চেক ইন ফেসবুক
>

যুক্তরাষ্ট্রে সেদিন ঈদ উদ্যাপন হচ্ছিল। তাই ফেসবুক অফিস ঘুরতে গিয়ে লেখক ফেসবুকের সত্যিকারের ‘ওয়ালে’ লিখলেন ঈদ মোবারক। এক ছাদের নিচে সিলিকন ভ্যালির বিশাল সেই কার্যালয় ঘুরে লিখেছেন সিমু নাসের

তোপরাজ পইপই করে বলে দিয়েছে, যেই দেখবেন স্টেশনে বড় বড় করে লেখা ‘মেনলো পার্ক,’ তখনই লাফ দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়বেন। এর পরের টেনশন আমার ঘাড়ে। দৈত্যাকৃতির বিশাল দোতলা ট্রেন। ওপরের তলায় বসার ইচ্ছে থাকলেও তোপরাজের কথামতো লাফ দিয়ে নামতে সুবিধা হবে বলে বসেছি নিচতলায়। ফেসবুকের কর্মী নেপালি ছেলে তোপরাজ। পরিচয় হয়েছিল চীনের কুনমিং বিমানবন্দরে ঘুরতে গিয়ে। স্টেশনে স্টেশনে এক-দুই মিনিট থেমে থেমে ট্রেন ছুটছে সাঁইসাঁই করে। যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো থেকে সান হোসে শহরের দিকে। মধ্যখানের পুরো জায়গাটাকেই বলা হয় সিলিকন ভ্যালি। পৃথিবী বিখ্যাত সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস। তাই ‘ক্যালট্রেন’ নামের এই শাটল ট্রেনটিও পুরোটাই ভর্তি অ্যাডোব, গুগল, ইন্টেল, ইয়াহু, ফেসবুক, এইচপিসহ হাজার হাজার ছোট বড় নানা প্রতিষ্ঠানের কর্মীতে।

২৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক অফিসের পথ ধরলাম। যুক্তরাষ্ট্রে সেদিন ঈদ। ট্রেনে উঠে মনে হলো, আরে ঈদের দিনই যখন যাচ্ছি ফেসবুকে, তখন বাংলাদেশি কেউ থাকলে একটু কোলাকুলি করা যাবে। ফেসবুকে কে আছে বাংলাদেশের? খোঁজাখুঁজির কাজে সবচেয়ে ভালো গুগল। তাই ফোন দিলাম গুগলকর্মী শিশির খানকে। উনি বললেন, ‘হ্যাঁ আছে তো। তিন-চারজন আছে। এর মধ্যে অবশ্য একজন খাঁটি বাংলাদেশি, সরাসরি বাংলাদেশ থেকে এসেছে। আর বাকি দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। জন্ম, বেড়ে ওঠা এখানেই।’
খাঁটি বাংলাদেশিকেই পাওয়া গেল। ইশতিয়াক হোসেন জিশান। ট্রেন চলতে চলতেই মেইল দিলাম তাকে। ১০ মিনিটেও কোনো জবাব নাই। আরও কিছুক্ষণ পরে জবাব এল, ‘ঈদের দিন হলেও আমি অফিসেই আছি, ভালোই হলো, সামনাসামনি কাউকে তো অন্তত ঈদ মোবারক বলা যাবে। তবে আড়াইটা থেকে তিনটা আমার একটা মিটিং আছে। এর আগে ও পরে আমি ফ্রি। আর এই যে আমার নম্বর, এসে ফোন দিয়েন।’ এসব করতে করতে কখন যে মেনলো পার্ক পার হয়ে পরের স্টেশন পালো অ্যালটোতে চলে এসেছে ট্রেন খেয়ালই করিনি। হুড়মুড় করে নামলাম সেখানে। আর ওদিকে তোপরাজ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেনলো পার্কে। তাকে ফোন দিয়ে বললাম, ‘শোনো, সোজা তোমাদের অফিসে চলে আসছি, তুমিও ওখানেই আস।’ ২০ মিনিটের মধ্যে বেশ কিছু ডলার গচ্চা দিয়ে হাজির হলাম ফেসবুকে।

পৌঁছে পড়লাম আরেক ফ্যাসাদে। রাস্তার এপারে একটা ফেসবুক আর ওপারে আরেকটা। যাব কোনটায়! মুশকিল আসান করতে ভোজবাজির মতো কোথা থেকে জানি তোপরাজ হাজির হলো। সে বলল, আমরা এখন যেটায় আছি, সেটা নতুন বিল্ডিং। কিছু দিন আগেই উদ্বোধন হয়েছে এর। এটার ছাদেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছাদবাগান। আর ওই পারেরটা পুরোনো বিল্ডিং। দুটোতেই ফেসবুকের কাজ চলে। কোনটায় আগে যাবে?
ফেসবুকের এক দালান থেকে আরেক দালানের মাঝখানে ব্যস্ত রাস্তা। প্রচুর গাড়ি চলছে। যোগাযোগের জন্য তাই রাস্তার নিচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাতালপথ। সে পথ দিয়ে ফেসবুকের নিজস্ব নীল রঙের সাইকেল নিয়ে যাওয়া যায়, একটু লম্বাটে খোলা বাসে করে যাওয়া যায়, যেটা একটু পরপরই এ–দালান ও–দালান করছে, আর হাঁটার ব্যবস্থা তো আছেই। হেঁটেই চললাম।
রাস্তা পার হতেই চোখে পড়ল বিশাল বড় একটা ‘লাইক’ সাইন। সেটার চারদিকে আবার বেশ নকশা কাটা। অনেকটা আমাদের দেশের মিষ্টির প্যাকেটের মতো। তার নিচে লেখা ফেসবুক, ১ হ্যাকার ওয়ে। ফেসবুক ঘুরতে আসা লোকজন নানা ভঙ্গিমায় তার সামনে ছবি তুলছে। আমরাও তুললাম।
আমি একটু পিছিয়ে সাইনবোর্ডটার পেছনে গিয়ে দেখি উল্টা দিকে বড় করে আরেক প্রতিষ্ঠান সান মাইক্রোসিস্টেমসের লোগো লাগানো। তোপরাজ বলল, ‘ফেসবুকের এই পুরোনো অফিসটায় আগে ছিল সানের অফিস। তারা চলে যাওয়ার পর এই সাইনবোর্ডটা উল্টে শুধু ফেসবুক লাগানো হয়েছে। সাইনবোর্ড রিসাইকেল আরকি!’

পুরোনো অফিসটা বাইরে থেকে দেখতে লালচে রঙের। একটু চতুর্ভুজ আকৃতির। সেটার গেটে ব্যাপক নিরাপত্তা। একজন আইপ্যাডে আমাদের নাম লিখে নিয়ে গলায় ঝোলানোর কার্ড দিলেন। আমরা সে কার্ড ঝুলিয়ে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের আজব কারখানায় ঢুকে পড়লাম।
ঢুকেই মনে হলো শহরের মধ্যে যেন আরেকটা শহরে এসে ঢুকলাম। মাঝখানে সুপরিসর আঙিনা আর তার চারদিকে একটানা দালান। জাকারবার্গের ধারণাই ছিল এটাকে একটা শহরেরই রূপ দেওয়া। প্রয়োজনীয় সবই আছে এই শহরে। চুল কাটার দোকান, খাবারের দোকান, জুতার দোকান, কাপড় কেনার দোকান, কফিশপ, ভিডিও গেমস ইত্যাদি।
বিশালাকার টিভি পর্দা। তাতে কবে ফেসবুকে কী হবে সেগুলোর রংচঙে নোটিশ, বিজ্ঞাপন। এর নিচে কাচের দেয়াল দেওয়া একটা ঘর। ঘরটা বাইরে থেকে খালিই মনে হলো। কাচের গায়ে একটা নোটিশ সাঁটানো—দয়া করে প্রাণীর ছবি তুলবেন না। তোপরাজ জানাল, নতুন বিল্ডিং হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অফিসের এই কাচের ঘরে বসেই অফিস করতেন মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুক ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা কাচের বাইরে থেকে চিড়িয়াখানার প্রাণীর মতো করেই নাকি তাঁর ছবি তুলত। সে জন্য মার্ক একদিন মজা করে ‘প্রাণী’র ছবি না তোলার এই নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছিলেন।

একটু সামনে এগোতেই দেখি বেশ রংচঙে দোকান। ভেতরে রংতুলির ছড়াছড়ি। মজার মজার উদ্ধৃতি-সংবলিত নানা রঙের পোস্টার ঝুলছে চারদিকে। তোপরাজ জানাল, ফেসবুক অনেক স্থানীয় শিল্পীকে এখানে নিয়ে এসেছে কাজ করার জন্য। তারা ফেসবুকের নানা অনুষ্ঠানের জন্য পোস্টার নকশা করে, অফিসটাকে নিজের মতো করে রাঙায়, বই ডিজাইন করে। বেশ কিছু পোস্টার চেয়ে নিলাম একজন শিল্পীর কাছ থেকে। সেখান থেকে বের হয়ে আমাদের একটু তেষ্টা মতো পেল, ঢুকে গেলাম একটা ফ্রি আইসক্রিম পারলারে। সুস্বাদু আইসক্রিম হাতে নিয়ে ঢুঁ মারলাম ভিডিও গেম খেলার জায়গায়, ফেসবুক প্রকৌশলীদের সঙ্গে খেললামও কিছুক্ষণ। স্যুভেনির শপে ঢুকে কিনলাম ফেসবুক টি–শার্ট, হুডি, লাইক বাটনের চাবির রিং। তোপরাজ জানাল, এই অফিসের কাজের জায়গায় দর্শনার্থীদের ঢোকার নিয়ম নেই। চলেন ওই অফিসে যাই। ভেতরটা ঘুরে দেখাই। তবে এই অফিসে একটা মজার জিনিস আছে।

অফিসের ছোটখাটো জিনিস যেমন িকবোর্ড, মাউস, চার্জার ইত্যাদির জন্য আইটি ডিপার্টমেন্টে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না, ভেন্ডিং মেশিন আছে। কার্ড ছোঁয়ালেই নির্দিষ্ট প্রয়োজনের জিনিসটা হাতে চলে আসে। আর এই ফেসবুক শহরেই শুক্রবার করে বসে মার্কের টাউন হল কিউএ সেশন (ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর-পর্ব)। সেখানে মার্ক তাঁর সপ্তাহের লক্ষ্যের কথা বলেন আর ফেসবুকারদের প্রশ্নের জবাব দেন।
আমরা নতুন অফিসের দিকে হাঁটতে শুরু করে ফোন দিলাম জিশানকে। জিশান জানাল, তার সভা শেষ। এখানে মূলত সে কাজ করছে ফেসবুক সার্চ নিয়ে। ফেসবুকে তার চাকরির বয়স সাড়ে তিন বছর। লবিতে ঢুকতেই জিশান বিশাল করে ঈদ মোবারক বলে হাত বাড়িয়ে দিল। তোপরাজকে আপাতত বিদায় দিয়ে জিশান আমাদের প্রথমেই নিয়ে গেল নতুন অফিসের প্রধান আকর্ষণের ছাদে।
নয় একরের বিশাল এই ছাদটা দেখলে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। চারদিকে সবুজ খেলার মাঠ, বারবিকিউ করার জায়গা, দোলনা, মাঝে আর চারপাশ দিয়ে সুন্দর হাঁটার রাস্তা, ল্যাম্পপোস্ট—কী নেই সেখানে।

ছাদ থেকে অনেক দূরে না তাকালে বোঝাই যায় না যে এটা একটা বিল্ডিংয়ের ছাদ। মনে হয় শহরেরই কোনো একটা সুপরিসর পার্কে এসে হাজির হয়েছি। এখানে ইতিমধ্যেই লাগানো হয়েছে বিশাল আকারের ৪০০ গাছ। ছোট ছোট ফুলগাছের তো অভাব নেই। বিখ্যাত স্থপতি ফ্রাঙ্ক গেরির ডিজাইন করা ৪ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুটের এই অফিসের ছাদটা একসময় পাখির কলকাকলিতে ভরে যাবে—এটাই জাকারবার্গের চাওয়া। বলা হচ্ছে, এটাই এই সময়ের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ছাদ বাগান। চাইলেই সেখানে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চারদিকে অসংখ্য ফেসবুক কর্মী গল্প করতে করতে হাঁটছে। আমরা ঘণ্টা খানেক সেখানে কাটিয়ে বিস্ময়ভরা মন নিয়ে ছবিটবি তুলে নিচে নেমে এলাম।
বিশাল এই ঝকঝকে অফিস ভবনে এখন কাজ করছে ২ হাজার ৮০০ ফেসবুক প্রকৌশলী। মাঝেমধ্যে টয়লেট, সভাকক্ষ আর লিফটের জায়গাটুকু ছাড়া পুরোটাই একটা খোলা জায়গা। কর্মীদের বেশির ভাগই লম্বা ডেস্কে দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, কেউ আবার সোফায় শুয়ে কাজ করছে। যতটুকু চোখে পড়ল, সবাই গম্ভীরভাবে প্রোগ্রামিং নিয়েই খেলছে। পর্দায় হিজিবিজি লেখা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। ব্যাপক কর্মময় পরিবেশ।

আশপাশের যে সভাকক্ষগুলো চোখে পড়ল, সবগুলোর একটা করে নাম আছে। জিশান জানাল, সবগুলো রুমের নামই বিখ্যাত কোনো সিনেমার ডায়ালগ, কোনো ঘটনা বা প্রবাদ–প্রবচনের অংশ। একপাশে একটা কাচের ঘর, যার মাঝখানে একটা লম্বা টেবিল আর চারদিকে কয়েকটা চেয়ার ছাড়া কিছু নেই সেটা দেখিয়ে জিশান বলল, ‘অফিসে এসে জাকারবার্গ এই রুমটাতেই বসেন সাধারণত। তবে আজকে আসবেন না। আমাদের ই-মেইল করে জানিয়েছেন। এ সপ্তাহে তাঁর ব্যস্ত শিডিউল, জাতিসংঘে ভাষণ, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর ইত্যাদি।’ ভাবলাম, আহা! অন্য সময় এলে নিশ্চয়ই দেখা হয়ে যেত মার্কের সঙ্গে, হোক না সেটা বাইরে থেকেই।
জিশান হাঁটতে হাঁটতে সিলিংহীন ভবনের ওপরের দিকটা দেখিয়ে বলল, এই দালান দেখে আপনার কী মনে হচ্ছে? আমি একটু চুপ করে বললাম, মনে হচ্ছে যেন কী একটা করা বাকি আছে বিল্ডিংটায়—অসমাপ্ত। জিশান বলল, ‘একজাক্টলি তাই।’

তখনই আমার মনে পড়ল নতুন বিল্ডিংয়ে অফিস শুরু করার দিন জাকারবার্গ তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলেছিলেন, ভবনের ভেতরে যারা ঢুকবে, তাদের আমরা এমন একটা অনুভূতি দিতে চাই, যেন মনে হয় আমরা একটা অসমাপ্ত জিনিসের ভেতর আছি। এই পুরো পৃথিবীকে একই সুতায় গাঁথতে আমাদের আরও কত কাজ করা বাকি। এর স্থপতি সেখানে পুরোই সফল।
জিশান নিয়ে এল একটা দেয়ালের পাশে, সত্যিকারের দেয়াল—ফেসবুক ওয়াল। যেখানে চক দিয়ে মানুষজন হাজার হাজার কথা লিখে রেখেছে। জিশান বলল, ‘এখানে ফেসবুক দর্শনার্থী, কর্মীরা তাদের মনের কথা লিখে রেখে যায়। চাইলে কিছু লিখতে পারেন।’ ভেবে দেখলাম, ঈদের দিন, তাই সবাইকে ঈদ মোবারক লিখে শুভেচ্ছা জানানোই ভালো। মোটা লাল চকে বড় বড় করে ‘ঈদ মোবারক’। লিখে ছবি তুললাম বেশ কিছু। হঠাৎ এক ফেসবুক কর্মী আমার দিকে আঙুল তুলে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, ঘুরতে এসেছ? আমি বললাম হাঁ। তিনি বললেন, বেশ, কিন্তু কোনো ফেক অ্যাকাউন্ট নাই তো ফেসবুকে?

আমি বললাম, ‘না আমার একটাই অ্যাকাউন্ট, কেন?’ তিনি বললেন, ‘বেশ। ফেক অ্যাকাউন্ট খুলবে না। অপরকেও নিরুৎসাহিত করবে। ব্রিটেনে একজন নিজেই নিজের একটা ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের অ্যাকাউন্টে হয়রানিমূলক মেসেজ পাঠিয়ে ২০ মাসের জন্য জেলে ছিলেন, বুঝেছ?’ বলে হাত বাড়িয়ে হেসে দিয়ে আমার সঙ্গে পরিচিত হলেন। তিনি একজন ফেসবুক প্রকৌশলী, এখানে আছেন চার বছর হয়। আমি বললাম, ‘ফেসবুক সম্পর্কে তো আমরা সবকিছুই জানি। তুমি তো এত বছর ধরে আছ। এমন একটা তথ্য দাও, যা আমরা জানি না।’ সে একটু ভেবে বলল, ‘২০১৩ সালের ফেসবুকের জন্মদিনে আমি অফিস থেকে একটা স্ট্রাইপড পায়জামা উপহার পেয়েছিলাম। এই তথ্য তুমি আর কোথাও পাবে না। হা–হা–হা–হা।’