
সারা দিন মেলায় ঘুরে ডুগডুগি, মাটির পুতুল—কত কিছুই না কেনা হলো। তবু মন ভরল না ছোট্ট মেয়েটির। কারণ, পয়লা বৈশাখে শাড়ি পরার যে বায়না ছিল, তা পূরণ হয়নি। ঝামেলা হবে বলে মা এড়িয়ে গেছেন। শাড়ি সামলানো ছোটদের জন্য একটু সমস্যাই বটে। তবে আজকাল বাজারে ছোটদের জন্য তৈরি (রেডিমেড) শাড়ি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। কুচি সেলাই করা এই শাড়িগুলো স্কার্টের মতো পরে নেওয়া যায়। সঙ্গে ব্লাউজও থাকে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, ছোটদের শাড়িতে লাল, সাদা, বেগুনি, সবুজ, নীল, কমলা, ম্যাজেন্টা রং প্রাধান্য পেয়েছে। বেশির ভাগ তাঁতের সুতি ও কোটা শাড়ির ওপর ব্লক প্রিন্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া গামছা প্রিন্টের শাড়িও আছে এবার।
কথা হলো অভিনেত্রী রুনা খানের সঙ্গে। ছয় বছরের মেয়ে রাজেশ্বরীকে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে শাড়ি পরান। এক বছর বয়স থেকেই নাকি মেয়েকে শাড়ি পরিয়ে আসছেন তিনি। মেয়েরও দারুণ শাড়ি পরার শখ। জানালেন, ‘ওকে সব সময় রেডিমেড শাড়ি পরানো হতো। তবে যেহেতু সে একটু বড় হয়েছে, তাই এবার সাধারণ শাড়িই পরাব। সাজ বলতে কপালে থাকবে শুধু একটা ছোট গোল টিপ আর হাতে রংবেরঙের কাচের চুড়ি।’

ছোটদের বাড়তি সাজের প্রয়োজন নেই। বরং সাজলে যেন শিশুর মুখের স্বাভাবিক মিষ্টতাটাই হারিয়ে যায়। এ জন্য বাচ্চার বয়সের সঙ্গে বেমানান কোনো সাজ না দেওয়াই ভালো। শাড়ির সঙ্গে কেউ যদি চায় তাহলে শখ করে পুঁতি, কাপড় ও সুতার তৈরি মালা, হাতের ব্রেসলেট বা চুড়ি পরাতে পারেন। পায়ে থাকতে পারে নূপুর। ধাতব গয়নায় বাচ্চাদের ব্যথা পাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আবার খুব ছোট বাচ্চা হলে কাচের চুড়ি পরানো ঠিক হবে না।
অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ বলেন, ‘বৈশাখে ছোটদের শাড়িতে লাল-সাদা দুটো রংই থাকবে। অঞ্জনসের ছোটদের শাড়িগুলো সুতি ও হাফ সিল্কে করা হয়েছে। নকশায় ফুলেল প্রিন্ট, ব্লক ও হালকা এমব্রয়ডারি থাকছে।’
ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জানালেন, কয়েক বছর ধরে বিশেষ উৎসবগুলোতে মা-মেয়ে মিলিয়ে শাড়ি পরার চল এসেছে। এবারও তেমনটা চলবে। বৈশাখে সাদা-লালের সমন্বয় ছাড়াও অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের উপস্থিতি দেখা যাবে। আজকাল প্রায় সব স্কুলেই বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়। স্কুল থেকে অনেক সময় শাড়ির রং ও নকশা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এমন হলে কাপড় কিনে শাড়ি বানিয়েও নিতে পারেন। ছোটদের শাড়ির জন্য ৫ থেকে ৬ হাত কাপড় হলেই চলবে।
এদিকে যাত্রার ডিজাইন দলের পক্ষ থেকে শ্রাবণী মহলদার জানালেন, এবার বাচ্চাদের শাড়ি নকশা করা হয়েছে একটু বড়দের ঢঙে। টাঙ্গাইল শাড়ি, হাতে বোনা তাঁত ও কোটা শাড়ি থাকছে এবার। ব্লাউজের নকশা ও কাটছাঁটে থাকছে বৈচিত্র্য। আরামের দিক বিবেচনায় রেখে হাতকাটা ও ঘটি হাতার ব্লাউজ পরাতে পারেন বাচ্চাদের। শ্রাবণী মহলদার নতুনত্ব আনার জন্য ছোটদের ব্লাউজে ঝুনঝুনি, ঘণ্টা, কড়ি ও রুদ্রাক্ষ দিয়ে নকশা করার পরামর্শ দেন। ব্লক বা বাটিকের ব্লাউজেও ভালো দেখাবে।
ছোটদের এসব শাড়ি পাবেন আড়ং, যাত্রা, শৈশব ও দেশী দশে। দাম পড়বে ৮০০-২০০০ টাকা। এ ছাড়া অনেক শাড়ির দোকানেই ছোটদের লাল-সাদা শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের রঙিন তাঁতের শাড়ির দাম ২৫০-৮০০ টাকা আর ছোটদের জামদানি শাড়ি পাওয়া যাবে ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।