংমল। যেখানে ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে কোনো কিছু বন্ধ হবে না। কেনাকাটায় থাকবে না স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
ভরসা যখন অনলাইন
আস্তে আস্তে ভরসার স্থান হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে অনলাইন। যেকোনো প্রয়োজনে এখন অনলাইনই সবার ভরসার জায়গা। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত নিত্যব্যবহার্য উপকরণ এখন নিমেষেই অনলাইন থেকে কেনা যায়। এবার ঈদের কেনাকাটাও হোক অনলাইনে। শাড়ি থেকে জুতা, গয়না থেকে কসমেটিকস—সবই পাওয়া যাচ্ছে ভার্চ্যুয়াল শপে। এক ক্লিকেই ঘরে পৌঁছে যাবে আপনার পছন্দের পণ্যটি। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ই-কমার্স খাত এগিয়ে যাচ্ছে। মহামারি করোনার কারণে অগ্রগতির ধারাটি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন ঘরে বসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ কেনা যাচ্ছে। ঈদের সময় এ বিক্রি বেড়ে যায় বহুগুণ। ঈদের সময় পোশাক, গয়না, জুতা, কসমেটিকস বেশি বিক্রি হয়।
বাহারি পণ্যের পসরা
‘আপনি যা চাইবেন তা–ই পাবেন’ অনলাইনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ কথাটিই প্রযোজ্য। এমন কোনো উপকরণ নেই যে আপনি অনলাইন পাবেন না। তর্জনীর এক পরশেই হয়ে যাবে ঈদের সব কেনাকাটা। বা বৃদ্ধাঙ্গুলিও হতে পারে অথবা মাউসের একটা ক্লিক। কেননা এখন সব পোশাক এবং অনুষঙ্গের পসরা অন্তর্জালে সাজানো। ঈদের নানা সম্ভার নিয়ে তৈরি হয়ে আছে ইন্টারনেটভিত্তিক দোকানগুলো। ফেসবুকের নীল–সাদা দুনিয়ায়ও ঠাঁই করে নিয়েছে গয়না, চুড়ি, শাড়ি, জামা ইত্যাদি।
ফ্যাশন হাউস
ঈদ উপলক্ষে আড়ং তাদের অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। আড়ংয়ের ওয়েবসাইটে শাড়ি, কুর্তা, সালোয়ার-কামিজ, ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, গয়না, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। পোশাক কেনাকাটায় ঈদ আয়োজনের সবচেয়ে বেশি আনন্দ।
ঈদে দেশি ঐতিহ্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ধারার প্রতিও ফ্যাশনপ্রেমীদের বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়। তাই দেশি পোশাক সংস্কৃতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ধারার সংমিশ্রণে ঈদের কালেকশন নিয়ে এসেছে লা রিভ। করোনার ঝুঁকি প্রতিরোধে অনলাইন থেকে লা রিভ থেকে কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে। ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে পোশাক সরবরাহের নিশ্চয়তা ছাড়াও লা রিভ অনলাইন দিচ্ছে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুবিধা। লা রিভের প্রধান নির্বাহী মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে বসে ঈদের পোশাক কেনাকাটার ওপরে জোর দিয়েছি আমরা। আর দোকান খোলা থাকলে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরো মেনে কেনাকাটার সুযোগ থাকবে।’
ফ্যাশন হাউস জেন্টলপার্ক অনলাইনে পোশাক বিক্রি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য ডেলিভারি দেবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দিনে দিনে নিজস্ব ডেলিভারিম্যানদের সহায়তায় ডেলিভারি দেবে।
সারা লাইফস্টাইল তাদের ওয়েবসাইটে রেখেছে মেয়েদের জন্য পার্টি ওয়্যার সিঙ্গেল পিস, পার্টি ওয়্যার থ্রি-পিস, এক্সক্লুসিভ শাড়ি, প্রিন্টেড শাড়ি, কুর্তি, প্রিন্টেড থ্রি-পিস, ফ্যাশন টপস এবং ডেনিম। সারার এ আয়োজনে ছেলেদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, চিনো প্যান্ট, জগার্স, কার্গো প্যান্ট, ডেনিম প্যান্ট, পায়জামা। তবে সারার ঈদ আয়োজনে এবার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে আছে ফুল ফ্যামিলি কালেকশন—পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শাড়ি, টি-শার্ট, পোলো শার্ট।
ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারেন অঞ্জন’স, কে ক্রাফট, ক্যাটস আই, রিচম্যান, ইয়েলো, এক্সট্যাসি, দর্জিবাড়ি ইত্যাদি ব্র্যান্ড থেকে। শুধু ওয়েবসাইট নয়, ফেসবুকে তাদের পেজে গিয়েও আপনি কেনাকাটা করতে পারবেন, অর্ডার দিতে পারবেন, এমনকি কথাও বলে নিতে পারবেন।
ই-কমার্স
করোনাভাইরাসের সংকটকালে বাইরে বের হলেই সংক্রমণের আশঙ্কা। এই আশঙ্কার মাঝেই চলে এসেছে ঈদ। দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদ সামনে রেখে বড় আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাকে সুরক্ষা দিতে অনেক আয়োজন করেছে। ফলে বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই। নগদ টাকাহীন কেনাকাটা, দেখা না করে লেনদেন ব্যবস্থা, বিনা মূল্যে হোম ডেলিভারির মতো আয়োজন করে তারা ক্রেতাকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে চেষ্টা করছে।
আজকের ডিল ডট কম ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও নানা পণ্যের সমারোহ করেছে। ই–ভ্যালি থেকে ঈদের যেকোনো ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্য ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নামীদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বা এফ-কমার্সভিত্তিক উদ্যোক্তাদের ঈদের পণ্য এখানে পাওয়া যাবে।
প্রিয় শপের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, গ্রাহককেন্দ্রিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। তাই এই সংকটকালে গ্রাহকদের যেন ঘরের বাইরে বের হতে না হয়, সে জন্য আমাদের টিম কাজ করছে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে। গ্রাহকদের যে ধরনের পণ্য প্রয়োজন, তেমন পণ্য যেন গ্রাহকেরা পেতে পারেন—সে জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রিয় শপের কর্মিবাহিনী।
মহামারিতে বাগডুম ডটকমে ঘরে বসে শপিং করার সুবিধা রয়েছে। বাগডুমে রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের হাতে তৈরি পাট ও পাটজাত পণ্য এবং দেশি উদ্যোক্তাদের তৈরি পোশাক। দারাজসহ আরও বেশি কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ঈদে নতুনভাবে সাজিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ঈদ উপলক্ষে নতুন নতুন ঈদপণ্য দিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইট সাজিয়েছে।
এফ-কমার্স
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ফেসবুক পেজও নতুন নতুন পণ্য দিয়ে সাজিয়েছে। তেমনি একটি ফেসবুক পেজ কাদম্বরী এক্সক্লুসিভ শাড়িজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার তাসনীম হোসেন জানান, ‘দেশীয় সব ধরনের শাড়িতে নিজস্বতায় আঁকা নকশা জীবন্ত করা হয় সুই-সুতোর মাধ্যমে। আর প্রতিটি শাড়ির নকশায় ফুটানো হয়ে থাকে আমাদের দেশ-সংস্কৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যেকোনো অনুষ্ঠানে দেশীয় এই শাড়িগুলো ফ্যাশনে ভিন্নমাত্রা নিয়ে আসবে।’ কাদম্বরী ফেসবুক পেজে সারা দেশ থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারিতে অর্ডার করা যায়। এবং দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ডেলিভারি করা হয়।
ফেসবুকে কেনাকাটার আরেকটি বড় সুবিধা হলো, ওয়েবসাইট থাক বা না থাক, সব ব্র্যান্ডই তার ক্রেতার জন্য সহজ যোগাযোগের দরজা খুলে রেখেছে ওখানে। আঙুলের ছোঁয়ায় স্ক্রল করেই দেখে নেওয়া যাচ্ছে সব পণ্যের খুঁটিনাটি ও বিশেষ সংগ্রহগুলো।
একদম দেশি ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসতে পারেন টুশিল নামের পেজে। ওই পেজেই অর্ডার দিতে পারেন, তিন দিনের মাথায় পণ্য বুঝে নেবেন বাসার দরজা থেকে। কুরিয়ারের খরচটা দিতে হবে তখনই। একটু ভিন্ন ধাঁচের স্বাদ পেতে এমন অনেক পেজ রয়েছে ফেসবুকে। চাইলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন নিমেষেই। ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন ফ্যাশন পোর্টাল ‘বোনাঞ্জা লাইফস্টাইল’। দেশের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি শাড়ি, হাতের কাজের নকশি শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ বিক্রি করে থাকে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই উন্নত মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করায় খুব দ্রুত গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে পোর্টালটি। বাংলাদেশে এফ-কমার্সে ঈদের সময় পণ্য বিক্রি বেড়ে যায় বহুগুণে। ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের পেজ থেকে পছন্দের ঈদের উপকরণটি কিনতে পারেন আপনিও।
বিশেষ সুবিধা
আড়ংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আড়ং থেকে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করলে বিশেষ অফারে কেনা যাবে। এ ছাড়া কোনো কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে নগদ ছাড়, ক্যাশব্যাক ও উপহার দিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে গিফট ভাউচার। কিছু কিছু ই-কমার্স ও এফ–কমার্স ক্রয় করা পণ্য বিনা মূল্যে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। রয়েছে নানা অফার ও ছাড়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ‘ফ্রি ডেলিভারি ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিকাশের মাধ্যমে দারাজ, আজকের ডিল, সেবা এক্স ওয়াই জেড, পিকাবু, ট্রেন্ডি ট্র্যাকার, লেইস ফিতা, দ্য মল, বই বাজার, সাদ মার্ট, এয়ার ব্রিংআর, পেঙ্গুইন ডটকম, ডায়াবেটিস স্টোর, রমণী, বিডি শপে পেমেন্ট বিকাশ করলে পাওয়া যাচ্ছে ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক। এ ছাড়া নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে ক্রয় করলে বিভিন্ন অফার ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।