ঘুম কেন কম?

সুস্থ থাকতে ঠিকমতো ঘুম দরকার।
সুস্থ থাকতে ঠিকমতো ঘুম দরকার।

সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর রাতে আরামের ঘুমের চেয়ে শান্তির আর কিছু নেই। ক্লান্তি দূর করতে সবচেয়ে উপকারী ঘুম। তবে কম ঘুম হওয়া অনেকেরই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুগ যত আধুনিকতার দিকে যাচ্ছে, ততই যেন ঘুম কমছে আমাদের।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ম্যাট ওয়াকার বলেন, ১৯৪০ সালে একজন মানুষ রাতে গড়ে আট ঘণ্টার বেশি সময় ঘুমাত। আর এখন মানুষের গড় ঘুমের সময় ৬ দশমিক ৭ থেকে ৬ দশমিক ৮ ঘণ্টা। অর্থাৎ প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে ঘুমের সময়।

বিবিসি অনলাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ম্যাট ওয়াকার ঘুম কম হওয়ার বেশ কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেন। তা হলো:

. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল
কাজের ব্যস্ততা তো থাকেই। নিজেকে চাঙা রাখতে অনেকেই বারবার চা বা কফি পান করেন। কিন্তু এগুলো বেশি পান করলে আমাদের ঘুম বাধাগ্রস্ত হয়। কম ঘুমের এটি একটি কারণ।

২. আবহাওয়া
নরম গদি ও শীতলীকরণ যন্ত্র ব্যবহার করে আমরা আরাম করে ঘুমাতে চাই। তবে তাতেও আছে বিপত্তি। ভালো ঘুমের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশই যথেষ্ট। আমাদের প্রকৃতি সেইভাবেই তৈরি। সূর্য ডুবে সন্ধ্যা হওয়ার পর ঘর এমনিতেই ঠান্ডা হতে থাকে। আবার ভোরে সূর্য ওঠার পর তাপ বাড়তে থাকে। তখন বিছানা ছাড়ার সময় হয়।

. প্রযুক্তির ব্যবহার
আধুনিক প্রযুক্তি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে যথেষ্ট। শুধু ঘরের বাতি নয়, মোবাইল, ল্যাপটপসহ বহু যন্ত্রে ব্যবহার হয় এলইডি স্ক্রিন। এগুলোর নীল আলো আমাদের মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়। এই মেলাটোনিনই আমাদের ঘুমের সংকেত দেয়। ফলে ঘুম কমে যায়।

৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার
গভীর রাত পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়। দেখা যায়, অনেকে ঘুমাতে গিয়েও বারবার উঠে ফেসবুকে ঢোকেন। ই-মেইল চেক করেন। এগুলো ঘুমের বারোটা বাজাতে যথেষ্ট।

৫. কাজের জন্য ঘুম কমিয়ে দেওয়া
কাজের জন্য অনেকে ঘুমকে বিসর্জন দেন। প্রচলিত আছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, বারাক ওবামা, মার্গারেট থ্যাচারের মতো বিশ্বনেতারা দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা বা তার চেয়ে কম সময় ঘুমের জন্য ব্যয় করেন। অনেকে ভাবেন, ঘুম কম হয় হোক। কাজ করে যেতে হবে। কিন্তু এতে ঘটতে পারে বিপত্তি।

ওয়াকার বলছেন, বাস্তবতা হলো যাঁরা ছয় ঘণ্টা বা তার কম সময় ঘুমান, তাঁদের কিছু না কিছু ক্ষতি হবেই। দিনে সাত ঘণ্টার কম সময় ঘুমালে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। আলঝেইমার, ক্যানসার, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উদ্বিগ্নতা, হতাশা, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি হয় কম ঘুমের কারণে।

(বিবিসি অবলম্বনে শাকিলা হক)