নিজের জমি অথচ জমিতে আপনি বসবাস করছেন না। এই সুযোগে আপনার মালিকানাধীন জমি অন্য কেউ এসে নিজের বলে দাবি করছেন কিংবা গায়ের জোরে দখল করে নিতে চাইছেন, কিছু অংশ তো দখলই করে নিয়েছে। এখন কী করবেন আপনি? জমির দখলকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা অহরহই ঘটে। জমির দখল নিয়ে মামলা মোকদ্দমাও প্রচুর আমাদের দেশে। কিন্তু জমি দখলকেন্দ্রিক বিবাদগুলো নিষ্পত্তি কীভাবে করতে হয়, তা জানা নেই অনেক সাধারণ লোকের। ফলে নিজের জায়গাটুকু বেদখল হয়ে যায়। জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ায় ঘটনাও ঘটে। এই বেদখল ঠেকাতে এবং জমি ফিরে পেতে শক্তিশালী আইন রয়েছে।
কী প্রতিকার?
জমি দখলকে কেন্দ্র করে যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং এতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় পক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার নির্ণয় করবেন। প্রয়োজনে পুলিশকে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন এবং তিনি এর ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে পক্ষের দখল যথার্থ বলে মনে হবে বা তিনি সেই পক্ষকে দখলকারী বলে সাব্যস্ত করবেন এবং তিনি আইনানুগভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত আইনানুগ দখলকার বলে গণ্য হবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা
মালিকানা দাবি করা যাবে না। স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।
জমি থেকে অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে ওই জমিতে তাঁর স্বত্ব বা মালিকানা আছে বলে প্রমাণ দিতে হয়; নইলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। অর্থাৎ এই ধারায় প্রতিকার চাইতে হলে জমির স্বত্বসহ দখল ফিরে পাওয়ার দাবি করতে হবে।
৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে গেলে বাদী শুধু দখলচ্যুত হয়েছেন—এ মর্মে প্রতিকার চাইতে পারেন, স্বত্ব বা মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। ৯ ধারার ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো: বাদী জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না, বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না, বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না। তবে ৯ ধারার প্রতিকারের ক্ষেত্রে তামাদি আইন অনুযায়ী, বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার তাঁকে হারাতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে ৯ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এসব প্রতিকারের ক্ষেত্রে জমির মূল্যমানের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে এবং মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। ৯ ধারায় মোকদ্দমার ক্ষেত্রে মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফির (এডভেলোরেম) অর্ধেক জমা দিতে হয়।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট