চোখের জলে ভাসলে পরে

চোখের পানিতে চোখ পরিষ্কারের মতো কান্নার আবেগে আমাদের মনও পরিষ্কার হয়। প্রতীকী ছবি।
চোখের পানিতে চোখ পরিষ্কারের মতো কান্নার আবেগে আমাদের মনও পরিষ্কার হয়। প্রতীকী ছবি।

কিছুতেই চোখের জল আটকে রাখা যাচ্ছে না। কান্নার ঢেউ আজ কিছুতেই বাঁধ মানছে না। বুকের ভেতর জমাট বরফ আজ দুচোখ গলে বেরিয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে এমন কান্নায় চোখ ভাসতেই পারে। এতে ভাবনার কিছু নেই। কেননা কান্না মন ও শরীর দুইয়ের জন্যই ভালো। মনোচিকিৎসকেরা বলছেন, কান্নায় লজ্জার কিছু নেই, কান্না এলে কাঁদতে হবে। কান্নার শারীরিক ও মানসিক উপকারিতার কিছু দিক এখানে তুলে ধরা হলো।

চোখ পরিষ্কার করে

কাঁদতে কাঁদতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে! কিন্তু আসলে কান্না আমাদের ভালো করে দেখতে সহায়তা করে। চোখের পানি চোখের মণি আর চোখের পাতা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিয়ে। চোখের ভেতরে এই পানির সঞ্চালন আমাদের চোখকে পানিশূন্যতা থেকেও বাঁচায়। ফলে চোখ পরিষ্কার রাখতে আর ভালো করে দেখতে সাহায্য করে কান্না।

ব্যাকটেরিয়া তাড়ায়

চোখের পানি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টি-ভাইরাস হিসেবে কাজ করে থাকে। রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ট্রামের ধুলো-বালি থেকে সারা দিনে চোখের ভেতর কত ময়লাই না জমা হয়। এগুলো থেকে নানা জীবাণু আমাদের চোখের বাসা বাঁধতে পারে। কিন্তু চোখের পানি এসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংসে খুবই কার্যকর। চোখের পানিতে আইসোজাইম বলে একটা উপাদান থাকে, যা মাত্র ৫-১০ মিনিটেই চোখের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।

মন ভালো করে

মন খুলে কাঁদতে পারলে যে মন হালকা হয় সে অভিজ্ঞতা মনে হয় আমাদের সবারই আছে। কিন্তু কান্নায় মন ভালো হওয়ার জৈবিক কারণও আছে। বলা হয়ে থাকে কান্নায় শরীরে ম্যাঙ্গানিজের মাত্রা কমে। এই ম্যাঙ্গানিজ বেশি মাত্রায় জমতে থাকলে উদ্বেগ, অস্বস্তি, রাগ-ক্ষোভ বেড়ে যাওয়াসহ নানা আবেগি ঝামেলা তৈরি করতে থাকে। কিন্তু কেঁদে ফেলতে পারলে এর মাত্রা কমে গিয়ে শরীর ও মন হালকা হয়।

কান্নায় চাপ কমে

ব্যায়াম বা শরীর চর্চায় যেমন শরীর জড়তামুক্ত হয়, মন ফুরফুরে হয় ঠিক তেমনি কান্নাতেও আমাদের মনের চাপ কমে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে আমাদের শরীরে ‘লিওসিন এনকেফেলিন ও প্রোলাকটিন’ এর মতো কিছু রাসায়নিক জমা হয়। আবার কান্নার অবদমন আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কাঁদতে পারলে এই সব অতিরিক্ত চাপ কমে যায়। নইলে অতিরিক্ত চাপ থেকে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগের সমস্যা এবং পেপটিক আলসারের মতো রোগ হতে পারে।

কান্নায় আবেগের প্রকাশ

কান্না আসলে একটা থেরাপির মতো। এটা উদ্বেগ কাটায়, বিষণ্নতা দূর করে। আর চরম আবেগে কেঁদে ফেলতে পারাটা বহু কারণেই মন ও দেহের জন্য উপকারী। দীর্ঘদিন ধরে আবেগের টুটি চেপে ধরে থাকাটা কোনো কাজের কথা নয়। কেননা মনের কোণে জমে থাকা মেঘগুলো আমাদের মস্তিষ্কেও চাপ তৈরি করে। আসলে অবদমন যত বেশি হয় ততই বেশি হতে থাকে একদিন হঠাৎ বিস্ফোরণের আশঙ্কা। তার চেয়ে মাঝে মধ্যে নিজেকে ছেড়ে দেওয়াটাই ভালো। চোখের পানিতে চোখ পরিষ্কারের মতো কান্নার আবেগে আমাদের মনও পরিষ্কার হয়। টিএনএন অবলম্বনে