চাকরির ধারণা কি বদলে যাচ্ছে?

প্রথাগত অফিসের বাইরে, ঘরে কিংবা কফিশপে বসেও যে দিব্যি কাজ করা যায়, তা এখন বাস্তব। স্থায়ী কর্মীর বদলে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। ভবিষ্যতের কর্মজীবনে কি বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে? চাকরির ধারণা কি বদলে যাচ্ছে? লিখেছেন বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডোবির স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অপারেশনস ম্যানেজার ন্যান্সি হক।

গত বছর প্রযুক্তির রাজধানীখ্যাত সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ তরুণ নির্বাহী, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের নিয়ে ‘ফোরটি আন্ডার ফোরটি’ তালিকা প্রকাশ করেছিল সিলিকন ভ্যালি বিজনেস জার্নাল। সেখানে স্থান পেয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণী।

তবে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র নির্ভর করে পুরো ইন্ডাস্ট্রির ওপর। বর্তমানে কোন দক্ষতা আমার আছে, তা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য কোন দক্ষতা আমি গড়ে তুলছি কিংবা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি, সেটাই বদলে দেবে ভবিষ্যতের কর্মজীবন। মহামারি–পরবর্তী পৃথিবীতে ব্যবসা কীভাবে পরিচালিত হবে, কীভাবে সামনে এগোবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে—এসবও গুরুত্বপূর্ণ।

যেকোনো জায়গায় থেকে অফিসের কাজ করার সক্ষমতা যেহেতু হয়ে গেছে, তাই আমি আমার কর্মক্ষেত্রের কতটা কাছে আছি কিংবা দূরে আছি, সেসব আর ধর্তব্য নয়। ভিন্ন ভিন্ন টাইম জোন বা প্রযুক্তির সঙ্গেও আমরা খাপ খাইয়ে নিতে পারি।

অলংকর‌ণ: এস এম রাকিব

আমার স্বামী বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের ‘রিমোট ওয়ার্কার’। অর্থাৎ কাজের জন্য তাঁকে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হয় না। তাঁর বক্তব্য, এটা নির্ভর করে জটিল বিষয়গুলোতেও আমরা কতটা কার্যকরভাবে সমন্বয় ও যোগাযোগ করতে পারছি, তার ওপর।

কেবল ই–মেইল, ফোন কিংবা মুখোমুখি বসে মিটিংয়ের ওপর আমরা এখন আর নির্ভরশীল নই। হোয়াটসঅ্যাপ, স্ল্যাক, স্কাইপ, টিমস ইত্যাদি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভিডিও কল করা এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। এ সময়ের অনেক কাজ কেবল ডেটা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা, কীভাবে ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে হয়, তা জানা এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে ওঠা—এসব দক্ষতার ওপরই এখন জোর দেওয়া দরকার। আপনি যে শিল্পেই কাজ করেন না কেন, এসব দক্ষতা আপনার কাজে লাগবে।

কারিগরি ধারণাসহ যদি আমরা আমাদের তরুণদের শিক্ষিত করতে পারি, তাহলেই তাঁদের মধ্যে সমস্যা সমাধান (প্রবলেম সলভিং) ও তুরীয় চিন্তার (ক্রিটিক্যাল থিংকিং) দক্ষতা তৈরি হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ফিউচার জবস রিপোর্ট’ অনুযায়ী এই দুটিই হবে আজ থেকে ৫-১০ বছর পরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা।

ভবিষ্যতের দক্ষতা, ভবিষ্যতের কাজের জন্য আপনার মধ্যে আরও বড় হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। যেকোনো সময় যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে জানতে হবে। সে জন্য নিরবচ্ছিন্ন উদ্ভাবন, উদ্যোগ এবং পরিবর্তনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া দরকার। এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে ব্যর্থতা কেবলই সফলতার পথ দেখানো একটা নতুন ‘ডেটা’। আর সেই পথে আমাদের তরুণেরাই নেতৃত্ব দেবেন।