চেক একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল। হস্তান্তরযোগ্য দলিল মানে এক টুকরা কাগজ, যা একজন ব্যক্তিকে কিছু টাকার অধিকারী করে এবং তা কেবল অর্পণের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে হস্তান্তরিত হয়। যাঁকে দেওয়া হয় তিনি চেক অর্থাৎ ওই কাগজে উল্লেখিত টাকার অধিকারী হন। তিনি আবার তা হস্তান্তর করতে পারেন।
প্রখ্যাত আইনবিদ টমাস বলেছেন, হস্তান্তরযোগ্য দলিল হলো একটি লিখিত দলিল। এটি আইনস্বীকৃত ব্যবসায় রীতি বা আইন অনুযায়ী অর্পণে এমনভাবে হস্তান্তরযোগ্য যে কারণে—ক. এটির ধারক যেকোনো সময় নিজ নামে উক্ত বিষয়ে মামলা দায়ের করতে পারে, খ. এর কোনো হস্তান্তরকারীর অধিকারে কোনো দোষ থাকা সত্ত্বেও হস্তান্তরসূত্রে পাওয়া প্রকৃত গ্রহীতার কাছ থেকে এর দায়হীন মালিকানা মূল্যের প্রতিদানস্বরূপ হস্তান্তরিত হয়।
ব্যাংক সাধারণত গ্রাহক বরাবর চেক প্রদান করে। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে গ্রাহক সেই চেক ইস্যু করতে পারেন। একটি চেক ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস মেয়াদে কার্যকর থাকে। ওই মেয়াদের মধ্যে তিনবার চেকে উল্লেখিত টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংকের কাছে প্রদান করা যায়।
যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো তাঁর পাওনা টাকা পরিশোধের চেক প্রদান করেন, সে ক্ষেত্রে চেকের প্রাপক চেকটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ছয় মাসের মধ্যে (চেকে দেওয়া তারিখ থেকে) মধ্যে উপস্থাপন করার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি একটি স্লিপ মারফত জানিয়ে দেন যে সংশ্লিষ্ট হিসাব (অ্যাকাউন্ট) নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা কিংবা চেকে উল্লেখিত সমপরিমাণ টাকা নেই, তখন ওই চেকটি ডিসঅনার হয়েছে বলে গণ্য হবে। একে চেক বাউন্স করাও বলে।
এ ক্ষেত্রে যিনি চেক ইস্যু করেছেন, সেই ব্যক্তি হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় একটি অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে গণ্য হবে। এ জন্য তিনি ওই আইনের বিধান ক্ষুণ্ন ছাড়া এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত অথবা চেকের বর্ণিত অর্থের ৩ (তিন) গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাওনাদার ব্যক্তি যদি চেক প্রদানকারীর বিরুদ্ধে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় মামলা করতে চান, সে ক্ষেত্রে চেকটি ডিসঅনার সম্পর্কে অবগত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেকে বর্ণিত টাকা পরিশোধ করার জন্য চেক প্রদানকারীকে লিখিত নোটিশ প্রাপ্তিস্বীকার রসিদসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রদান করবেন।
ক্ষেত্র বিশেষে উক্ত নোটিশ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশও করা যায়। চেক প্রদানকারী ওই নোটিশ পাওয়ার ৩০ (ত্রিশ) দিন পর থেকে মামলার কারণ উদ্ভব হয়। মামলার কারণ উদ্ভবের সময় থেকে এক মাসের মধ্যে চেক ডিসঅনারের জন্য মামলা দায়ের করতে হবে। আর চেক ডিসঅনারের অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে এবং এই অভিযোগ দায়ের করতে হবে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কিংবা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
ওই আইনের ১৩৮ ধারার উপধারা(১)-এ প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে আপিল দায়েরের আগে প্রত্যাখ্যাত চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষেÿশতকরা ৫০ ভাগ টাকা যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন, সেই আদালতে জমা দিতে হবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট