চাকচিক্যের চিক

ঘরে বা বারান্দায় বাঁশের চিক ব্যবহারের সুবিধা হলো, রোদ বা বাতাস-কোনোটি ঢুকতেই বাধা পায় না। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, দেয় চোখের প্রশান্তিও

অন্দরে চিকের ব্যবহার নিয়ে আসে ভিন্নতা।ছবি: নকশা

‘এবার কার্তিক মাসে পূজা। গ্রামের জমিদার শীতলাবাবুর বাড়িতে তিন দিন যাত্রা, পুতুল নাচ, বাজি পোড়ানো, সাতগাঁ মেলা-পূজা তো আছেই। আসরে যখন তাহারা পৌঁছিল, যাত্রা আরম্ভ হইতে বিলম্ব আছে। চিকের আড়ালে জায়গার জন্য কলহ শুরু হইয়া গিয়াছে ইতিমধ্যেই। সকলেই চিক ঘেঁষিয়া বসিতে চায়। এসব বিষয়ে কুসুম ভারী ওস্তাদ।’

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসে ধনাঢ্য বাড়িতে চিক ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। বোঝাই যাচ্ছে, আভিজাত্য বোঝাতেই জানালা-দরজায় বাঁশের চিক ব্যবহারের প্রচলন ছিল। এখনো এর তেমন পরিবর্তন হয়নি। অন্দরে শৈল্পিক আবহ তৈরি করতে চিকই মানানসই। এ ছাড়া ঘরে আলোর খেলার ছন্দ যাঁদের পছন্দ আর একটু প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চাইলে বাঁশের চিক অনায়াসেই বসিয়ে নিতে পারেন।

চিকের ব্যবহার

জানালা বা দরজায় পর্দা ব্যবহার করলে অনেকেই একটু বড় বা ঝুল বেশি, এমন পর্দা ব্যবহার করেন। কিন্তু চিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমনটি নয়। দরজা, জানালা বা বারান্দার গ্রিলে ব্যবহারের সময় বানাতে হবে সঠিক মাপে। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বেশি হওয়া যাবে না। এতে করে চিক বা চাটাই ওঠা-নামা করাতে বেশ সমস্যা হবে। বাঁশের চাটাইয়ের বুননের ফলে মাঝে মাঝে ফাঁকা থাকে। তাই চাইলে পেছনের দিকে পাতলা মার্কিন কাপড় দিলেই গোপনীয়তা থাকবে, আবার দেখার সৌন্দর্যও কমে না, বলেন অন্দরসজ্জা প্রতিষ্ঠান চতুষ্কোণের পরিচালক কান্তা কবির।

বৃষ্টি হলে

এখন প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, এতে বাঁশের চিকের ক্ষতি হতে পারে। কান্তা কবির বলেন, এতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ, চিক তৈরির সময়ে বাঁশ খুব ভালোভাবে পানিতে ভিজিয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তবে প্রথম দিকে বৃষ্টিতে ভিজলে বাঁশের হালকা গন্ধ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভেজা চাটাই গুটিয়ে রাখা যাবে না, খুলে দিতে হবে। রোদ আর বাতাসে চিক আবারও শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাবে।

বার্নিশ

চাটাইয়ের ওপরে বার্নিশ দিলে চিক দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। উজ্জ্বলতাও বাড়বে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক উপাদান পোকা কাটতে পারে, তাই ঘুণ থেকে সুরক্ষা দেয়, এমন বার্নিশ করা যায়। এ ছাড়া আলো-বাতাস আসে, স্যাঁতসেঁতে নয়, এমন স্থানে চিক ব্যবহার করলে পোকা আক্রমণ করতে পারে না।

ময়লা হলে

চিক সব সময় পরিষ্কার করার দরকার নেই। সাধারণত ময়লা ঝেড়ে ফেলে দিলেই হয়। তবে দীর্ঘদিন হলে হালকা সাবানপানি কাপড়ে লাগিয়ে পরিষ্কার করা যাবে।

নষ্ট হলে

বাঁশের চিক সাধারণ নষ্ট হয় না। তবে চিক যেহেতু সুতা দিয়ে বোনা হয়, তাই দীর্ঘদিনে সুতা পচে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুই বছর পর দোকানে নিয়ে আবার বুনিয়ে আনা যাবে।

সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে

শুধু জানালা বা দরজায় ব্যবহার না করে একরঙা দেয়ালে চিক কিছুটা গুটিয়ে ঝোলালে দেয়ালের সৌন্দর্য বাড়ে। এ ছাড়া ঘরের কোনো অনুষঙ্গ আড়াল করতে চিকের ব্যবহার দারুণ হতে পারে, বলেন চতুষ্কোণের পরিচালক কান্তা কবির।

কোথায় পাবেন

অনলাইন পেজ দেশি পণ্যে চাইলেই ফরমাশ দিতে পারেন বাঁশের চিকের। প্রতি বর্গক্ষেত্র ৯০ টাকা খরচ পড়বে। আর পাশে বর্ডার দিতে চাইলে পড়ে ১০০ টাকা। এ ছাড়া গ্রিন রোডের বাঁশ-বেতের দোকান, মিরপুর রোডের মৃৎশিল্পের দোকানে পছন্দমতো চিক বুনিয়ে নিতে পারেন