ছেলেটিকে মনের কথা বলতে চাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স. 

অধ্যাপক মেহতাব খানম
অধ্যাপক মেহতাব খানম

সমস্যা
আমি বর্তমানে সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি ছোট একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচাতো বোনকে ভালো লাগে। সেও আমাকে ভালোবাসে। তার চরিত্রের সবকিছুই আমার পছন্দ। সমস্যা হলো সে দরিদ্র জেলে পরিবারের সন্তান। আমার পরিবার এই বিয়ের প্রস্তাব মেনে নেবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, লক্ষ্মীপুর।
পরামর্শ
মেয়েটির সঙ্গে কি তোমার কথাবার্তা হয়? একটি মানুষের সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে হলে দুজনের রুচি, মূল্যবোধ ও আর্থসামাজিক অবস্থা কাছাকাছি হওয়া ভালো। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় এমনিতেই বিয়ের সময় মেয়েপক্ষকে কিছুটা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। সে ক্ষেত্রে মেয়েটির পরিবারের সামাজিক অবস্থান ছেলেটির তুলনায় কম হলে বিয়ের পর তাকে নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। দুই পরিবারের সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক তৈরি না হলে, যে দুজন জীবনসঙ্গী হিসেবে একটি সম্পর্ক করে তারা কেউ সুখী জীবন যাপন করতে পারে না। এরপর সন্তানের আগমনের পর দেখা যায় তাদের নিয়েও দুটো পরিবার নানা ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করতে থাকে। যে পরিবারটি পদমর্যাদায় ওপরে রয়েছে তারা তাদের ছেলে বা মেয়ের সন্তানদের অসচ্ছল দাদা বা নানার বাড়িতে যাওয়ার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানাতে থাকে। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব ক্রমাগত শিশুদের ওপরে পড়তে থাকে। ছোটদের কাছে বাবা ও মায়ের আত্মীয়রা সবাই খুব প্রিয় থাকে। তারা এসব টানাহেঁচড়া নিয়ে খুব বিরক্ত হয়। তুমি হয়তো ভাবছ আমি কেন এত দূরের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলছি। এটিও তোমার মনে হতে পারে, সব ক্ষেত্রেই যে এমন ঘটবে তা তো হতে পারে না। আমি কথাগুলো বলেছি পরিবারগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সময় ধরে কাউন্সেলিংয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে। মেয়েটির সঙ্গে তুমি সম্পর্ক করবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। তবে তুমি যেহেতু এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং মেয়েটিও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তোমাদের আরও সময় নিতে হবে। তোমাকেও বিয়ে করার আগে আরও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে মেয়েটিকেও তুমি উত্সাহ দাও যাতে সে পড়ালেখা বন্ধ না করে। অভিভাবকদেরও অনুরোধ কর তাকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে সহায়তা করতে। সে যদি যোগ্য হয়ে সমাজে একটি জায়গা করে নিতে পারে, তাহলে তার পারিবারিক অবস্থানের কারণে কেউ তাকে হেয় করতে পারবে না।

সমস্যা
আমি প্রায় দুই মাস ধরে একটি ছেলেকে পছন্দ করি। কিন্তু ভালো লাগার কথা ছেলেটিকে বলতে পারছি না। কারণ, ছেলেটির নাম, পরিচয় আমি জানি না। প্রতিদিন সকালে প্রাইভেট পড়তে যখন যাই, তখন ছেলেটির সঙ্গে দেখা হয়। ছেলেটি গম্ভীর ও নিঃসঙ্গ। আচার-আচরণ অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা। আমাকে দেখলে মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যায়। আমি পড়ালেখায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছি না। ছেলেটিকে আমার মনের কথা বলতে চাই। কিন্তু ও যে প্রকৃতির ছেলে, যদি সে আমাকে ফিরিয়ে দেয়?
মৃণ্ময়ী, কিশোরগঞ্জ।
পরামর্শ
তুমি খুব ভালো করে ভেবে দেখবে যে ছেলেটির প্রতি তোমার এই অনুভূতি কেন হচ্ছে। ওকে তো এখনো তুমি একেবারেই জানো না। প্রথমেই কিন্তু ভালোবাসার কথা বলার প্রয়োজন নেই। তুমি একই কোচিং ক্লাসের শিক্ষার্থী হিসেবে সৌজন্য রক্ষা করে প্রথমে ওর সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। যাকে তোমার ভালো লাগছে তাকে তুমি একটি ছেলে হিসেবে না দেখে শুধু সহপাঠী ও একটি মানুষ হিসেবে দেখো। তার সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানার চেষ্টা কর। ছেলেটি কি আসলেও নিঃসঙ্গ নাকি সে একা থাকতে ভালোবাসে, তা-ও বোঝার চেষ্টা করো। সে নিঃসঙ্গ বলেই তাকে তোমার সঙ্গ দিতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। এ কথাটি মাথায় রেখো কেমন? অনেক সময়ই শুধু বাইরের দেখা এবং কারও সঙ্গে কিছুটা কথা বলার পর আমাদের যদি মনে হয় যে মানুষটি বড় অসহায়, তখন আমরা না ভেবেচিন্তেই তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। পরিচিত হওয়ার পর তোমার যদি মনে হয় তুমি ওকে বলতে চাও যে তাকে তোমার অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে হয় এবং তার প্রতি তোমার একধরনের ভালো লাগা রয়েছে, তাহলে সেটি বলতে পারো। তবে বলার আগেই ছেলেটিরও যে ‘না’ বলার অধিকার রয়েছে সেটিও তোমার মাথায় থাকা চাই। যদি ছেলেটি না বলে সেটা মেনে নেওয়ার ক্ষমতাও তোমার থাকতে হবে।