ছোট স্বপ্ন, বড় আয়োজন

করোনাকালে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ছোট স্বপ্নসংগৃহীত

আগস্টের শুরুতে হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত হন রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পার্থ কুমার নন্দ। ষষ্ঠ সেমিস্টারের এই শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবার বেশ দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল। একসময় করোনা জয় করলেও একধরনের ভয় আর মানসিক অবসাদ তাঁর পিছু ছাড়ছিল না। তখন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ছোট্ট স্বপ্ন’ আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল গল্প পাঠের আসরের খবর পান তিনি।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর গল্প পাঠের আয়োজন করেছিল সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মহিউদ্দিন। আলোচনার বিষয়গুলো ঘিরে অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা। কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই কুইজে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন পার্থ। পুরস্কার হিসেবে পান নতুন বই। এই এক অনুষ্ঠান আর পুরস্কারপ্রাপ্তিই মন ভালো করে দেয় পার্থর।

মহামারির কঠিন এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙা রাখতে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ‘ছোট স্বপ্ন’। এ ছাড়া করোনাকালে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের অর্থায়নে চাল, ডাল, তেল, সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা ও খাবার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। দুই ঈদ ছাড়াও তাঁরা কয়েক দফায় রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন।

সংগঠনটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার জানালেন, তাঁদের সংগঠনের সদস্যসংখ্যা প্রায় ৪০০। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও প্রত্যেকেই নিজেদের অবস্থান থেকে সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। নেপথ্যে থেকে শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগগুলো নিয়মিত দেখভাল করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা। সংগঠনের মডারেটরের দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন ইসলাম। তিনি বলেন, এই সংগঠনের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে একটু হলেও আলাদা। তাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করছেন। আবার নিজেদের ভেতরের মূল্যবোধকেও জাগ্রত করছেন।

এত কিছুর পরও ছোট্ট স্বপ্নের সদস্যদের মন খারাপ। করোনার কারণে থেমে আছে তাঁদের নিয়মিত একটি কার্যক্রম। সাবিহা বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আমরা সপ্তাহে ছয় দিন রানীনগরের ঘোড়ামারায় পদ্মার পাড়ের একটি বস্তিতে পড়াতে যাই। সেখানকার প্রায় ৫০-৬০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু আমাদের কাছে বিনা বেতনে পড়াশোনা করে। কিন্তু করোনার জন্য সেটি এখন বন্ধ।’ করোনায় বস্তির শিশুদের পড়াশোনায় দীর্ঘ বিরতি ভীষণ ভাবাচ্ছে ছোট্ট স্বপ্নের সদস্যদের। বিকল্প উপায়ে কীভাবে তাদের পড়াশোনা আবার চালু করা যায়, তা নিয়েই এখন ভাবছেন তাঁরা।